শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের সদ্যঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিল চেয়ে সংগঠনটির একাংশের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। এ নিয়ে তারা টানা ১৫ দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেন। গতকাল বুধবার দুপুরে সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের চৌরঙ্গি এলাকায় ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে বসে পড়েন। এতে দুই পাশে চার কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন হাজারো মানুষ।

জানা গেছে, ৩ জুন শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদলের ৩৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে এইচ.

এম জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও সোহেল তালুকদারকে সদস্য সচিব করা হয়। 

এর প্রতিবাদে সেদিন থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, সদ্যঘোষিত কমিটিতে ত্যাগী ও মাঠ পর্যায়ের নেতারা বাদ পড়েছেন। পদ পেয়েছেন বিবাহিত, সন্তানের বাবা, অছাত্র, বহিরাগত ও কেন্দ্রঘেঁষা লোকেরা। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা আগেও আন্দোলন করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপের ঘোষণা না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে আবারও আন্দোলনে নামেন।

বিক্ষোভকারী পক্ষের নেতৃত্বে আছেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, কমিটির আহ্বায়ক এইচএম জাকির আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে গঠিত বাসমালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। তাঁর এক ভাই শ্রমিক লীগের নেতা, আরেক ভাই যুবলীগের নেতা, ভাতিজা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। ওই কমিটিতে বিদ্যুৎমিস্ত্রি, জজকোর্টের আইনজীবীর সহকারী ও অছাত্রদের রাখা হয়েছে। এমন কমিটি তারা মানেন না। কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বুধবারের বিক্ষোভে দুর্ভোগে পড়েন শরীয়তপুর সদরের শৌলপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ইলিয়াস মৃধা। তিনি বলেন, নানি শ্বাসকষ্টের রোগী। তাঁকে দ্রুত অক্সিজেন দেওয়ার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় অবরোধ থাকায় আধা ঘণ্টা ধরে ইজিবাইকে বসে ছিলেন। এখান থেকে হাসপাতাল মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা। শ্বাসকষ্টের রোগী নানিকে নিয়ে হেঁটেও যেতে পারছিলেন না।

এক অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, একজন রোগীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নিতে হবে। পার্কিং থেকে সদর হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। ৪০ মিনিট ধরে যানজটে পড়ে ছিলেন। 

জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক এসএম জকির বলেন, ‘কমিটি গঠনের পর একটি পক্ষ বিরোধিতা করে আসছে। তাদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেছিলাম। তারা না শুনে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়– এমন বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছেন।’ 

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসির উদ্দিন কালুর ভাষ্য, ‘ছাত্রদল এখন আমাদের কথা শোনে না। তারা কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণে চলে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে আহ্বান জানাব, দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের।’ ছাত্রদলের নামে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। 

পালং মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবির হোসেন বলেন, ছাত্রদলের একটি কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর তারা যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। এ সময় পথচারীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ