জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’

টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।

ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’

টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’

আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’

জাতিসংঘের বিশেষ এই র‍্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’

ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইর ন খ ন নজরদ র আম দ র ট জ আই সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া

আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় ব্যাপক সংঘাতপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেছেন ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান সামিয়া সুলুহু হাসান। তিনি প্রায় ৯৮ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছেন।

তবে এ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রেসিডেন্ট সামিয়া তাঁর শীর্ষস্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনী লড়াই থেকে বাইরে রেখেছিলেন। নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতায় ব্যাপক হতাহতের অভিযোগও তুলেছেন বিরোধীরা।

গত বুধবার তানজানিয়ায় ভোট গ্রহণ হয়। স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে। ফলাফলে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট সামিয়া ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আজ শনিবার সামিয়ার শপথ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।

নির্বাচনের পরবর্তী দিনগুলোয় তানজানিয়ায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বড় বড় শহরগুলোয় রাস্তায় বিক্ষোভ হয়। সামিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে না দেওয়া এবং ব্যাপক দমন-পীড়নের অভিযোগে রাজপথে নামে মানুষ।

দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও ভোটের দিন ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা। বিক্ষোভকারীরা সামিয়ার পোস্টার আর ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে, আগুন দেয় সরকারি ভবনে। অন্যদিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রধান বিরোধী দল চাদেমাকেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। গতকাল শুক্রবার দলটির পক্ষ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানানো হয়, নির্বাচনী সহিংসতায় প্রায় ৭০০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের দাবি, হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্য থেকে এ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলছে, নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী তানজানিয়ার অন্তত তিনটি শহরে ঘটা নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ সাবিত কম্বো শুক্রবার আল–জাজিরাকে বলেন, কর্তৃপক্ষ যথাযভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে।

মাহমুদ সাবিত আরও দাবি করেন, বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হয়নি। সরকারের কাছে কোনো বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর তথ্য নেই। বিরোধীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ ৭০০ জনের কথা কোথাও দেখিনি।’

তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির আকস্মিক মৃত্যুর পর ২০২১ সালে তাঁর দল থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন সামিয়া।

আরও পড়ুননামিবিয়ায় প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন নান্দি নাদাইতওয়া০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • গণতন্ত্রের পথে সংকট দেখছেন তারেক
  • এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান
  • ১০০ কোটির সম্পদ, স্বামীর প্রতারণা, ৪৭ বছর বয়সেই মারা যান এই নায়িকা
  • তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
  • গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন জাতির দাবি
  • জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি
  • দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন: আকবর খান