Samakal:
2025-09-17@22:28:16 GMT

উচ্চশিক্ষার সংকট ও সংস্কার  

Published: 3rd, July 2025 GMT

উচ্চশিক্ষার সংকট ও সংস্কার  

স্নাতক শেষের পর আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইউরোপের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেটা সায়েন্সে মাস্টার্স করতে যায়। বিষয় হিসেবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে ডেটা সায়েন্স তখনও এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তার ওপর পরিবার ও পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে বিদেশে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া, সব মিলিয়ে বন্ধুদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের দ্বিধা ও সংশয় ছিল।

কিন্তু আমার ওই বন্ধু বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে আসার পর বোঝা গেল, এ সিদ্ধান্ত তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এসেই সে দেশের শীর্ষস্থানীয় এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে বেশ ভালো পদে যোগদান করে। উদ্ভাবনী বিষয়ে অধ্যয়নের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় এক সংস্কৃতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অভিজ্ঞতার ফলে তার ক্রিটিক্যাল অ্যানালিসিস থেকে শুরু করে বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজা ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতার বিকাশ ঘটে, যা তার ক্যারিয়ার দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা প্রসঙ্গে ওপরের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা যেভাবে উদ্ভাবন, গবেষণা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলে, বাংলাদেশের প্রচলিত উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা এখনও সেভাবে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে তুলতে পারছে না। যে কারণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে পড়ছে আমাদের শিক্ষার্থীরা।

উচ্চশিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়।

এই পিছিয়ে পড়ার কারণও বহুমাত্রিক। প্রথমত, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশে বরাবরই অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় বাজেটের অনুপাত যেখানে কমে এসেছে, সেখানে অন্যান্য দেশ মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করে এগিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, যোগ্য শিক্ষকের অভাব। তৃতীয়ত, ব্যবসা, শিল্প ও শিক্ষা খাতের মধ্যে ব্যবধান। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা ও ব্যবসা, শিল্প খাতের মধ্যে ব্যবধান হ্রাসে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইনোভেশন হাব, রিসার্চ ল্যাব ও স্টার্টআপ ইনকিউবেটর তৈরি করছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের বাস্তবসম্মত সমাধান নিয়ে এখনও বিস্তৃত পরিসরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। চতুর্থত, আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এখনও বিশ্লেষণধর্মী বা অনুশীলনমূলক নয়। 

আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এখন সময়ের দাবি। যত দ্রুত সম্ভব এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশেষায়িত ও ভবিষ্যৎ চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। ক্যাম্পাসগুলোকে গবেষণা কেন্দ্রে রূপান্তর করতে হবে। মাইক্রো-ক্রেডেনশিয়াল ও স্বল্পমেয়াদি কোর্স উচ্চশিক্ষার কারিকুলামের অংশ করতে হবে। ভার্চুয়াল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালুর পাশাপাশি অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ধারণার সঙ্গে পরিচিত এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কার্যকরী উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক বিশেষায়িত শিক্ষা প্রদান, তাদের অগ্রগতি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী সমাধান দেওয়া সম্ভব হবে, যা ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষা, ক্যারিয়ার এবং অর্থনৈতিক চাপ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। তাই শিক্ষার্থীদের সঠিক বিকাশে কাউন্সেলিং, পিয়ার সাপোর্ট প্রোগ্রাম এবং ওয়েলনেস ইনিশিয়েটিভ চালু করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নলেজ ট্রান্সফারের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়; পরিবর্তন বা উদ্ভাবনের ওপর নয়। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়েও আমরা অনেক পিছিয়ে। যদি আমরা সত্যিকার অর্থেই এ অবস্থার পরিবর্তন চাই; উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন: ডিন অব একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স, ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশ (ইউসিবিডি)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য ব যবস থ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত