Samakal:
2025-11-03@02:13:21 GMT

শুভস্য শীঘ্রম

Published: 17th, June 2025 GMT

শুভস্য শীঘ্রম

আগামী রমজানের পূর্বেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সংস্কারকার্য আগাইয়া লইতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে যেই নির্দেশ দিয়াছেন, তাহাকে আমরা স্বাগত জানাই। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সরকারপ্রধান এই নির্দেশ প্রদান করেন। গত শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত ড.

মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকে আগামী নির্বাচনের দিনক্ষণ লইয়া উভয়ের মধ্যে ঐকমত্য হইয়াছে বলিয়া উক্ত বৈঠক-পরবর্তী যৌথ বিবৃতিতে যাহা বলা হইয়াছিল, প্রধান উপদেষ্টার সোমবারের নির্দেশনা উহাকেই জোরালো ভিত্তি দিল। নির্বাচনের সময় লইয়া ইতোপূর্বে বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ দল এবং জনপরিসরে যেই সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি হইয়াছিল, এই ঘটনার পর তাহার বিলক্ষণ অবসান ঘটিবে। 

আমরা জানি, বিএনপিসহ দেশের সিংহভাগ দল গত কয়েক মাস ধরিয়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাইয়া আসিতেছিল। গত ৩ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহিত রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় ধাপের প্রথম বৈঠকেও দলগুলি সেই দাবি  পুনর্ব্যক্ত করে। কিন্তু ঈদুল আজহার প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণা সম্পর্কে বিশেষত বিএনপি ও তাহার সমমনা দলগুলি অসম্মতি ব্যক্ত করে। শুধু উহাই নহে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের নির্বাচনের সময়-সংক্রান্ত সর্বশেষ দাবির সহিত প্রধান উপদেষ্টার উক্ত ঘোষণা মিলিয়া যাইবার বিষয়ও বিএনপিসহ কোনো কোনো দল উল্লেখ করে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির প্রধান উপদেষ্টার উক্ত ঘোষণাকে সমর্থন প্রদানও জন্ম দিয়াছিল নানামুখী আলোচনার। বিএনপি নেতৃবৃন্দ এইরূপ হুঁশিয়ারিও প্রদান করেন, নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত পথনকশা না পাইলে সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখিবার বিষয়ে দলটি ভিন্ন চিন্তা করিতে পারে। এমনই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরকালে তাঁহার সহিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়– ২০২৬ সালের রমজানের পূর্বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

ইহা সত্য, প্রায় সকল দল উক্ত লন্ডন ঘোষণাকে স্বাগত জানাইলেও উহা সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিক্রিয়ায় বেশ নেতিবাচক বিষয় দৃষ্ট। তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত উহাদের পৃথক বিবৃতিতে ইহা স্পষ্ট, তাহাদের অসন্তোষের কারণ যতটা নির্বাচনের সময় নির্ধারণে কেবল বিএনপির সহিত সরকারপ্রধানের বৈঠক ঘিরিয়া, ততটা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত নহে। জামায়াত নেতারা বরং মনে করাইয়া দিয়াছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে তাহারাই সর্বপ্রথম অভিমত দিয়াছিলেন। 
আমরা মনে করি, লন্ডন বৈঠক লইয়া উক্ত দুই দলের মধ্যে যতটুকু মান-অভিমান সৃষ্টি হইয়াছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তাহা দূর করা সম্ভব। সংস্কারের বিষয় ও প্রক্রিয়া লইয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সহিত অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো মতভেদ থাকিলে উহাও একই প্রক্রিয়ায় সমাধান করিতে হইবে। তবে এই আলোচনার নামে কোনোভাবেই নির্বাচনকে আর বিলম্বিত করা যাইবে না। আগামী রমজানের পূর্বে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হইতে হইবে। 

অস্বীকার করা যাইবে না, বিগত ১০ মাসে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদ্রূপ শান্ত হয় নাই, তদ্রূপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও দৃশ্যমান উন্নতি ঘটে নাই। বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মব সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত। ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতেও সুখবর বিরল। দেশি-বিদেশি সকল পর্যবেক্ষকেরই অভিমত, অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়া গঠিত সরকারই কেবল দেশকে এই হতাশাজনক পরিস্থিতি হইতে টানিয়া তুলিতে পারে। তাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানেই সরকারসহ সকলের মনোযোগ নিবদ্ধ হউক। শুভস্য শীঘ্রম!

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক পর স থ ত র সহ ত প রথম সরক র ব এনপ হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা

সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”

“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”

“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি। 

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”

এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”

‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল
  • অধ্যাপক আলী রীয়াজের নতুন বই প্রকাশিত
  • সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক, কতটা যৌক্তিক