‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।

গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।

সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।

তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।

বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে.

ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।

পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।

সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গাজাবাসীর জন্য তাঁরা জাহাজে এনেছিলেন ত্রাণ, ধরে নিয়ে গেল ইসরায়েল

অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) জাহাজ ‘হান্দালাকে’ বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, জাহাজটির আরোহীদের ‘অপহরণ’ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় জাহাজটি গাজা উপকূল থেকে প্রায় ৪০ নটিক্যাল বা ৪৭ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল।

বিবৃতিতে এফএফসি জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজটিতে থাকা সব ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে জাহাজটির সঙ্গে সংস্থাটির আর কোনো যোগাযোগ নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, হান্দালা নামের জাহাজটি গাজাবাসীর জন্য ‘জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী’ নিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে শিশুখাদ্য, ডায়াপার, খাবার, ওষুধ ছিল। ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজটির আরোহীদের অপহরণ করে নিয়ে গেছে। জব্দ করা হয়েছে জাহাজে থাকা মালপত্র। গাজা উপকূল তথা ফিলিস্তিনের জলসীমার বাইরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।

জাহাজটিতে ১০টি দেশের মোট ২১ জন ছিলেন বলে জানিয়েছে এফএফসি। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন অধিকারকর্মী। অন্য দুজন আল–জাজিরার সাংবাদিক।

এদিকে গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজকে বাধা দেওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এ ঘটনাকে ‘জলদস্যুতা’ হিসেবে উল্লেখ করে এ জন্য নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

আরও পড়ুনত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ থেকে আটক ৬ অধিকারকর্মীকে ছাড়ল ইসরায়েল১৩ জুন ২০২৫

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘আমরা জাহাজে থাকা অধিকারকর্মীদের নিরাপত্তাহীনতার জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে দায়ী করি। সেই সঙ্গে গাজায় অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত এসব ত্রাণবাহী জাহাজের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দিতে আহ্বান জানাই।’

আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মীদের সাহসের প্রশংসা করে বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘ইহুদিবাদীদের হুমকি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের (অধিকারকর্মীদের) বার্তা আমাদের জনগণ ও বিশ্বের কাছে পৌঁছেছে।’

আরও পড়ুন:
ম্যাডলিনের পর এবার ত্রাণ নিয়ে গাজার পথে ফ্লোটিলার নতুন জাহাজ হান্দালা

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজে কারা আছেন, এতে কী ত্রাণ আছে০৫ জুন ২০২৫আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজে কারা আছেন, এতে কী ত্রাণ আছে০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা ২৬ বছর কারাভোগ, ৬০ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে ‘শিবির’ নাছির
  • গাজাবাসীর জন্য তাঁরা জাহাজে এনেছিলেন ত্রাণ, ধরে নিয়ে গেল ইসরায়েল
  • চাঁদার জন্য অপহরণ-নির্যাতনের মামলাকে ‘প্রশাসনের প্রেসক্রিপশন’ বললেন রাজশাহীর যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা
  • এই ভূখণ্ডের একরোখা বৈষম্যের ইতিহাস