সরকারি অফিসে শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম নিয়োগ
Published: 23rd, July 2025 GMT
বাংলাদেশে তরুণদের কর্মসংস্থান অন্যতম বড় একটি চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও প্রত্যাশিত চাকরি মিলছে না। সরকারি চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতায় অনেকেই হতাশ হচ্ছেন। এমন বাস্তবতায় সরকারি দপ্তরগুলোতে শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন (পার্টটাইম) চাকরির সুযোগ তৈরির ভাবনা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এবিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব বলেন, আমরা সরকারের বিভিন্ন অফিসে পার্টটাইম চাকরিতে নিয়োগ দিতে চাই শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন দপ্তরে কিছু পদে ফুল টাইমে স্থায়ী নিয়োগ দরকার হয় না। পার্টটাইমে নিয়োগ দিলে সরকারের ব্যয়ও কমবে, শিক্ষার্থীদের আর্থিক স্বচ্ছলতাও আসবে।
উপদেষ্টার এবক্তব্যকে কেউ একে যুগোপযোগী ভাবনা বলছেন, আবার কেউ আশঙ্কা করছেন এই খণ্ডকালীন নিয়োগই ভবিষ্যতে স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলনে রূপ নিতে পারে।
তরুণ বেকারত্ব ও বাস্তব প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৩০ লাখের বেশি বেকার রয়েছে, যার বড় অংশই তরুণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। প্রতিবছর প্রায় ২০–২৫ লাখ নতুন তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন, কিন্তু সবার জন্য পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ তৈরি হয় না।
সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ বেশি হলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বহু পদ শূন্য থাকলেও দীর্ঘসূত্রিতায় তা পূরণ হয় না। এমন অবস্থায় পার্টটাইম নিয়োগ একটি বিকল্প চিন্তা হিসেবে উঠে এসেছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব বলেন, অনেক সরকারি দপ্তরে এমন পদ রয়েছে যেগুলোর জন্য পূর্ণকালীন নিয়োগের প্রয়োজন নেই। সেসব পদে পার্টটাইম ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দিলে একদিকে অভিজ্ঞতা বাড়বে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে তারা স্বাবলম্বী হবে। একই সঙ্গে সরকারও ব্যয় সাশ্রয় করতে পারবে।
তিনি আরো জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল তথ্যসেবা, নাগরিক হেল্প ডেস্ক বা বিভিন্ন প্রকল্পভিত্তিক সহায়ক পদের ক্ষেত্রে এ ধরনের নিয়োগ কার্যকর হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের মত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনিরা জাহান বলেন, সরকারি দপ্তরে যদি পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ মেলে, তাহলে সেটা আমাদের জন্য উপকারী হবে। তবে ভবিষ্যতে যদি স্থায়ীকরণের কোনো সুযোগ না থাকে, তাহলে তা আগেই জানিয়ে দেয়া দরকার।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আতিক হাসানের ভাষ্য, পার্টটাইম হলেও যদি কিছু অভিজ্ঞতা এবং ন্যায্য সম্মানী মেলে, তাহলে অনেক শিক্ষার্থীর জন্য এটি উপকারী হবে। তবে মেয়াদ শেষে যেন ঠকতে না হয়, সেটাও ভাবতে হবে।
প্রশাসনের ভিতরে ভিন্নমত
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, খণ্ডকালীন নিয়োগ একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। তবে এটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলে পরে জটিলতা তৈরি হতে পারে। আমরা অতীতে দেখেছি অস্থায়ী কর্মীরাই পরবর্তীতে স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা ছাড়া এই প্রক্রিয়া শুরু করলে দপ্তরগুলোতে স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব মূল্যায়ন না করে এই পথ বেছে নেওয়া উচিত নয়।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
অর্থনীতিবিদ ড.
তিনি আরো বলেন, যদি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরবর্তী সরকারি চাকরিতে সীমিত সুবিধা দেওয়া হয়, তাও নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু সরাসরি স্থায়ীকরণ চেয়ে আন্দোলনের সুযোগ যেন না থাকে সেই দিকটি নিশ্চিত করা জরুরি।
অতীত অভিজ্ঞতা
অস্থায়ী নিয়োগের পর স্থায়ীকরণের দাবি নতুন কিছু নয়। ২০২২ সালে ট্রাফিক সহকারী প্রকল্পে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন। একইভাবে তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরাও বহুবার এমন দাবি জানিয়ে রাজপথে নেমেছেন।
এই ধরনের উদাহরণ সরকারের জন্য শিক্ষা- যদি আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সীমাবদ্ধ করা না হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা (অব.) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি অফিসে শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম নিয়োগ নিঃসন্দেহে একটি উদ্ভাবনী ও সময়োপযোগী ভাবনা। এটি একদিকে তরুণদের কর্ম অভিজ্ঞতা ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে, অন্যদিকে সরকারের কিছু অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। তবে এর আগে প্রয়োজন একটি সুসংহত, স্বচ্ছ এবং আইনি কাঠামোর মাধ্যমে নিয়োগ নীতিমালা তৈরি করা। তা না হলে অস্থায়ী নিয়োগের খোলসে আবারেো স্থায়ী দাবি, আন্দোলন এবং প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। সরকার যদি দূরদৃষ্টি নিয়ে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে, তাহলে এটি হতে পারে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা।
ঢাকা/আসাদ/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স থ য় করণ র দ ব কর মকর ত সরক র র র জন য চ কর র র কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।