বিমান ভ্রমণের সময় ছাড়া স্মার্টফোনে এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহারের ৫ উপকারিতা
Published: 24th, July 2025 GMT
এয়ারপ্লেন মোড বা ফ্লাইট মোড চালু থাকলে ফোনের ব্লুটুথ, ইন্টারনেটসহ মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বিমানের নেভিগেশন বা যোগাযোগব্যবস্থায় কোনো বিঘ্ন ঘটে না। আর তাই বিমান চলাচলের সুবিধার্থে যাত্রীদের ফোন বন্ধ করতে বা এয়ারপ্লেন মোড চালু করতে বলা হয়। বিমান ভ্রমণের সময় ছাড়াও দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহারের ৫ উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।
১.নেটওয়ার্কের সিগন্যাল দ্রুত ফিরে পাওয়া
ঘরে বা দূরে কোথাও ভ্রমণের সময় স্মার্টফোনে নেটওয়ার্ক না থাকলে ভোগান্তির সীমা থাকে না। ফোনকল করা যায় না, ইন্টারনেট বন্ধ থাকে, জিপিএসও কাজ করে না। এর ফলে জরুরি প্রয়োজনে পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। যেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল, সেখানে ফোন ক্রমাগত সিগন্যাল খোঁজার চেষ্টা করে; এতে ব্যাটারির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। তবে এয়ারপ্লেন মোড চালু করে কয়েক সেকেন্ড পর তা বন্ধ করে দিলে ফোনের নেটওয়ার্ক, ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ সংযোগ নতুন করে চালু হয়, যা নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে দ্রুত সংযোগ স্থাপন করতে পারে। অনেক সময় এ পদ্ধতিতে নেটওয়ার্কের সিগন্যাল দ্রুত ফিরে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনস্মার্টফোনে নজরদারি ঠেকানোর পাঁচ উপায়২৯ জুন ২০২২২. দ্রুত চার্জএয়ারপ্লেন মোডে ফোন কোনো নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার চেষ্টা করে না, এর ফলে ফোনের ব্যাটারির শক্তি খরচ কম হয়। আর তাই এয়ারপ্লেন মোড চালু থাকা অবস্থায় ফোন চার্জ করলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দ্রুত চার্জ করা যায়।
৩. শিশুদের থেকে ফোন নিরাপদ রাখতেশিশুরা অনেক সময় ফোনে গেম খেলে বা ভিডিও দেখে। এর ফলে অবাঞ্ছিত ওয়েবসাইটে প্রবেশের পাশাপাশি ভুয়া বা ক্ষতিকর অ্যাপ ডাউনলোডের ঝুঁকি থেকে যায়। এই ঝুঁকি এড়াতে এয়ারপ্লেন মোড বেশ কার্যকর।
আরও পড়ুনআপনার ফোনে কেউ কি নজরদারি করছে, বুঝবেন যেভাবে২৪ আগস্ট ২০২৩৪. নজরদারি এড়ানোএয়ারপ্লেন মোড চালু থাকলে ফোনের ব্লুটুথ, ইন্টারনেটসহ মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ফোনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অবস্থান জানার পাশাপাশি অনলাইন বা দৈনন্দিন কার্যক্রমে নজরদারি করা সম্ভব হয় না।
৫. মনোযোগ বৃদ্ধিপড়াশোনা, কাজ বা ঘুমের সময় বারবার ফোনকল, বার্তা বা নোটিফিকেশন এলে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। আর তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা পড়াশোনার সময় এয়ারপ্লেন মোড চালু করে মনোযোগ বৃদ্ধি করা যায়।
সূত্র: নিউজ ১৮
আরও পড়ুনস্মার্টফোন ধীরগতির? অনুসরণ করুন এই পাঁচ উপায়১৯ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন টওয় র ক ব যবহ র নজরদ র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ
ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু কিছু ব্যাংক খুলেছে। তবে নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে বড় সমস্যায় পড়েছেন গাজাবাসী। নগদ অর্থসংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দুই বছর ধরে গাজায় নির্বিচার হামলায় ঘরবাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক ব্যাংক ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ছয় দিন পর ১৬ অক্টোবর থেকে কিছু ব্যাংক খোলা শুরু করে। এসব ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁদের বেশির ভাগকে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও গাজায় ইসরায়েলের সেনাদের হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫২৭। যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ত্রাণসহ যেকোনো কিছু ঢুকছে ইসরায়েলের নজরদারিতেই।
নগদ অর্থের জন্য মধ্য গাজার নুসেইরাতে ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের বাইরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়ায়েল আবু ফারেস (৬১)। তিনি বলেন, ব্যাংকে কোনো অর্থ নেই। নগদ অর্থের সঞ্চালন নেই। হতাশার সুরে ছয় সন্তানের এই বাবা বলেন, ব্যাংকে এসে কাগজপত্রের লেনদেন করে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
গাজায় খাবার কেনা বা বিভিন্ন পরিষেবার বিল দেওয়ার মতো প্রায় সব দৈনন্দিন লেনদেন নগদ অর্থে করতে হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ইসরায়েলি সেনারা। ফলে সেখানে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের মতো নগদ অর্থও ঢুকতে পারছে না। যদিও যুদ্ধবিরতির পর এখন কিছু কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে।
গাজাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জাইয়্যাব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ব্যাংক খোলা আছে, শীতাতপ যন্ত্রও চালু আছে। কিন্তু ইলেকট্রনিক লেনদেন ছাড়া মূলত আর কিছুই হচ্ছে না। কারণ, কোনো আমানত নেই। তাই নগদ অর্থ তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
আবু জাইয়্যাব বলেন, ব্যাংক যেহেতু নগদ অর্থ দিতে পারছে না, তাই বেতন ক্যাশ করতে মানুষজন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছেন। তাঁদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থের বিনিময়ে বেতন ক্যাশ করতে হচ্ছে।
‘আমরা আর পারছি না’
গাজায় একসময় ব্যাংক লেনদেন এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত জানিয়ে সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি বলেন, ‘এখন ব্যাংকে লেনদেন করতে আপনাকে দুই বা তিন দিন যেতে হয়। একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এত কিছু করে আপনি ৪০০-৫০০ শেকেলের (১২৩-১৫৩ ডলার) মতো তুলতে পারবেন। বর্তমানে অতি উচ্চমূল্যের বাজারে এই অর্থ দিয়ে কী কেনা যায় বলেন? আমরা আর পারছি না।’
নগদ অর্থের ঘাটতি অধিকাংশ গাজাবাসীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও কিছু মানুষ এই সংকটকে জীবিকার উপায় হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। মানাল আল-সাইদির মতো কেউ কেউ ছেঁড়া-ফাটা ব্যাংক নোট জোড়াতালি দেওয়ার কাজ করছেন। এতে তাঁদের রুটি-রুজি জুটছে। ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘কাজ করে আমি দৈনিক ২০-৩০ শেকেল (৬-৯ ডলার) আয় করতে পারি। যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি একটি রুটি, অল্প শিম ও ভাজাপোড়াসহ টুকটাক কিছু কিনতে পারি।’
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় সবজির দাম আকাশছোঁয়া। মানাল আল-সাইদি বলেন, ‘সবজি বা এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ আমি আয় করতে পানি না। আমার যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়।’
নগদ অর্থসংকটে জর্জরিত গাজার অনেক মানুষকে ডিম বা চিনির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক লেনদেনে ভরসা করতে হচ্ছে। এই সংকটে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন।
নগদ অর্থ কখন ব্যাংকে আসবে ঠিক নেই
গাজায় বর্তমানে ত্রাণ সরবরাহ নজরদারি করছে ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর ‘কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি)’ নামের একটি শাখা। কখন বা কীভাবে নগদ অর্থ গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হবে, তা জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
নগদ অর্থের ঘাটতি গাজাবাসীর সংকটকে নানা দিক থেকে আরও নাজুক করে তুলেছে। তাঁবু, খাবার ও ওষুধ কিনতে অনেকে এরই মধ্যে সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন ও হাতের কাছে যে সম্বল ছিল, তা-ও বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু মানুষ টিকে থাকার জন্য বিনিময় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করছেন।
ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী সামির নামরাউতি (৫৩) জানান, এমন কিছু টাকা হাতে আসছে, যা অতিব্যবহারের ফলে চেনার উপায় নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এসব টাকা নিচ্ছেন। নামরাউতির ভাষায়, ‘আমার কাছে নোটের সিরিয়াল নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, ততক্ষণ আমি নোটকে টাকা হিসেবে বিবেচনা করি।’