যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে হঠাৎ চীনের সঙ্গে কেন সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চাইছে ভারত
Published: 22nd, July 2025 GMT
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যাহ্নভোজ বৈঠক নতুন করে ভারতে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গোপনে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি বিকল্প কৌশল হিসেবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগও নিচ্ছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ট্রাম্প প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যতম প্রধান অংশীদার দেশটির বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছে। এমন পরিস্থিতিতে আসিম মুনিরের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক এবং অন্যান্য উত্তেজনা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক আলোচনাকে চাপের মুখে ফেলেছে।
পাকিস্তান, বিশেষ করে তাদের সামরিক বাহিনী আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত। দেশটির তিন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে, ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে কাছে টেনে নেওয়ার মাধ্যমে তারা ভুল বার্তা দিচ্ছে।
ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তবে ভারতীয় লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের সহায়তা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। দেশটি বলেছে, নয়াদিল্লি এখনো কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি যে পাকিস্তান এতে জড়িত।
গত দুই দশকে সামান্য প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। এর পেছনে অন্তত একটি কারণ হলো, দুই দেশের চীনবিরোধী অবস্থান।
ওয়াশিংটনভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বর্তমান সমস্যাগুলো একটু ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ঘন ঘন এবং গভীরভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে জড়াচ্ছে এবং ভারতের উদ্বেগগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর, তাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।
মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এবার যেটা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সেটা হচ্ছে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত আচরণ। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতি নিয়ে নতুন প্রস্তাব দেওয়ার কারণে সেই উত্তেজনা আরও বিস্তৃত হয়েছে।
বর্তমান সমস্যাগুলো একটু ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ঘন ঘন এবং গভীরভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে জড়াচ্ছে এবং ভারতের উদ্বেগগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর, তাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হচ্ছেমাইকেল কুগেলম্যান, জ্যেষ্ঠ গবেষক, এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তর ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলেও তারা সাড়া দেয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই বলেছিল, তারা ট্রাম্প ও আসিম মুনিরের বৈঠকের বিষয়টি ‘আমলে নিয়েছে’।
মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা ব্যক্তিগত কূটনৈতিক যোগাযোগ বা আলাপের বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেন না। যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশের সঙ্গেই দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখে।
মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব সম্পর্ক নিজের গুরুত্ব ও যোগ্যতায় দাঁড়িয়ে আছে। আমরা এক দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করি না।’
হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজ
গত মে মাসে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ঘিরে ভিন্ন এক কৌশল নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত দাবি করেছিল, কাশ্মীরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার প্রতিশোধ নিতে তারা সীমান্তের ওপারে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।
চার দিন ধরে যুদ্ধবিমানের লড়াই, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিমপ্রধান পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে তিনটি বড় যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে দুটি হয়েছে কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে বিরোধের জেরে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে ছোটখাটো সংঘর্ষ লেগেই আছে।
আসিম মুনিরের হোয়াইট হাউস সফর নিয়ে ভারতের বিরক্তি আরও বেড়ে যায়। কারণ, ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, তিনিই বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের হুমকি দিয়ে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ আটকেছেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান মোদি।গত মে মাসের সেই সংঘাতের কয়েক সপ্তাহ পরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান। এটি ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের এক বড় অগ্রগতি। কারণ, ট্রাম্পের আগের মেয়াদ এবং বাইডেনের শাসনামলে এই সম্পর্ক অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল।
এই প্রথমবারের মতো কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে ডেকে নিলেন। তা–ও এমনভাবে যে তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তা ছিলেন না। পাকিস্তানে অবশ্য সেনাপ্রধানকেই সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ভারতের নেতারা দাবি করছেন, ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে মুনিরের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি ধর্মভিত্তিক। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মে মাসে কাশ্মীর হামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ধর্ম জেনে পরিবারের সদস্যদের সামনে পর্যটকদের হত্যা করা হয়েছিল।’
জয়শঙ্কর দাবি করেন, এটি বুঝতে হলে দেখতে হবে, পাকিস্তানি নেতৃত্ব বিশেষ করে তাদের সেনাপ্রধান একজন চরম ধর্মীয় মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তি।
অন্যদিকে পাকিস্তান অভিযোগ করছে, আসিম মুনির নন, বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই ধর্মীয় উগ্রবাদী মতবাদে পরিচালিত হচ্ছেন। আর তাঁর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকারকে পদদলিত করছে।
তবে নরেন্দ্র মোদি ও ভারত সরকার বারবার দাবি করে আসছে, তারা কোনো সংখ্যালঘুর প্রতি বৈষম্য করেন না।
ভারতীয় কর্মকর্তারা ও শিল্প–বাণিজ্য সংগঠনের একজন লবিস্ট বলেন, একসময় ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে প্রকাশ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যাওয়া সত্ত্বেও এখন ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুটা কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য আলোচনার গতি বেশ ধীর হয়ে পড়েছে।আসিম মুনিরের হোয়াইট হাউস সফর নিয়ে ভারতের বিরক্তি আরও বেড়ে যায়। কারণ, ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, তিনিই বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের হুমকি দিয়ে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ আটকেছেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান মোদি। তিনি ট্রাম্পের দাবির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এসেছিল দুই দেশের সেনাপ্রধানদের আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নয়।
ভারতের দুই কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুন মুনিরের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পর মোদির দপ্তর ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দপ্তরের কর্মকর্তারা আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান। অবশ্য ভারতের এই প্রতিবাদের খবর আগে প্রকাশ হয়নি।
একজন ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘সীমান্তের ওপারের সন্ত্রাসের বিষয়ে আমাদের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের জন্য একদম স্পষ্ট “লাল রেখা”। এই সময়টা বেশ জটিল.
ভারতের ওই কর্মকর্তা স্পর্শকাতর বিষয় বলে এসব নিয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আসিম মুনির ও ট্রাম্পের মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তান ন্যাটো–বহির্ভূত মিত্র হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে আগেও অস্ত্র দিয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের সম্পর্ক আরও কীভাবে জোরদার করা যায়, সেটি নিয়েও আলোচনা হয়।
এই কারণে দিল্লির উদ্বেগ বেড়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে অস্ত্র পাবে, ভবিষ্যতে আবার দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে, তা ভারতের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হতে পারে।
ভারতের সঙ্গে সংঘাতের আগে গত ১ মে টিলা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জার্স পরিদর্শন করেছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আস ম ম ন র র কর মকর ত র ব শ ষ কর আম দ র ত র পর
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫