গত বছর বিএনপির আয়-ব্যয় বেড়েছে, উদ্বৃত্ত প্রায় ১১ কোটি
Published: 27th, July 2025 GMT
আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আয় ও ব্যয়—উভয়ই বেড়েছে।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপির মোট আয় ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪২ টাকা। একই সময়ে দলটির ব্যয় ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৮২৩ টাকা।
আজ রোববার ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দলীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেয় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। পরে সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত তথ্য জানান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত বছর বিএনপির আয়ের তুলনায় ব্যয় কম হয়। ফলে অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে। উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ১৯ টাকা। এই অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা আছে।
আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বিএনপির আয় হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা। ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৭০ টাকা।
রুহুল কবির রিজভী জানান, ২০২৪ সালে বিএনপির আয়ের খাতের মধ্যে ছিল জাতীয় নির্বাহী কমিটির মাসিক চাঁদা, বইপুস্তক বিক্রয়, বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের অনুদান, ব্যাংক থেকে অর্জিত সুদ ইত্যাদি।
২০২৪ সালে বিএনপির ব্যয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আর্থিক অনুদান, বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ, পোস্টার-লিফলেট ছাপানো, বিভিন্ন সভার হল ভাড়া, দাপ্তরিক ক্রোড়পত্র ছাপানো, রমজানে ইফতার মাহফিল ও অফিশিয়াল বিভিন্ন খরচ।
নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুযায়ী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিবছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিতে হয়। সে অনুযায়ী, আজ ইসিতে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিল বিএনপি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত বছর বিএনপির আয় কীভাবে হয়েছে, কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য অডিট রিপোর্টে উল্লেখ আছে। গণতান্ত্রিক পথে হাঁটার যে প্রক্রিয়া, তা অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশনে এসে বিএনপি আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন। এ জন্য যাবতীয় যে কাজ করা দরকার, তা তাঁরা করবেন। এখন পর্যন্ত সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের যে স্বাধীনতা রয়েছে, সেই বিধানগুলো প্রয়োগ করে নির্বাচনকে বানচাল অথবা যেকোনো গভীর ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে কমিশন সাহসী ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করে বিএনপি।
আরও পড়ুনবিএনপির আয়–ব্যয় দুটোই কমেছে২৯ জুলাই ২০২৪মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো ততটা উন্নত হয়ে ওঠেনি বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, তবু মানুষের মধ্যে যে আশা জেগে উঠেছে, অন্তত শেখ হাসিনার দুর্বৃত্তায়নে তারা আর নিপীড়িত হবে না, নির্বাচন কমিশন সেই গুরুদায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দল ও মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠবে বলে তাঁরা প্রত্যাশা করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনবিরোধী, তারা বসে নেই। নানাভাবে চক্রান্ত করে তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় মেতে উঠেছে। এসব বিষয় চিহ্নিত করে অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি এখনো যে সময় আছে, সে সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দীর্ঘ ১৬ বছর নিপীড়নের শিকার দলগুলো যে আস্থা রেখেছে, তারা এখন সেই আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ প্রদর্শন করবে, যাতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে কোনো ভয় না পায়।
বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, বিএনপি নেতা আমিনুল হক প্রমুখ।
আরও পড়ুন বিএনপির আয়–ব্যয় দুটিই বেড়েছে৩০ জুলাই ২০২৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ