ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীন সফরে যাওয়াসহ ছয়টি অভিযোগে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর দলীয় সদস্যপদ বাতিল করেছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌর বিএনপি।

গত শুক্রবার রাতে রামগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক শেখ মো. কামরুজ্জামান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ ও সদস্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে এই তথ্য জানানো হয়। চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচারিত হয়।

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিরও (বিসিএস) সভাপতি। ৫ আগস্টের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য ফরমও পূরণ করেছিলেন তিনি।

রামগঞ্জ পৌর বিএনপির ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের চেতনার প্রচারক কিংবা আন্দোলনবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন যাঁরা, তাঁদের বিএনপির কোনো পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ জন্য জহিরুল ইসলামের সদস্য ফরম বাতিল ঘোষণা করা হলো।

এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগও উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের সময় যখন লাখো মানুষ স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে জীবন বাজি রেখেছিল, ঠিক তখনই জহিরুল ইসলাম শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে চীন ভ্রমণ করেন। এ ছাড়া পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন তিনি শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিএনপিকে কটাক্ষ করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন; যা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

যোগাযোগ করা হলে জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দেশের বাইরে আছি। সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টি এখনো জানি না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীন সফরে যাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তা ছাড়া তখন শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য আমাদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হতো।’

রামগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শেখ মো.

কামরুজ্জামান সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, জহিরুল ইসলাম ২০২২ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার চীন সফরে অংশ নিয়েছিলেন। তা ছাড়া তাঁর অতীত ইতিহাস দলীয় নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় সদস্যপদ গ্রহণযোগ্য নয়। দলের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র মগঞ জ প র ব এনপ লক ষ ম প র র ব এনপ র সদস যপদ চ ন সফর ব যবস সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

গফরগাঁওয়ে দুই শিশু নিখোঁজ, মুক্তিপণ দাবি, পুকুরে মিলল একজনের লাশ

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় পাশাপাশি গ্রামের দুই প্রবাসীর দুই শিশুসন্তান প্রায় একই সময়ে নিখোঁজ হয়। শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে নিখোঁজের পর শনিবার উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরশাঁখচূড়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ, হত্যার পর লাশটি পুকুরে ফেলা হয়েছে। রাত ১০টায় এই রিপোর্ট লেখ পর্যন্ত সময়ে অন্য শিশুর খোঁজ মেলেনি। মৃত শিশুটির নাম সিফাত (১১)। সে উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরশাঁখচূড়া গ্রামের সৌদিপ্রবাসী নুরুল ইসলামের ছেলে ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নিখোঁজ আরেক শিশুর নাম সাদাব হোসেন (৫)। সে নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘরিয়া গ্রামে সৌদিপ্রবাসী আল আমিনের ছেলে। সে মায়ের সঙ্গে গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামে নানাবাড়িতে থাকত। সেখান থেকেই শিশুটি নিখোঁজ হয়।

আরো পড়ুন:

মাহবুবুর হত্যা: ৭ কারণ সামনে রেখে তদন্তে পুলিশ

কক্সবাজারে ইউপি সদস্য খুন: ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিফাত ও সাদাবের বাড়ির মধ্যে দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। গ্রাম দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার চরশাঁখচূড়া থেকে নিখোঁজ হয় সিফাত। একই সময়ে বাসা থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেনি সাদাব। নিখোঁজের ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

সাদাবের স্বজনেরা জানান, নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়। পরে রাতে দুই দফা একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে সাদাবকে ফেরত দেবে বলে ২৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এরপর থেকে ওই নম্বর বন্ধ রয়েছে।

সিফাতের মা সাবিনা খাতুন অভিযোগ করেন, একই এলাকার আরমান হোসেন (২৪) নামের এক ছেলে তার মেয়েকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন। গত বুধবার রাতে বাড়িতে গিয়ে তার মেয়েকে হুমকি-ধমকিও দেন আরমান। সিফাত নিখোঁজের পর থেকে আরমান পলাতক রয়েছেন বলে জানান তিনি।

পাগলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহা. ফেরদৌস আলম বলেন, ‘‘সিফাত নিখোঁজের পর থেকে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন স্বজনেরা। তবে, কোথাও না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা। শনিবার সকালে সিফাতের মরদেহ পুকুরে ভাসতে দেখে থানায় খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। শিশুটির ঘাড় ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘অপরদিকে, সাদাবের স্বজনদের ফোন করে টাকা নেওয়া নম্বরটির লোকেশন ট্র্যাক করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সাদাবকে দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’’

ঢাকা/মিলন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ