রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে কোন কোন ক্ষেত্রে ঐকমত্য-মতানৈক্য, জানাল বিএনপি
Published: 6th, July 2025 GMT
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপি কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে দলটি।
বিএনপির মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা যেমন অনেক তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে জনমনে। বিএনপির পক্ষ থেকে যেমন ৬টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া হয়েছে তেমনি ঐকমত্য কমিশনের প্রতিদিনের আলোচনায় দলের প্রতিনিধিরা কার্যকর অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে।
দলটি বলছে, বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য দলের প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়া অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে হলেও একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছে।
রোববার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর সংস্কার কমিশনগুলো যেসব প্রস্তাব পেশ করেছেন, তার বিপরীত কিংবা নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা নিয়ে অনেক সময় অচলাবস্থা সৃষ্টির কারণে কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আগ্রহী বলেই আমাদের প্রতিনিধিরা ধৈর্য ধরে আলোচনা শুনছেন এবং তথ্য প্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশনকে সহযোগিতা করছেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার নামে জনগণের নির্বাচিত সংসদ, নির্বাচিত সরকার তথা রাষ্ট্র কাঠামোকে দুর্বল ও অকার্যকর করার কোন প্রস্তাবের যুক্তিসঙ্গত বিরোধিতা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। জনগণকে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য কোনও সরকারকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দুর্বল ও অকার্যকর করা অবশ্যই সংস্কারের মূল আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে এমন কোনও প্রয়াসে সমর্থন জানানো সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থি বলে তা থেকে বিরত থাকার অর্থ- সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা নয় বরং এই প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৬টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশনের বিষয় এখনও আলোচনায় আসেনি। তবে ওই কমিশনে আমাদের দলের প্রতিনিধিবৃন্দের কাছে আমরা যতটুকু জেনেছি তাতে র্যাব বিলুপ্তিসহ প্রায় সব বিষয়েই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দুদক সংস্কার কমিশনে কতিপয় ছাড় দিয়ে ৪৭টি সুপারিশের ৪৬টিতেই আমরা সম্মতি জানিয়েছি। শুধু ২৯ নম্বর সুপারিশে আইনের মাধ্যমে করার পরিবর্তে আমরা আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিদ্যমান বিধান অব্যাহত রাখার কথা বলেছি। আমরা মনে করি এটা না হলে দুদকের কার্যক্রমকে অহেতুক বিলম্বিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টি প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি এবং ৫টিতে আংশিক একমত হয়েছি। ৫টি সুপারিশে আমরা ভিন্নমত প্রদান করেছি। ১১টি প্রস্তাবে আমরা একমত হতে পারিনি- যেগুলো দেশে প্রদেশ সৃষ্টি, পদোন্নতি ও অন্যান্য প্রশাসনিক অসংগতির বিষয়ে। উল্লেখযোগ্য, পদোন্নতির বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় কার্যকর রয়েছে।
ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টি সুপারিশে আমরা একমত হয়েছি এবং ৯টিতে আংশিকভাবে একমত হয়েছি। ১৮টিতে ভিন্নমত পোষণ করে যুক্তিসহ পরামর্শ দিয়েছি। উল্লেখযোগ্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিষয়ক সব প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি। তবে এর কিছু বিষয়ে নির্বাচিত সংসদে আইন প্রণয়ন কিংবা ইতোমধ্যে কোনও অধ্যাদেশ হলে তা সংসদে রিটিফাই ও সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে আমরা একমত হয়েছি এবং ১৪টিতে আংশিকভাবে একমত হয়েছি। ৬৪টিতে আমরা ভিন্নমতসহ একমত হয়েছি। অর্থাৎ এসব বিষয়ে পরিবর্তনে একমত হয়ে বিভিন্ন আইনে ও বিধিতে সংশোধনী অধিকতর কার্যকর হবে তা প্রস্তাব করেছি। ২৪টি বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি। উল্লেখযোগ্য, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংক্রান্ত ১২টি আইন ও ৬টি নীতিমালা আছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় সংবিধানেও নির্দিষ্ট বিধান আছে। এসব প্রস্তাবের বেশ কয়েকটি বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং কয়েকটি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে স্পষ্টতই বাধা সৃষ্টি করে তাদের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আনিত সব প্রস্তাবে একমত হয়েছি। আইনি সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১টি সুপারিশে আমরা দফা ওয়ারী মতামত দিয়েছি। অধিকাংশ সুপারিশে একমত হয়েছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘৭০’ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ। দুই বিষয়েই আমরাই ছাড় দিয়েছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিধান বিশ্বের কোথাও না থাকার পরেও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা সম্মত হয়েছি। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়েও আমরা আমাদের প্রস্তাব থেকে সরে এসে একমত হয়েছি।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪টিসহ আসন সংখ্যার অনুপাতে সভাপতির পদ দিতেও আমরা সম্মত হয়েছি। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংক্রান্ত আর্টিকেল ৪৯ পরিবর্তনে আমরা সম্মত হওয়ায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্প্রবর্তন, ন্যায়পাল আইন যুগোপযোগী করা, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা বিন্যাসে সংস্কার আনার জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সংশোধন ও আইনের মাধ্যমে বিশেষায়িত কমিটি গঠনেও আমরা একমত হয়েছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্মত হয়ে আমরা তা বিচার বিভাগের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নে পরামর্শ দিয়েছি। কারণ, ইতোপূর্বে ১৯৮৮ সালে এমন উদ্যোগকে উচ্চ আদালত বাতিল করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এমন বহু সংস্কার প্রস্তাবে শুধুই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা একমত হয়েছি যেগুলো বাস্তবায়ন অত্যন্ত দূরুহ এবং যে উদ্দেশ্যে এসব প্রস্তাব তা অর্জনের সাফল্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। রাষ্ট্র পরিচালনার এবং সংসদীয় কার্যক্রম দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা যুক্তিগ্রাহ্য মতামত দিয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত আছে। সংস্কার কমিশনসমূহের প্রস্তাবের উপর আলোচনা করে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও নিত্যনতুন এমন সব প্রস্তাব আসছে যেগুলো রাজনীতি, রাষ্ট্র ও সংসদ পরিচালনায় বিপুল প্রভাব ফেলবে। এসব প্রভাব ইতিবাচক হলে অবশ্যই তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে সম্পৃক্ত না করে তাদের প্রতিনিধিত্ব কিংবা প্রত্যাশার ক্ষেত্রে বড় কোনও পরিবর্তন করার অধিকার কোনও ব্যক্তি দল কিংবা কমিশনের আছে কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে। এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি বলে আমরা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিএনপি শুধু টিকে থাকেনি বরং অধিকতর শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়েছে। শত শহীদের রক্তে, গুম, খুনের শিকার সহকর্মীদের আত্মত্যাগে আর লাখো নেতাকর্মীর অবর্ণনীয় দুঃখ-শোকে বিএনপির ঐক্য আরও দৃঢ় হয়েছে। এই ঐক্যবদ্ধ শক্তি ও সমর্থ নিয়ে এবং দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিএনপি দেশে আবারও গণতন্ত্র পুনঃ-প্রতিষ্ঠায় ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে আমরাই সবচেয়ে সক্রিয়। ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে অধিক ক্ষমতা দিলে যেমন ফ্যাসিবাদ কায়েম হয় ঠিক তেমনি নির্বাচিত সরকার এবং সংসদকে ক্ষমতাহীন করলে রাষ্ট্র দুর্বল, ভঙ্গুর ও অকার্যকর হয়। আমরা যেন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে হাজারো শহীদের রক্তে অর্জিত পরিবর্তনের এই সুযোগকে গঠনমূলকভাবে কাজে লাগাই। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৯০-এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ না হই।
যারা নির্বাচন বিলম্ব করতে চায় তারা গণতন্ত্র ও জুলাই-আগস্টের পক্ষের শক্তি নয় বলে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ক র যকর ব যবস থ ব এনপ র জনগণ র র জন ত আম দ র ফখর ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সময়ক্ষেপণ ও নতুন বিতর্ক কাম্য নয়
আমাদের সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু আমাদের শাসকেরা এই নীতি মান্য করেননি বলেই বাংলাদেশ বারবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে যে সমঝোতা ও সহিষ্ণুতা প্রত্যাশিত ছিল, তা তাঁরা কতটা প্রতিপালন করেছেন, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না।
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংস্কারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া, যার অংশ হিসেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে; যার সাফল্যের ওপরই ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক কাঠামো অনেকটা নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে কেবল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আন্তরিক হলেই হবে না, রাজনৈতিক দলগুলোকেও সমঝোতার মনোভাব পোষণ করতে হবে।
প্রত্যাশা ছিল, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবসের আগেই জাতীয় সনদের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে। দিনটি এ কারণে স্মরণীয় যে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়, যা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে জুলাইয়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো, সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে কমিটি গঠন ইত্যাদি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি একমত হয়েছে। কিন্তু উচ্চকক্ষ ও নারী আসনের ভোটপদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ থেকেই গেছে।
বহুদলীয় গণতন্ত্রে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, নীতি ও আদর্শের ফারাক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। গণতন্ত্র মানে হলো একসঙ্গে চলা। সেখানে কাউকে যেমন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যাবে না, তেমনি ‘সালিস মানি, তালগাছ আমার’ মনোভাবও পরিত্যাগ করতে হবে।
বিশেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে মোটামুটি সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে, সেসব বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। সবকিছু আবার গোড়া থেকে শুরু করলে জটিলতা আরও বাড়বে। সম্প্রতি কোনো কোনো দল সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা বলেছে।
ধারণাটি আমাদের দেশে নতুন ও এখনো পরীক্ষিত নয়। সে ক্ষেত্রে উভয় কক্ষে এই পদ্ধতি এখনই ব্যবহার না করে উচ্চকক্ষের জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে। নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদে যদি প্রত্যক্ষ ভোটে নারী সদস্যরা নির্বাচিত হতে পারেন, এখন কেন পারবেন না? কেন তাঁদের দলীয় নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্যদের কৃপার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে?
আমরা যদি স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, তাহলে বিভেদ ভুলে ঐক্যের ওপরই জোর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, সমাজের কোনো অংশকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা যাবে না। নারী-পুরুষ-ধর্ম-জাতিনির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মদানকে যদি আমরা অসম্মান না করতে চাই, তাহলে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে আসতেই হবে। এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।