মাছ চুরির অভিযোগে ভ্যানচালককে গাছে বেঁধে নির্যাতন, উদ্ধার করল পুলিশ
Published: 23rd, July 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারায় মাছ চোর সন্দেহে এক ভ্যানচালককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে ওই ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে হাটমাধনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম মুজিবুর রহমান (৫৬)। তিনি উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকালে হাটগাঙ্গোপাড়া এলাকার আড়তে মাছ বিক্রি শেষে নিজের ভ্যান নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন মুজিবুর। তিনি হাটমাধনগর এলাকায় পৌঁছালে তাঁর পথ রোধ করেন স্থানীয় কয়েকজন। মুজিবুর কেন তাঁদের বিল থেকে মাছ চুরি করে বিক্রি করছেন, এমন অভিযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চান। একপর্যায়ে রশি দিয়ে তাঁকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। এ সময় তাঁকে মারধর করে আবার মাছ চুরির বিষয়ে জানতে চান। পরে সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন করে বিষয়টি জানালে ঘটনাস্থলে পৌঁছান হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা।
এ বিষয়ে মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি, তবে তাঁর স্বজনেরা জানান, জোঁকাবিলে মাছ চাষ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। এবারও হাটমাধনগর ও বাসুদেবপাড়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। মুজিবুর রহমানকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আবুল কালাম, আফসার আলী, পিয়ার বকস, নাদের আলীসহ কয়েজন গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, মুজিবুর ও তাঁর ভাই এবাদুর রহমান বিলের মাছ চুরি করে বাজারে বিক্রি করে আসছেন। কয়েক দফা হাতেনাতে ধরে সতর্ক করা হলেও তাঁরা শোনেননি। এ ছাড়া তাঁদের এলাকায় বিলের মুখের একটি জলকপাট খুলে পানি ও মাছ বের করে দিয়েছেন তাঁরা।
মুজিবুরকে আপাতত পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে জানিয়ে হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান আজ বেলা একটার দিকে বলেন, সেখানে গিয়ে মুজিবুরকে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পাননি তাঁরা। তাঁর বিরুদ্ধে বিলটির মাছচাষিদের পক্ষ থেকে চুরির মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগ না পেলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর এমন চাপ দিচ্ছেন, কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস পার্টির এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এখন দেশকে মোদির ‘বন্ধুত্বের মূল্য’ দিতে হচ্ছে।
কংগ্রেস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচার চালানোকে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে।
কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর সঙ্গে দণ্ড জরিমানাও দিয়েছেন। এখন দেশ মোদির বন্ধুত্বের খেসারত দিচ্ছে। মোদি ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারতকে শাস্তি দিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতকে অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার যুদ্ধ খরচ বহন করছে। সেই যুদ্ধ এরই মধ্যে তিন বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আবার প্রেসিডেন্ট হলে শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।
ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতকে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।
কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য মাল্লু রবি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের উচিত উপযুক্ত জবাব দেওয়া।’
কংগ্রেসের আরেক নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার যাঁকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা সংসদে এ বিষয়ে কথা বলব। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’
আম আদমি পার্টির (এএপি) সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত। মোদির উচিত, এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর বক্তব্য থেকে পেছনে সরে আসেন। তাই ভারতের সরকার কী বলে, তা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজেপি–দলীয় আরেক সংসদ সদস্য প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত, ভারত সরকার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসা ও শিল্প খাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
বিজেপির হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। আগেও তিনি এক কথা বলেছিলেন, পরে আবার নিজেই তা বদলে ফেলেছিলেন।’
বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গি বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী পাল্টা কৌশল তৈরি করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপরই পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। তাঁর দাবি, এসব দেশ আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আসছিল।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে নয়াদিল্লি১৫ ঘণ্টা আগে