খেলতে যাওয়া শিশুর লাশ মিলল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত টয়লেটে
Published: 30th, July 2025 GMT
বিকেলে বাড়ি থেকে খেলতে বের হয়েছিল শিশু আল হাবিব (৬)। এর পর থেকেই আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তার। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাতে শিশুটির লাশ পাওয়া গেছে বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি পরিত্যক্ত টয়লেটে।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের শিলাইকুঠি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতেই লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় তেঁতুলিয়া মডেল থানার পুলিশ।
নিহত শিশু আল হাবিব শিলাইকুঠি এলাকার আশরাফুল ইসলাম ও হ্যাপি আক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান। শিশুটিকে শ্বাস রোধ করে হত্যার পর পরিত্যক্ত টয়লেটে ফেলে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
নিহত শিশুর পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক হোসেন বলেন, গতকাল বিকেলে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলতে বাড়ি থেকে বের হয় শিশু হাবিব। এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও সে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত আটটার পর বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনের একটি টয়লেটে (দরজা ছাড়া) জমিয়ে রাখা ইটপাথরের ওপর শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পান স্বজনেরা। এ সময় শিশুটির পরনের শার্ট পেঁচিয়ে গলায় বাঁধা ছিল। পরে স্থানীয় লোকজন তেঁতুলিয়া মডেল থানার পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল শেষে দিবাগত রাত ১২টার দিকে থানায় নিয়ে যায়।
ইউপি চেয়ারম্যান তারেক হোসেন আরও বলেন, শিশুটির বাবা আশরাফুল ইসলাম একসময় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। প্রায় দুই বছর আগে কাজ করার সময় বিদ্যুতের খুঁটি থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। তখন থেকে পা ভেঙে প্রায় অচল হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন আশরাফুল। এ কারণে পরিবারটি খুবই অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছে।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুসা মিয়া আজ বুধবার সকালে বলেন, শিশুটির লাশ উদ্ধারের সময় তার গলা একটি শার্ট দিয়ে প্যাঁচানো ছিল। এ ছাড়া মাথার পেছন দিকে একটি আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে শ্বাস রোধ করে হত্যার পর সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে। রাতেই লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: টয়ল ট
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।