বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা। পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করতে যান নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার গৃহিণী সানজিদা আক্তার। দেখেন, চুলায় আগুন জ্বলছে না। পরে হোটেল থেকে সকালের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। দুপুরেও খেতে হয় হোটেল থেকে। হোটেলও খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইন। একই অবস্থা চলছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। আকস্মিক গ্যাস সংকটের কারণে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক উভয় খাতের গ্রাহকেরা।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলেছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ভাসমান টার্মিনালে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাহাজ থেকে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল আজম খান বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকায় মহেশখালীতে এলএনজিবাহী জাহাজ থেকে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে প্রতিদিন ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট পেতাম, সেটা এখন ১৬০-১৭০-এ নেমে এসেছে। এজন্য সংকট হচ্ছে। আশা করছি, শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) হিসাব মতে, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গত ১৫ জুন সকাল আটটা থেকে ১৬ জুন সকাল আটটা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ হয়েছে ২৪২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা ছিল ১৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় মাত্র ৩০ দশমিক ৬ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে- রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট, শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বাড়বকুন্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এছাড়া সরকারি বেসরকারি দুটি সার কারখানার চাহিদা ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৪৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪১ দশমিক মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে সরকারি চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)।
গত বুধবার দুপুর থেকে নগরীর শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখন আবাসিক এলাকায় গ্যাসের চাপ কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর কিছু এলাকায় বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক বাসা-বাড়ির সংযোগে গ্যাসের চাপ কমে যায়। রাত ১২টার পর সীমিত আকারে সরবরাহ শুরু হলেও ভোর হওয়ার আগেই আবার বন্ধ হয়ে গেছে। জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার গৃহিণী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি গ্যাস নেই। দুপুরেও রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছি।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এখনই নয়: অর্থ উপদেষ্টা
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে আরও অপেক্ষা করা হবে, এখন মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে না—এমন কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধটা আপাতত পর্যবেক্ষণ করছি। যুদ্ধটা বেশি দিন চললে আমাদের ওপর একটা প্রভাব পড়বে।’
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এটা ছিল অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যেসব ক্রয় আদেশ (অর্ডার) করা হয়েছে, সেগুলোতে কোনো প্রভাব পড়েনি। সব পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আজ যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা পুরোনো দামেই। ভাগ্য ভালো যে এটা আগের দামেই পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে হয়তো কিছুটা প্রভাব পড়বে।
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিকল্প চিন্তা কী—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিকল্প চিন্তা অবশ্যই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় করছে। কারণ, যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি সার, জাহাজ চলাচলেও প্রভাব পড়তে পারে। হরমুজ প্রণালি দিয়ে যে জাহাজ আসে, তাতে প্রভাব পড়তে পারে। তবে মনে হয় যুদ্ধটা বেশি দিন চলবে না।
এদিকে ক্রয় কমিটিতে যুক্তরাজ্যের কোম্পানি টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে। একটি কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ)। এতে মোট ব্যয় হবে ৬২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউর দাম পড়ছে ১৫ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার।
বৈঠকে একটি প্রকল্পের পূর্ত কাজের প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। এটি হলো ‘২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টসমূহের জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্প।
এ ছাড়া বৈঠকে ১৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রতি টনের দাম পড়ছে ৩৮৩ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার। মোট ব্যয় ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ ডলার।
‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের আওতায় ড্রেন, গেট, গার্ড শেড ও অন্যান্য নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদিত হয় বৈঠকে। ১১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এ কাজ পেয়েছে যৌথভাবে বিডিই লিমিটেড এবং কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ।