Prothomalo:
2025-07-12@14:06:09 GMT

শিক্ষার বিউপনিবেশায়ন

Published: 12th, July 2025 GMT

আমি লক্ষ করেছি, ১৯৮৬ সালে আমার ডিকলোনাইজিং দ্য মাইন্ড পুস্তকটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিউপনিবেশায়ন ও ভাষাগুলোর ভেতরকার অসম ক্ষমতা-সম্পর্কের ব্যাপারে জগৎজুড়েই আগ্রহ বেড়েছে। কয়েক বছর আগে, ২০১৮ সালে এটিই আমাকে আয়ারল্যান্ডের মুনস্টের রাজ্যাধীন লিমেরিক শহরে টেনে নিয়ে যায়। ওই শহরে তখন ১৮৯৩ সালে স্থাপিত ‘গ্যালিক লিগ’-এর ১২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্​যাপন উপলক্ষে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।

‘গ্যালিক লিগ’ খোদ আয়ারল্যান্ডে গ্যালিক বা আইরিশ ভাষার পুনরুজ্জীবনের জন্য নানা তত্পরতায় নিবেদিত একটি আইরিশ সংগঠন। আইরিশ জনগণের নিজস্ব ভাষা গ্যালিক, ইতিপূর্বে আধিপত্যশীল ইংরেজি ভাষার অধীন হয়ে পড়েছিল। পুরোদস্তুর সরকারি সমর্থনসহ নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও মর্যাদা ও প্রভাবের দিক থেকে আইরিশ ভাষা এখনো ইংরেজির অধস্তন পর্যায়ে বিদ্যমান রয়েছে। আয়ারল্যান্ডের যত মানুষ আইরিশ ভাষায় কথা বলে, তার চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে। কতিপয় সুবিখ্যাত আইরিশ সাহিত্যিক, যেমন ডব্লিউ বি ইয়েটস ও জেমস জয়েস, ইংরেজি ভাষায় লিখেছেন এবং তাঁদের সমূহ সৃষ্টি ইংরেজি সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সম্ভার হিসেবেই সর্বত্র অধীত হয়ে থাকে। ব্রিটেনসহ পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো ‘ইংরেজি বিভাগের’ কথা ভাবা যায় না, যেখানে কোর্স হিসেবে আইরিশ বংশোদ্ভূত এই লেখকদের সাহিত্যকর্ম অন্তর্ভুক্ত নয়। যেসব লেখক ইংরেজি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে ব্যাপক অবদান রেখেছেন, এই দুজন তাঁদের অন্যতম।

গ্যালিক ও ইংরেজি ভাষার মধ্যে বিদ্যমান অসম ক্ষমতার সম্পর্কটি, যা এখন ইংরেজির অনুকূলে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, চিরদিনই এমন ছিল না। ত্রয়োদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে, যখন ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে, বিশেষত তার মুনস্টের রাজ্যে বসতি স্থাপন করে, তখন ধ্রুপদি জ্ঞানচর্চার প্রশ্নে ইংরেজির চেয়ে আইরিশ ভাষা বেশি সমৃদ্ধ ছিল। স্বভাবতই আয়ারল্যান্ডে আদি বসতি স্থাপনকারী ইংরেজরা তখন তুলনামূলকভাবে বেশি প্রাণশক্তিসম্পন্ন আইরিশ ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়। আইরিশ ভাষার প্রতি সেই ইংরেজদের আকর্ষণ ছিল নিতান্তই বাস্তবানুগ: ইংরেজ আবাদিরা যাঁদের ভেতর বসতি স্থাপন করেছিল, তাঁদের অধিকাংশের ভাষাই ছিল আইরিশ।

এ অবস্থায় ১৩৬৬ সালে লন্ডনভিত্তিক ইংরেজ সরকার আইরিশ বা গ্যালিক ভাষার দ্রোহাত্মক গ্রাস থেকে ইংরেজিকে রক্ষা করার জন্য তত্পর হয়ে ওঠে; আয়ারল্যান্ডের কিলকেনি নগরের জন্য জারি করে ‘কিলকেনি বিধিমালা’—যার বিভিন্ন ফরমানের অধীন একদিকে বসতি স্থাপনকারী ইংরেজ–অধ্যুষিত সেই অঞ্চলে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার জোরদার করা হয়; অন্যদিকে আইরিশ ভাষার ব্যবহারকে রীতিমতো একটি ফৌজদারি অপরাধমূলক দুষ্কৃতি হিসেবে স্থির করা হয়। কিলকেনিতে বসবাসকারী কোনো ইংরেজ বা আইরিশ ব্যক্তি একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আইরিশ ভাষা ব্যবহার করলে অভিন্ন বিধিমালার অধীন তাঁদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ার হুমকিও জারি রাখা হয়। ওদিকে ব্রিটিশ সরকারের এসব নীতিমালার তরফে সাহিত্যিক ও দার্শনিক ন্যায্যতা জোগানোর কাজে এগিয়ে আসেন মুনস্টের রাজ্যে বসতি গাড়া ‘দ্য ফেয়ারি কুইন’-খ্যাত ইংরেজ কবি এডমান্ড স্পেন্সার। স্পেন্সার তাঁর ১৫৯৬ সালে প্রকাশিত আ ভিউ অব দ্য প্রেজেন্ট স্টেইট অব আয়ারল্যান্ড পুস্তকে ‘যুক্তি’ প্রদর্শন করেন, ‘ভাষা ও নামকরণ পদ্ধতি হচ্ছে আইরিশ জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক স্মৃতি বিলোপ-সাধনের সর্বোত্তম উপায়।’ তিনি লেখেন, ‘বিজেতা কর্তৃক বিজিতের ভাষাকে অবজ্ঞা করা এবং বিজিতের ওপর বিজেতার ভাষাকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়াই জগতের স্বাভাবিক নিয়ম।’

খোদ আয়ারল্যান্ডে আইরিশ ভাষার প্রান্তিকতাপ্রাপ্তির ঘটনাটি অবশ্য মোটেও কোনো ধরনের স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ঘটেনি, তা বরং (ইংরেজদের) সচেতন রাজনৈতিক পদক্ষেপ ও শিক্ষাসংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে সংঘটিত হয়েছে।

আয়ারল্যান্ড ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম বসতি স্থাপনকারী উপনিবেশ। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড কর্তৃক বিভিন্ন দেশের উপনিবেশায়নের ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ড একধরনের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আয়ারল্যান্ডসহ তার অন্য উপনিবেশগুলোয় ইংরেজরা যেসব ব্যবস্থা প্রবর্তন ও চর্চা করেছে, পৃথিবীর অপরাপর ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোও—তা হোক স্পেন, ফরাসি বা পর্তুগিজ—তাদের আপন আপন উপনিবেশগুলোয় অভিন্ন ব্যবস্থা ও চর্চা জারি রেখেছিল। জাপান কর্তৃক ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কোরিয়া জবরদখলে রাখার সময়েও তা–ই ঘটেছে। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশায়নের ক্ষেত্রেও অভিন্ন ব্যবস্থা জারি ছিল, যেমন নরওয়ের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সে দেশের সামি জনগোষ্ঠীর ভাষার অবদমন। স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের অপরাপর দেশগুলোতেও, সামান্য রকমফের সাপেক্ষে, একই ঘটনা ঘটেছে। বিজিত জনগণের ভাষার অবদমন আর বিজেতার ভাষার উচ্চতর মর্যাদা দান ও তার আধিপত্যের বিষয়টি আবার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত—যা কোনো ঔপনিবেশিক শক্তির বিজয় ও জবরদখল প্রক্রিয়াকে নিষ্কণ্টক রেখে জারি থাকে।

ভাষিক অবদমন প্রকল্পটি মোটেই কোনো নন্দনতাত্ত্বিক আনন্দের জন্য গৃহীত হয়নি। স্পেন্সার খুব ভালো করেই বুঝতেন যে আইরিশ ভাষা ও নামকরণ পদ্ধতির উপনিবেশায়ন প্রক্রিয়াটি আখেরে আইরিশ জনগণের আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দেবে, তাঁদের প্রতিরোধক্ষমতাকে দুর্বল করবে এবং তার ফলে আইরিশদের ওপর বিজয়ী আধিপত্য কায়েম করা ইংরেজদের জন্য সহজতর করে তুলবে। একটা গোটা জনগোষ্ঠীকে সামরিকভাবে পরাজিত করে তার ওপর আধিপত্য জারি রাখার ব্যয় ও কার্যকারিতার তুলনায় ভাষাগত বিজয়ের মাধ্যমে সেই জনগোষ্ঠীর ওপর আধিপত্য কায়েম রাখা অনেক কম ব্যয়বহুল এবং অনেক বেশি কার্যকর। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বিজয়ীকে শুধু বিজিত জনগোষ্ঠীর এলিট সমাজের মন ও মননকে অধিকার করার জন্য বিনিয়োগ করতে হয়, আর তারপর ওই এলিট গোষ্ঠী নিজেই অবশিষ্ট জনতার ভেতর অধীনতার বোধ ছড়িয়ে দেবে—বিজিত জনগোষ্ঠীর এলিট সম্প্রদায়টি বিজয়ী ঔপনিবেশিক শক্তির ভাষিক সেনাবাহিনীতে পরিণত হবে।

আধুনিক ব্রিটেনের সমৃদ্ধি ও শক্তিমত্তার পেছনে ভারত উপনিবেশের মুখ্য ভূমিকা থাকার কারণে ভারত এমনকি আয়ারল্যান্ডের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছিল, যার ফলাফল পরবর্তীকালে এশিয়া ও আফ্রিকার অপরাপর উপনিবেশগুলোয় রপ্তানি করা হয়। ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত ‘সুপ্রিম কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র সদস্য হিসেবে টমাস ব্যাবিংটন ম্যাকলে উপনিবেশিত ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও দণ্ডবিধি প্রণয়নের মতো দুটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ প্রকল্প সম্পন্ন করেছিলেন। ম্যাকলে তাঁর ইতিহাসখ্যাত ‘মিনিটস অন ইন্ডিয়ান এডুকেশন’–এ, ১৮৩৫ সালে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ভারতে প্রচলিত সংস্কৃত ও ফারসি ভাষাকে ইংরেজি দিয়ে প্রতিস্থাপন করার জন্য ওকালতি করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে তার ঘোষিত লক্ষ৵ ছিল ভারতবর্ষে এমন একটি ‘শ্রেণি’ গঠন করা, যার সদস্যরা ‘আমাদের এবং আমাদের দ্বারা শাসিত লক্ষ লক্ষ প্রজার ভেতর ভাষাগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবে—যারা রক্তমাংস আর গাত্রবর্ণে ভারতীয় হলেও রুচিবোধ, মতামত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে হবে ইংরেজ’।

এ ঘটনার ঠিক ৮৭ বছর পর উপনিবেশিত কেনিয়ার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার ফিলিপ মিশেলের মুখে ম্যাকলের কথা পুনরাবৃত্ত হয়। ‘কেনিয়া ল্যান্ড’ ও তার মুক্তিকামী ‘ফ্রিডম আর্মি’র—ব্রিটিশদের ভাষায় মাউ মাউ—বিরুদ্ধে পরিচালিত ব্রিটিশ সরকারের সামরিক অভিযানকে সহযোগিতা করার জন্য মিশেল আফ্রিকার শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজি প্রবর্তনের ফজিলত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মিশেল বলেছিলেন, এই নতুন ভাষাশিক্ষা ‘এমন একটি সভ্য রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যেখানে জন্মগত আদি পরিচয়নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ব্রিটিশ মান ও মূল্যবোধের অধিকারী হবে, যেখানে প্রত্যেকেরই স্বার্থ নিহিত থাকবে—থাকবে অংশীদারত্ব’।

ক্যাপ্টেন রিচার্ড হেনরি প্র্যাট যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যের কারলিসল অঞ্চলে তাঁর কুখ্যাত কারলিসল ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা করে, ১৮৭৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী শিশুদের জন্য তার নিজস্ব শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেন। নিজের প্রতিষ্ঠিত বোর্ডিং স্কুলের পেছনে সক্রিয় শিক্ষা-দর্শন নিয়ে ১৮৯২ সালে রিচার্ড বলেন, ‘শিক্ষার্থীর বুকের ভেতরের আদি ইন্ডিয়ানটিকে হত্যা করো, আর মানুষটাকে রক্ষা করো।’ রিচার্ডের শিক্ষা কর্মসূচি এক অভিন্ন ঔপনিবেশিক বিন্যাসকেই অনুসরণ করেছে: কিছু মানুষকে তাঁদের মাতৃভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন করো, ঔপনিবেশিক প্রভুদের ভাষায় দীক্ষিত করে নতুনভাবে তাদের গড়ে তোলো, তারপর শাসিত জনগোষ্ঠীর ভেতর ছেড়ে দাও।

ওয়ালটার রোডনি তাঁর হাউ ইউরোপ আন্ডারডেভেলপড আফ্রিকা গ্রন্থে ফ্রান্সের বিভিন্ন উপনিবেশ ও তার বাইরে ফরাসি ভাষা প্রচারের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে, ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের চূড়ান্ত লক্ষ৵ সম্পর্কে, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পিয়ের ফঁস্যাঁকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘ফরাসি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রের সঙ্গে তার উপনিবেশগুলোকে একটা শক্ত মনস্তাত্ত্বিক বন্ধনে আবদ্ধ করা প্রয়োজন ছিল। কারণ, যেদিন উপনিবেশগুলো তাদের প্রগতিশীল মুক্তির ভেতর দিয়ে একটি সম্ভাব্য ফেডারেশনে সংঘবদ্ধ হবে, সেদিনও তারা যেন ভাষা, চিন্তা ও চেতনার দিক থেকে ফরাসিই থেকে যায়।’

স্পষ্টতই এসব কর্মকাণ্ডের একটি পরিষ্কার লক্ষ৵ ছিল: উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীর এলিট সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের মন ও মননের উপনিবেশায়নই ছিল সেই সাম্রাজ্যবাদী শিক্ষানীতির লক্ষ৵। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাস্তবে সেই লক্ষ৵ পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হয়েছে। উপনিবেশ–উত্তর পরিবেশে আয়ারল্যান্ডের মতো স্বাধীনতা অর্জনের পরও প্রতিটি দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ স্বদেশি ভাষার তুলনায় ঔপনিবেশিক ভাষায় নিজেদের প্রকাশ করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। আফ্রিকার ক্ষেত্রে মহাদেশটির এমনকি পরিচয়জ্ঞাপক বয়ানগুলোও নানা ইউরোপীয় ভঙ্গি ও ভাষায়—প্রধানত ইংরেজি, ফরাসি ও পর্তুগিজ—বর্ণিত হয়। এমনকি উপনিবেশ–উত্তর যেসব দেশের এলিট সম্প্রদায় জাতীয়তাবাদী মনোভাবাপন্ন এবং নিজেদের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর, তাঁরাও নিজেদের রাগ কিংবা আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য ঔপনিবেশিক ভাষাকেই বেছে নেন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভাষাশিক্ষার জন্য বরাদ্দ অর্থের ৯০ শতাংশই নানা ঔপনিবেশিক ভাষা শিক্ষায় ব্যয় করা হয়, যদিও এসব দেশের জনগণের ৯০ শতাংশই আফ্রিকার বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করেন। আফ্রিকার কোনো কোনো সরকার, এমনকি আফ্রিকার ভাষাগুলোকে প্রগতি ও উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচনা করেন। অন্যদিকে ঔপনিবেশিক ভাষাগুলোকেই তাঁরা বৈশ্বিক আধুনিকতার যুগে প্রবেশের সিংহদ্বার বলে বিশ্বাস করেন।

কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এ কথা নিশ্চয় অদ্ভুত শোনাবে যে ফরাসি সাহিত্য কেবল জাপানি ভাষাতেই রচনা করা যেতে পারে, কিংবা ইংরেজি সাহিত্য জুলু ভাষায়—এমনি অদ্ভুত যেকোনো ফরাসি লেখকের সঙ্গে দেখা হলে আপনি তাঁর দিকে বিস্ময়ের সঙ্গে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘পৃথিবীতে এত ভাষা থাকতে আপনি ফরাসি ভাষায় কেন লিখছেন?’ কিংবা একজন ইংরেজ লেখককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি জুলু ভাষায় লিখছেন না কেন?’ ইতিহাসের পরিহাস এই আফ্রিকার কিংবা অপর যেকোনো উপনিবেশ–উত্তর দেশের লেখকদের ক্ষেত্রে, এখনো, এহেন অযৌক্তিক, অদ্ভুত আর অবাস্তব প্রত্যাশা জারি রয়েছে।

এমন অদ্ভুত ও অবাস্তব পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কী করে? ব্যাপারটা তো মোটেও এমন নয় যে ঔপনিবেশিক ভাষাগুলো অন্যান্য ভাষার অধিক কোনো ভাষা। যেকোনো পরিস্থিতিতে একাধিক ভাষাজ্ঞান যেকোনো ব্যক্তিকেই বিশেষভাবে ক্ষমতায়িত করে থাকে। কিন্তু উপনিবেশের ক্ষেত্রে কিংবা অনুরূপ অন্য কোনো পরিস্থিতিতে, যেখানে একটি আধিপত্যশীল ও আধিপত্যের শিকার দুটি শ্রেণি বিদ্যমান ছিল, ব্যাপারটা মোটেই এমন ইতিবাচক কিছু ছিল না। অর্থাৎ বিষয়টি কোনো উপনিবেশিত সমাজে বিদ্যমান কোনো ভাষার সঙ্গে মোটেই আরেকটি নতুন ভাষা যোগ করার মতো নিরীহ ব্যাপারমাত্র ছিল না। কেননা কোনো বিজিত সমাজে একটি নতুন ভাষা প্রবর্তন করাই বিজয়ী ঔপনিবেশিক শক্তির জন্য যথেষ্ট ছিল না, বরং নিজের ভাষাটিকে উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীর ভাষার কবরের ওপর চাষ করেই কেবল তাকে ক্ষান্ত হতে হতো। আফ্রিকার ভাষাগুলোর মৃত্যুই সে অঞ্চলে ইউরোপীয় ভাষাগুলোকে জীবন দিয়েছে। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক ভাষাগুলো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠার জন্য উপনিবেশগুলোর নিজস্ব ভাষাগুলোকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আফ্রিকার ভাষাগুলোর বিস্মৃতিই ইউরোপীয় ভাষাগুলোর জাগৃতি নিশ্চিত করেছে।

ভাষার এই দুটি অবস্থা—বিস্মৃতি ও জাগৃতি—মোটেই সংশ্লিষ্ট ভাষাগুলোর অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং উপনিবেশিত অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শক্তির ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সমাজের ভেতর সচেতনভাবে একটি মনোভঙ্গি তৈরির সঙ্গে সম্পর্কিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঔপন ব শ ক ভ ষ শ ক ষ ব যবস থ আইর শ ভ ষ র প ত জনগ ষ ঠ র উপন ব শ ত র উপন ব শ পর স থ ত ইউর প য় ব যবহ র জনগণ র কর ত ক ইন ড য় র ভ তর প রক শ ত হয় ছ র ওপর ক ষমত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত

সম্প্রতি দেশে পাথর মেরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, লাগামহীন চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা। 

শনিবার বাদ ডি আই টি মসজিদ সংলগ্ন সড়কে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল পূর্ববর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর এর সভাপতি মাওলানা রবিউল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা.আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ হাসান। 

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ সভাপতি মাওলানা শফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ এবং ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ। 

বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, ৫ই আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দল বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর কারণে সারা দেশের ব্যবসায়ী সমাজ ও জনগণ আজ আতঙ্কিত। 

খুন, ধর্ষন, চাঁদাবাজি সবই এমনভাবে বেড়ে গেছে যেনো বিগত ১৬ বছরেরই প্রতিচ্ছবি বলে মনে হচ্ছে। সর্বশেষ পুরান ঢাকায় একজন ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাঁদার জন্য ইট নিক্ষেপ করে হত্যা এবং লাশের উপর দাঁড়িয়ে খুনিদের পৈশাচিক উল্লাস যেনো বর্বরতার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে ।  

দিনে দুপুরে, প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করলেও এদেরকে প্রশাসন সমূলে উৎখাত করছে না। আগে এর দিনের পর দিন আরো বেপরোয়া হচ্ছে। তাই এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন এবং জনগণের পক্ষ থেকে একযোগে প্রতিরোধ করতে হবে।

অতি অল্পতেই নব্য চাঁদাবাজদের দল যদি সংশোধন না হয় তাহলে জনগণ পুনরায় বিপ্লবের মাধ্যমে এদেশের নব্য চাঁদাবাজদের শায়েস্তা করতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।

বক্তারা অবিলম্বে বর্বরোচিত হত্যার বিচার, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস নির্মূলের দাবি জানান এবং ইসলামী আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানান।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ