‘চিপায় পড়ে’ ডিসি-এসপিরা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

রবিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহীতে জুলাই পথযাত্রা শেষে নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “ডিসি-এসপিদের বলছি- আপনারা যে ভাল ব্যবহার করছেন, আমরা জানি, আপনারা চিপায় পড়ে আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করছেন। যদি হাসিনার পতন না হত, তখন এই ডিসি-এসপিরাই গণভবনেই প্রমোশনের জন্য লাইন ধরত।”

আরো পড়ুন:

উপাচার্যরা দায়িত্ব চেয়ে নেননি, হাতে-পায়ে ধরে তাদের দায়িত্ব দিয়েছি: শিক্ষা উপদেষ্টা

৭৩ বছরে রাবি: গবেষণা-উচ্চশিক্ষাসহ চাকরি ক্ষেত্রে গৌরবময় যাত্রা

সাংবাদিকদের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সাংবাদিকদের দেখছি, সাংবাদিকদের ওপরে নজর রাখছি। এই সাংবাদিকরাই জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়ার জন্য লেগেছিল।”

তিনি আরো বলেন, “সাংবাদিকদের বলব- বসুন্ধরার সাংবাদিকরা, বসুন্ধরার সাংবাদিক! খুনি হাসিনার পক্ষে এই বসুন্ধরার মিডিয়া কী বৈধতা উৎপাদন করেছে, আমরা ভুলে যাইনি। এই বসুন্ধরা গ্রুপের সাংবাদিকরা আবার নগ্ন হয়ে বৈধতা উৎপাদনের জন্য লেগে পড়েছে। আবার আরেকটা ১/১১ ঘটাতে তারা ষড়যন্ত্র করছে।”

হাসনাত বলেন, “এই তরুণ সমাজ আর দালালি করতে চায় না, কারো তাঁবেদার হতে চায় না। তরুণ সমাজ আর স্বৈরাচার হতে চায় না। সুতরাং, যারা সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তারা জেনে রাখুন, আপনারা এই তরুণ সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এই জেন-জির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। দাঁড়িপাকা মুরুব্বিরা ফেইল করেছেন, বাবারা ফেইল করেছেন, তখন সন্তানরা রাস্তায় নেমে এসেছে।”

হারানোর কিছুই নেই উল্লেখ করে এই ছাত্রনেতা বলেন, “আমরা কি জানি না, গত ১৬ বছর আপনাদের ব্যাংক কেমনে ছিল? আপনাদের ব্যবসা কেমন ছিল? আমরা সব জানি। কারে ভয় দেখান? আমাদের হারানোর কিছুই নেই। আমাদের লুটপাটের ব্যাংক নেই, যেটা আমরা হারাব। আমাদের শুধু আছে মানুষের ভালোবাসা। সেটার জন্য রাস্তায় এসে আবার আমরা জীবন দেব।”

“বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিচ্ছে। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বেঁচে থাকতে আর বাসা থেকে কাউকে উঠিয়ে নিয়ে গুম হতে দেওয়া যাবে না। কোনো মায়ের বুক আর খালি হবে না, কোনো ইলিয়াস আর হারিয়ে যাবে না, কোনো দেশপ্রেমিক সাংবাদিককে বিদেশে থাকতে হবে না,” যুক্ত করেন হাসনাত।

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “যারা প্রশাসনে আছেন, আপনারা যদি ভেবে থাকেন আপনারা ক্ষমতাপন্থি হবেন, আপনারা ভুল করছেন। আপনারা ভুলে যাবেন না, ১৬ বছরের ডিসি-এসপিদের কী পরিণতি হয়েছে। আপনারা ভুলে যাবেন না, এই দিন দিন না, আরো দিন আছে। আমরা আপনাদেরকে বলব না, আপনারা এনসিপিপন্থি হন, আওয়ামীপন্থি হন। রাজনীতিপন্থি হওয়ার পরিণতি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, ক্যান্টনমেন্টে সুযোগ হয়েছে। এই ডিসি-এসপিদের যদি কেউ স্বৈরাচারের পক্ষে অবস্থান করে, যদি কেউ মিডনাইট ইলেকশনে সহযোগিতা করে, এই বাংলাদেশে আর তার জায়গা হবে না।”

গোয়েন্দা সংস্থারও সমালোচনা করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের এজেন্সিরা যারা রয়েছেন, বাংলাদেশের যারা গোয়েন্দা সংস্থা আছে তারা জানে না, বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র হয়। তারা জানে না, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিতে ফেলতে কী ষড়যন্ত্র হয়। যেটা করে, তারা ক্যান্টনমেন্টে বসে বসে রাজনৈতিক দল খোলে। তারা একটি রাজনৈতিক দলকে আরেকটা দলের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়।  আপনারা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আমরা আপনাদেরও দেখছি।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা ক্ষমতার জন্য আন্দোলন করিনি। সুতরাং, সংস্কার ছাড়া, বিচার ছাড়া যদি ভোটের যদি চেষ্টা করা হয়, আমাদের বুকের ওপর দিয়ে গুলি চালিয়ে যেতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই, অবশ্যই চাই। তবে সেটা সংস্কারসহ, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ। আবার দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে, সেটার জন্য আপনারা প্রস্তুতি রাখুন।”

এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ডা.

তাসনিম জারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/কেয়া/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট ভ ল ব যবহ র করছ ন আপন দ র অবস থ ন আম দ র র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

কারিগরি শিক্ষার্থীদের গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণাকে ‘সহিংস আন্দোলনের উসকানি ও গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ‘প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আলোচনায় বসে। দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারী—উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ডাকে। সবার যুক্তিতর্ক সমানভাবে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়, যাতে কারও প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য না হয়।

লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আলোচনার টেবিলে সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আজ গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কারিগরি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ডিপ্লোমাধারীদের পক্ষ থেকে যে প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরাই অবরোধ ডেকে সহিংস আন্দোলনের জন্য ক্রমাগত উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।

আলোচনার টেবিল ছেড়ে কেন জনদুর্ভোগ করে অবরোধের উসকানি দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্ন রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, এগুলো শুধুই বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা ও গভীর ষড়যন্ত্র, যা প্রথাগত আন্দোলনকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আলোচনার টেবিল ছেড়ে যাঁরা অবরোধ করে দেশে নৈরাজ্য তৈরির উসকানি দিচ্ছেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ও এজেন্ডা খতিয়ে দেখা দরকার।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য গায়ের জোর খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবরোধের প্রয়োজন নেই। যৌক্তিক দাবি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘স্বৈরাচারের পতন হলেও ষড়যন্ত্রের অবসান হয়নি’
  • কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা