ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এ নিয়ে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার মোট ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। এদিকে নোয়াখালীতে টানা পাঁচ দিন বৃষ্টি ঝরে গতকাল থেমেছে। ধীরে নামছে পানি। তবে জনদুর্ভোগ কাটেনি। জেলা শহর মাইজদীসহ সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
ফেনীতে নতুন করে প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে চারটি ফেনী সদর উপজেলা, পাঁচটি ছাগলনাইয়া উপজেলা ও একটি দাগনভূঞা উপজেলার। তবে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মুত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি দৌলতপুর বন্দুয়ার বাসিন্দা।
কিছু এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে পাঁচ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি কমে যাওয়ায় কিছু কিছু যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল শুরু করেছে।
জেলার ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ২০০ বাসিন্দা অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থসহ ১৮ জনকে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করেছেন। ফুলগাজী ও পরশুরামের পানি নামতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলো। পানিতে তলিয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাব, ফসলি জমি। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। চরম ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়নের দুটি ও মোটবি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম এবং দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশেও বন্যার পানি বেড়ে গিয়ে একটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়।
বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হলে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১১২ গ্রামের মানুষের জন্য সব অংশীজনের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ঘোষিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে ধীরে নামছে পানি
শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা শহরের সেন্ট্রাল রোড, আল ফারুক একাডেমি, হাউজিং এস্ট্রেট, হাউজিং বালুর মাঠ আবাসিক এলাকা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত সড়ক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও নতুন বাসস্ট্যান্ডের জেলখানা সড়কে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা কমতে শুরু করেছে। তবে সড়কগুলোতে এখনও পানি আছে। ড্রেনের ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে লোকজন। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের আশপাশের অনেক বাড়িঘরে এখনও পানি।
পৌরসভার টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী জেহাদ হোসেন বলেন, ‘টাউন হল-সরকারি আবাসিক এলাকা সড়কটি অবহেলিত। ড্রেনগুলো বহু বছর পরিষ্কার না করায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে।’ লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পাঁচ দিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। পানির মধ্যেই রান্না ও খাওয়ার কাজ চলছে।’
টানা বৃষ্টিতে জেলায় ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর ফসলি জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃষ্টির পানিতে ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজির মাঠ নিমজ্জিত হয়েছে।
সদর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমার দেড় একর জমির আউশ ধান, বস্তায় চাষ করা ১০০ বস্তা আদা, পেঁপে বাগান, ৩০ শতক জমির আমন বীজতলা ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি কমে যাওয়ায় লোকজন বাড়ি ফিরছেন। গাবুয়া খাল ও নোয়াখালী খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পাস ও বরাদ্দ পেলেই খনন কাজ শুরু হবে।
এদিকে সারাদেশে আরও ১০ দিন বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া অথবা বজ্রসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো তথ্য)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন য সদর উপজ ল প ল ব ত হয় বন য র প ন পরশ র ম উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ