বাবার বিরুদ্ধে ছেলের মাদক সেবনের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছয় মাসের কারাদণ্ড
Published: 18th, June 2025 GMT
দিনাজপুরের বিরামপুরে মাদক সেবনের অভিযোগে জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ছেলের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিরামপুর পৌর শহরের পূর্বপাড়া মহল্লায় অভিযান চালিয়ে এই সাজা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জসিম উদ্দিন পৌর শহরের পূর্বপাড়া মহল্লার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। তাঁর ছেলে এহসানুল হক ওরফে সোহান গত রোববার ইউএনও নুজহাত তাসনীমের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি তাঁর বাবার বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ করেন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান।
ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও নুজহাত তাসনীম থানা–পুলিশের সহযোগিতায় গতকাল বিকেলে বিরামপুর পৌর শহরের পূর্বপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। ওই এলাকার একটি চারমাথা মোড় থেকে জসিম উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ। তাঁর দেহ তল্লাশি করে নেশাজাতীয় দুটি ট্যাপেন্টাডল বড়ি ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ সময় সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুজহাত তাসনীম।
লিখিত অভিযোগ ও অভিযোগকারী এহসানুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর মা–বাবা গাজীপুরের চান্দুরা এলাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। এহসানুল বিরামপুরে একটি মসজিদে ইমামতি করেন। এ ছাড়া তিনি বিরামপুর পৌর শহরের একটি আবাসিক হোটেলে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এহসানুল হক তাঁর ছোট ভাই জোবায়দুর রহমানকে নিয়ে পৌর শহরের পূর্বপাড়ায় নানির বাড়িতে থাকেন। আড়াই বছর আগে তাঁর বাবা জসিম উদ্দিন গাজীপুরে চান্দুরায় অবস্থানকালে তাঁর এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে মিশে মাদক সেবন শুরু করেন। মাদক সেবনের জন্য টাকা না দিলে মা শম্পা বেগমকে প্রায়ই মারধর করতেন। এ ছাড়া বাড়ির জিনিসপত্র গোপনে বিক্রি করে মাদকদ্রব্য কিনতেন। গত ঈদুল আজহার আগের রাতে চান্দুরা থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসার পথে চান্দুরা এলাকায় রাস্তায় মাদক সেবনের জেরে মা ও বাবার মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁর মা–বাবাকে মারধর করেন। তাঁর বাবা জসিম উদ্দিন ঈদের পরদিন বিরামপুরে বাড়িতে আসেন।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মাদক সেবনের অভিযোগে গতকাল বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। গতকালই তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছয় ম স র এহস ন ল গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী