ধনখড়–বৃত্তান্তে মোদির বার্তা, ‘অতি বাড় বেড়ো না...’
Published: 29th, July 2025 GMT
এভাবে অসম্মানিত হয়ে ভারতের কোনো উপরাষ্ট্রপতিকে বিদায় নিতে হয়নি। জগদীপ ধনখড়ের আগে দুজন উপরাষ্ট্রপতিপদে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ভি ভি গিরি, ১৯৬৯ সালে এবং ১৯৮৭ সালে রামস্বামী ভেঙ্কটরামন। দুজনেই পদত্যাগ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হবেন বলে। দুজনেই জিতেছিলেন। জগদীপ ধনখড় পদত্যাগ করলেন, কারণ, তাঁকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সম্পর্ক এতটাই বিষিয়ে গিয়েছিল যে, এই প্রথম কোনো উপরাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনার আয়োজনটুকুও হলো না! নীরবে চলে যেতে হলো তাঁকে।
এই অপসারণ আরো একবার প্রমান করল, নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে ভারতের সাংবিধানিক পদ ও প্রতিষ্ঠান কীভাবে স্বকীয়তা হারিয়ে আজ্ঞাবহ ও অনুগত হয়েছে। ভয়ে অথবা ভক্তিতে। উপরাষ্ট্রপতি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। সেই পদাসীনের এভাবে অসম্মানিত অপসারণ আরো ভয়ংকরভাবে এই বার্তা ছড়িয়ে দিল যে, ‘কর্তার’ রোষানলে পড়লে কারো রেহাই নেই।
জগদীপ ধনখড় পদত্যাগপত্রে ভগ্নস্বাস্থ্যের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তা বিশ্বাসযোগ্য ও প্রশ্নাতীত নয়। ২১ জুলাই, রাত নটায়, আগে থেকে না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে তিনি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন। অথচ সেদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তাঁর জয়পুর সফর সূচি জানানো হয়। সেদিন সকালেই সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হয়।
আরও পড়ুনভারত বলছে মোদিই ভারত নয়০৯ জুন ২০২৫বেলা এগারোটায় তিনি রাজ্যসভা পরিচালনা শুরু করেন। সাড়ে বারোটায় সভার আলোচ্যসূচি স্থির করার কমিটির (বিএসি) বৈঠকে উপস্থিত হন। একটার সময় সেই বৈঠক স্থগিত হয়, ঠিক হয় বিকেল সাড়ে চারটেয় আবার বিএসির বৈঠক বসবে। সাড়ে চারটের বৈঠকে ‘কিছু না জানিয়ে’ অনুপস্থিত থাকেন রাজ্যসভার নেতা জেপি নাড্ডা ও সংসদীয়মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তার আধ ঘন্টা পর বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার অপসারণের (ইমপিচমেন্ট) জন্য বিরোধীদের আনা প্রস্তাব ধনখড় গ্রহণ করেন ও তা কার্যকর করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সারাটা দিন শরীর খারাপের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তা হলে? সোমবার বেলা একটা থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এমন কিছু ঘটে যা বাধ্য করে উপরাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে। সেই সময়েই তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ইস্তফা না দিলে শাসকেরাই তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে।
সেটাই ছিল উপরাষ্ট্রপতির কফিনের শেষ পেরেক। মাত্র ছয় মাস আগে, গত ডিসেম্বরে, তিতিবিরক্ত বিরোধীরা ধনখড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। পদ্ধতিগত ত্রুটি দেখিয়ে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং তা খারিজ করেন। ধনখড় বুঝেছিলেন, সরকারপক্ষ অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তা খারিজ হবে না। কাজেই সরে যাওয়া মঙ্গল। অজুহাত ভগ্নস্বাস্থ্য।
নরেন্দ্র মোদি ও জগদীপ ধনখড়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপর ষ ট রপত র ষ ট রপত প রস ত ব পদত য গ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ