Samakal:
2025-09-17@21:23:42 GMT

অন্ধকারের হয়নি অবসান

Published: 3rd, July 2025 GMT

অন্ধকারের হয়নি অবসান

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিবর্ণ চিত্র লইয়া বরাবরই আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া আসিতেছি। দুঃখজনক হইলেও সত্য, উহা যেন অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত; পরিস্থিতির প্রত্যাশিত পরিবর্তন হয় না বলিলেই চলে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যানে প্রতিভাত– চলতি বৎসরের জানুয়ারি হইতে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সমগ্র দেশে বিভিন্নভাবে দেড় সহস্রাধিক নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হইয়াছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্ষণের শিকার। সংবাদমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করিয়া সংস্থাটি এই তথ্য প্রকাশ করিয়াছে, যাহার অর্থ প্রকৃত নির্যাতনের চিত্র নিশ্চয় আরও অধিক হইবে। এহেন নারী নির্যাতনকে আর চলিতে দেওয়া যায় না। ইহাকে শূন্যে অবনমনই প্রত্যাশিত।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাহা মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে উঠিয়া আসিয়াছে; নারী ও কন্যা নিপীড়নের এই পরিস্থিতিতেও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেহ প্রতিক্রিয়া দেন নাই। নির্যাতনের বাড়বাড়ন্ত পরিস্থিতিতেও কীভাবে তাহারা নীরব রহিয়াছেন? আমরা দেখিয়াছি, মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ মামলায় অত্যন্ত দ্রুততায় বিচার হইয়াছে বটে, কিন্তু যথাযথ তদন্ত না হইবার কারণে পরিবার সন্তুষ্ট হইতে পারে নাই। আমরা ইহাও দেখিয়াছি, দেশে ধারাবাহিক ধর্ষণের ঘটনায় মার্চ মাসে দেশব্যাপী যখন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলিতেছিল তখন অন্তর্বর্তী সরকার ধর্ষণ মামলার বিচারকার্য দ্রুত নিষ্পন্নকরণে বিদ্যমান আইনে পরিবর্তন আনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিচারকার্য বিলম্বিত না করা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা মনে করি, এই প্রকার বিচারে দ্রুততার সহিত নির্ভুলতাও জরুরি। এমনকি আলোচ্য পরিসংখ্যানে উঠিয়া আসিয়াছে, উত্ত্যক্তের শিকার দুইজন আত্মহত্যা করিয়াছেন। অগ্নিদগ্ধ ও এসিডদগ্ধের বীভৎসতা এখনও বিদ্যমান। এমনকি যৌতুকের কারণে এখনও নারীগণ নির্যাতিত হইতেছেন। পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হইতেছেন নারীরা এবং বহুল বিস্তৃত আন্তর্জালে সাইবার অপরাধ হইতেও নারীর যেন নিষ্কৃতি নাই। নিপীড়নের এই সকল ধরনই বলিয়া দিতেছে, সমাজে এখনও কতটা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা প্রকট। কীভাবে নারী প্রায় সর্বত্রই অনিরাপদ। 

আমরা জানি, দেশের নারীগণ সমাজের বহু যুগের বন্ধ অর্গল ভাঙিয়া অগ্রগামী। নারী নির্যাতন তাহাদের এই অগ্রগামিতাকে ভয়ানকভাবে রুদ্ধ করিতেছে। আমরা চাই, নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ করিয়া উহাদের অগ্রসর হইবার পথ উন্মুক্ত করা হইবে। স্মরণে রাখিতে হইবে, দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী এবং তাহাদের পশ্চাতে রাখিলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হইতে বাধ্য। নারী যাহাতে পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তিরূপে ভূমিকা রাখিতে পারে, তজ্জন্য তাহাদের দমন-নিপীড়নমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করিতে হইবে। 

বলা বাহুল্য, নারী নির্যাতন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জরুরি। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে যাহারা দায়িত্ব পালন করেন তাহাদের নারীর প্রতি সংবেদনশীল হওয়া আবশ্যক। ধর্ষণসহ সকল নির্যাতনের ঘটনায় বিদ্যমান কঠোর আইন তাহাদের সদিচ্ছাতেই বাস্তবায়ন সম্ভব। সমাজের জাগরণও এই ক্ষেত্রে জরুরি।

ইহা নিপীড়কদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়া থাকে। স্বীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিপীড়নের শিকার হইলে সঙ্গে সঙ্গে যাহাতে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিতে পারে, তজ্জন্য সচেতনতাও জরুরি। সেই ক্ষেত্রে নারীর শিক্ষা নিশ্চিত করিতেই হইবে। সম্প্রতি বাল্যবিবাহের কারণে বিদ্যালয় হইতে নারী শিক্ষার্থীর ঝরিয়া পড়িবার যেই চিত্র দেখা গিয়াছে, উহা গ্রহণযোগ্য নহে। এই বিষয়েও কর্তৃপক্ষের নজরদারি জরুরি।

সাইবার অপরাধ নারী নির্যাতনের নূতন যেই ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত, সেইখানেও সামাজিক মাধ্যমসহ আন্তর্জাল ব্যবস্থাপনায় তাহাদের সতর্ক হইতে হইবে। সর্বোপরি আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহি নিশ্চিত করিলে নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করিতে পারে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত