ভোলায় মহিলা দলের নেত্রীকে পিটিয়ে ছবি প্রকাশের দায়ে বিএনপি নেতা বহিষ্কার
Published: 5th, July 2025 GMT
ভিজিএফের চাল বণ্টন নিয়ে বিরোধ ও ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতিকে পিটিয়ে দলীয় পদ হারালেন ভোলার তজুমদ্দিনের চাচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হাওরাদার। ইব্রাহিম হাওলাদার ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মহিলা দল নেত্রীকে মারধরের পর তার আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ো দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইব্রাহিম হাওলাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দলের নীতি আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী। সুতরাং এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ইব্রাহিম হাওলাদারকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বরাদ্দ ভিজিএফের বেশ কিছু স্লিপ ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তার কাছে দাবি করেন ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতি মালেকা বেগম। তার চাহিদার বিপরীতে স্লিপ কম দেওয়ায় ইউপি কর্মকর্তার সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জেরে গত ৩ জুন ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পনে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হাওলাদারের বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ সমর্থক মালেকা বেগমকে বেধড়ক মারধর করে সেসব ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা না হওয়ায় মহিলা দলের ওই নেত্রী বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জানান। তার প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় একমাস পর অভিযুক্তকে বহিষ্কার করা হলো।
ওই বিএনপি নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেন তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওমর আসাদ রিন্টু। তিনি বলেন, মালেকা বেগম চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির মহিলা দলের সভাপতি। ঘটনার দিন তিনি আমাকে ফোনে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কক্ষে তালা দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তার প্রতিপক্ষের লোকজন তার ওপর হামলা চালায়, এতে তিনি আহত হন। পরবর্তীতে তিনি আর কিছু জানাননি। ওই ঘটনার পর আজ ইব্রাহিম হাওলাদারকে সেন্ট্রাল থেকে বহিষ্কার করেছে।
এ বিষয়ে জানতে ইব্রাহিম হাওলাদারের মুঠোফোনে কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।