হলুদের সাপ্লিমেন্ট খেলে কি লিভারের ক্ষতি হয়
Published: 19th, June 2025 GMT
হলুদে থাকে কারকিউমিন। হলুদের যত গুণাগুণ, সবই এই কারকিউমিনের জন্য। কারকিউমিন একটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান। অর্থাৎ দেহের ভেতরে ও ত্বকে বয়সজনিত যেসব পরিবর্তন হয়, তার গতিকে ধীর করতে সক্ষম এই উপাদান। তা ছাড়া প্রদাহ কমাতেও হলুদ কার্যকর। এসব উপকার পেতে রান্নায় ব্যবহৃত হলুদের পাশাপাশি রোজ হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাও উচিত কি না, সে সম্পর্কে জানালেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.
মো. মতলেবুর রহমান।
স্বল্প মাত্রায় হলুদ উপকারী। তবে বেশি মাত্রায় গ্রহণ করা হলে অবশ্য তা কিছু ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একজন ব্যক্তি তাঁর প্রতি কেজি ওজনের জন্য রোজ ৩ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হলুদ গ্রহণ করতে পারেন। যেমন ৫০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দেড় শ মিলিগ্রাম হলুদ গ্রহণ করতে পারবেন।
হলুদের সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সাধারণত ছোটখাটো সমস্যাই দেখা দেয়। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একটু জটিল হয়ে দাঁড়াতে পারে। হলুদ বা হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সময় ওজন ছাড়া আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
আরও পড়ুনদুধ বা পানিতে হলুদ মিশিয়ে খেলে কি সত্যিই সৌন্দর্য বাড়ে২০ জানুয়ারি ২০২৫যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায়ই দেখা দেয়অতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ করা হলে বমিভাব, বমি, ক্ষুধামান্দ্য, পেটে অস্বস্তি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। মাথাব্যথাও হয় কারও কারও। হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে এসব সাধারণ উপসর্গকে অবহেলা করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লিভার বা কিডনিরও ক্ষতি হতে পারেঅতিরিক্ত মাত্রায় হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা হলে লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এ রকম হলে ক্ষুধামান্দ্য ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। চোখ, ত্বক ও প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায়। লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যার কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে মাত্রাতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট। বেশি পরিমাণে হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। বুঝতেই পারছেন, প্রাকৃতিক উপাদান হলেও হলুদ সব সময় সবার জন্য নিরাপদ নয়।
রক্তের সুগার কমে যেতে পারেঅতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ করলে রক্তের সুগার কমে যেতে পারে। এর কারণে বুক ধড়ফড় করা, ঘাম হওয়া ও শরীর কাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে জ্ঞানও হারাতে পারেন।
আরও পড়ুনভুল সময়ে সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক খাবার খাচ্ছেন না তো?০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪স্বল্প মাত্রায়ও বিপজ্জনক হতে পারে যখনযাঁদের আয়রনের ঘাটতি থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ঘাটতি আরও বাড়তে পারে হলুদের সাপ্লিমেন্টের কারণে। এভাবে বাড়ে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি।
বয়স্ক ব্যক্তি কিংবা যাঁর কোনো ওষুধ চলছে, তিনি যদি হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে চান, তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, কিছু ওষুধের সঙ্গে হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন অ্যাসপিরিন–জাতীয় ওষুধ সেবন করার পাশাপাশি হলুদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।
পিত্তথলির কোনো রোগ থাকলে হলুদের সাপ্লিমেন্টের কারণে সেই রোগের উপসর্গগুলো প্রকট হয়ে উঠতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা ও সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান, এমন নারীর জন্য হলুদের সাপ্লিমেন্ট নিরাপদ নয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অল্প মাত্রার হলুদেই রক্তের সুগার কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শেষ কথাবুঝতেই পারছেন, সাপ্লিমেন্ট হিসেবে হলুদ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন। রান্নায় ব্যবহৃত হলুদই আপনার সুস্থতার জন্য যথেষ্ট। একটু বেশি উপকার পেতে চাইলে আপনি সামান্য কাঁচা হলুদ দিয়ে এক গ্লাস পানীয় তৈরি করে খেতে পারেন কোনো কোনো দিন। নিতান্তই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হলে সেটিও একটানা দীর্ঘদিন গ্রহণ করা উচিত নয়। তা ছাড়া সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করা যেকোনো হলুদই খাঁটি কি না, তা–ও বলা মুশকিল।
আরও পড়ুনএই ৫ সাপ্লিমেন্ট অহেতুক খেয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো? ২৭ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ রহণ করত গ রহণ করল র জন য ত হল দ
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে