আগামী রমজানের পূর্বেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সংস্কারকার্য আগাইয়া লইতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে যেই নির্দেশ দিয়াছেন, তাহাকে আমরা স্বাগত জানাই। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সরকারপ্রধান এই নির্দেশ প্রদান করেন। গত শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত ড.
আমরা জানি, বিএনপিসহ দেশের সিংহভাগ দল গত কয়েক মাস ধরিয়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাইয়া আসিতেছিল। গত ৩ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহিত রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় ধাপের প্রথম বৈঠকেও দলগুলি সেই দাবি পুনর্ব্যক্ত করে। কিন্তু ঈদুল আজহার প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণা সম্পর্কে বিশেষত বিএনপি ও তাহার সমমনা দলগুলি অসম্মতি ব্যক্ত করে। শুধু উহাই নহে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের নির্বাচনের সময়-সংক্রান্ত সর্বশেষ দাবির সহিত প্রধান উপদেষ্টার উক্ত ঘোষণা মিলিয়া যাইবার বিষয়ও বিএনপিসহ কোনো কোনো দল উল্লেখ করে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির প্রধান উপদেষ্টার উক্ত ঘোষণাকে সমর্থন প্রদানও জন্ম দিয়াছিল নানামুখী আলোচনার। বিএনপি নেতৃবৃন্দ এইরূপ হুঁশিয়ারিও প্রদান করেন, নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত পথনকশা না পাইলে সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখিবার বিষয়ে দলটি ভিন্ন চিন্তা করিতে পারে। এমনই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরকালে তাঁহার সহিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়– ২০২৬ সালের রমজানের পূর্বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।
ইহা সত্য, প্রায় সকল দল উক্ত লন্ডন ঘোষণাকে স্বাগত জানাইলেও উহা সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিক্রিয়ায় বেশ নেতিবাচক বিষয় দৃষ্ট। তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত উহাদের পৃথক বিবৃতিতে ইহা স্পষ্ট, তাহাদের অসন্তোষের কারণ যতটা নির্বাচনের সময় নির্ধারণে কেবল বিএনপির সহিত সরকারপ্রধানের বৈঠক ঘিরিয়া, ততটা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত নহে। জামায়াত নেতারা বরং মনে করাইয়া দিয়াছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে তাহারাই সর্বপ্রথম অভিমত দিয়াছিলেন।
আমরা মনে করি, লন্ডন বৈঠক লইয়া উক্ত দুই দলের মধ্যে যতটুকু মান-অভিমান সৃষ্টি হইয়াছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তাহা দূর করা সম্ভব। সংস্কারের বিষয় ও প্রক্রিয়া লইয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সহিত অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো মতভেদ থাকিলে উহাও একই প্রক্রিয়ায় সমাধান করিতে হইবে। তবে এই আলোচনার নামে কোনোভাবেই নির্বাচনকে আর বিলম্বিত করা যাইবে না। আগামী রমজানের পূর্বে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হইতে হইবে।
অস্বীকার করা যাইবে না, বিগত ১০ মাসে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদ্রূপ শান্ত হয় নাই, তদ্রূপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও দৃশ্যমান উন্নতি ঘটে নাই। বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মব সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত। ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতেও সুখবর বিরল। দেশি-বিদেশি সকল পর্যবেক্ষকেরই অভিমত, অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়া গঠিত সরকারই কেবল দেশকে এই হতাশাজনক পরিস্থিতি হইতে টানিয়া তুলিতে পারে। তাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানেই সরকারসহ সকলের মনোযোগ নিবদ্ধ হউক। শুভস্য শীঘ্রম!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক পর স থ ত র সহ ত প রথম সরক র ব এনপ হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’
‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’
উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’
আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।
আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।