সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
Published: 30th, July 2025 GMT
শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওত পেতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্তে দেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের যাত্রাপথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে সবাইকে বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকার সাভারে শ্রমিক-ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এ ‘নারকীয় আশুলিয়া স্মরণে’ আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার বিকেলে সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সমাবেশে বলেন, জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে এই সাভার–আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। হত্যা করে শ্রমিকদের লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, লাশের সঙ্গে এমন নির্মমতা, মনে হয় কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টের পতনের দিন, সাভার আশুলিয়ায় গণহত্যা চলেছিল, মানুষের ওপর গণহত্যা চলেছিল।
জনগণ একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ হটিয়ে রাষ্ট্র রাজনীতিতে জনগণের অধিকার, আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায়, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায় তাঁরা (শহিদেরা) আত্মত্যাগ করেছেন। আজ যদি শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষ জানতে চায়, সেই শহীদদের আত্মা যদি জানতে চায়, গণ–অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি শ্রমজীবী মানুষ শাহাদাত বরণ করেছে; কিন্তু বর্তমানে সরকারে ও প্রশাসনে শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের অবস্থান কি? পলাতক ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কারের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, সেখানেই বা তাদের প্রতিনিধিত্ব কোথায়?
তারেক রহমান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে নির্বাচন। প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজের কথা নিজে বলতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার স্বার্থে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অগ্রাধিকার দেয়। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন প্রতিটি স্তরে জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেলে রাষ্ট্র ও সরকারে জনগণের ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন, স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকার—প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পক্ষে। কিন্তু এসব নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছে কি না, এটি একটি বিরাট প্রশ্ন এই মুহূর্তে জনগণের সামনে।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের সন্তান, স্বজনের মৃত্যু দেশ এবং জনগণকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। দেশ আপনার শহীদ সন্তানের কাছে ঋণী, প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সাভার আশুলিয়া কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।’
বুধবার বেলা তিনটায় আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকার দারুল ইহসান মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির এ জনসভা শুরু হয়। সভার শুরুতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণ–অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের উপস্থিত পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেন।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, এমন কিছু করবেন না, যাতে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যে অবস্থায় আবার সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোনো সুযোগ পায় দেশে ফিরে আসার।’
গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা ও আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আহত ও শহীদ, বিশেষ করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেবে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করবে। কিন্তু সেটি কতটুকু বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেটি আমি জানি না।’
ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্বরোচিতভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। গোটা জাতি শেখ হাসিনার বিচার চায় বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন এবং সেখান থেকে অডিও–ভিডিও ভার্সনে এ দেশে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য, বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। গোপালগঞ্জে ইতিমধ্যে তাঁরা (আওয়ামী লীগ) সেটি তৈরিও করেছে। জাতিকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি), চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সহসভাপতি খন্দকার শাহ মইনুল হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান মোহনসহ সাভার ও ধামরাই উপজেলা এবং এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ন ত র ক রহম ব এনপ র স র জন ত ক শ রমজ ব র সদস য সরক র র জনগণ র পর ব র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
বর্তমান সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করে, সংকট উত্তরণে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চলার নীতি বাদ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি দলের শীর্ষনেতারা। তারা বলেছেন, সরকার শুরু থেকে জনগণ বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার কথা না ভেবে, কখনও বিএনপি, কখনও জামায়াত, কখনও এনসিপির চাপে সিদ্ধান্ত বদল করেছে, বর্তমান সংকটের এটাও একটা বড় কারণ।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এবি পার্টি ও আপ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘স্বল্প আস্থার সমাজে সংস্কার ও নির্বাচনী ঐক্যের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।
প্রধান আলোচক অধ্যাপক মুশতাক হোসেন বলেন, ‘‘সমাজকে পরিবর্তন করতে যে জাতি জীবন দিতে পারে সেই জাতি অনেক শ্রদ্ধার। নতুন বন্দোবস্ত চুক্তি করে হয় না, কারণ কায়েমি স্বার্থবাদীরা নতুন বন্দোবস্ত মেনে নেয় না। তবে নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’’
ইংল্যান্ডের টরি পার্টির বিরুদ্ধে দুর্বল রাজনৈতিক দলগুলোর বিপ্লবের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেখানেও সমঝোতা হয়নি, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছিল।’’ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অনুসন্ধান চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায় তারা উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষ সব জায়গা দখলের পদ্ধতি জানে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আস্থার অভাবে ঝগড়া করে এদেশে রাজনৈতিক দলগুলো সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথচ আস্থাশীল হলে সবাই লাভবান হতে পারত। এ দেশের মানুষের সহজে ক্ষমা করে দেয়ার প্রবণতার কারণে আওয়ামী লীগ বেচে গেছে। স্বার্থবাদী দলগুলো 'ভাইভাই রাজনীতি' করে বলেই স্বৈরাচার আর ফ্যাসিস্ট বারবার আসে।’’
অপরাধ করলে কোন না কোনভাবে শাস্তির ব্যবস্থা থাকতেই হবে জানিয়ে অধ্যাপক মুশতাক বলেন, ‘‘আস্থাহীনতা কমাতে হলে সামাজিক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে যেন অপরাধ করলে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। অনিয়ম করলে তাকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়ভাবে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘সকল শ্রেণী পেশার মানুষের আস্থা অর্জন কঠিন হলেও নিজেদের মধ্যে আস্থা বজায় রাখতে হবে এবং চোরদের সাথে কখনো আপোষ করা যাবে না। যারা আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল তাদের কোন না কোনভাবে বিচার বা ক্ষমা চাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
ঐক্যমত্য বা নতুন সংবিধান এখনি না হলেও লড়াই চালিয়ে গেলে জনতা পাশে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে হাসনাত কাইউম বলেন, ‘‘অনেক মতদ্বৈততা থাকলেও দেশের প্রশ্নে এক হয়ে নতুন রাজনীতির জন্য কাজ করতে হবে। এখনি রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। হাসিনা-ওবায়দুল কাদেররা সাংবিধানিক পদ্ধতি এমনভাবে সাজিয়েছে তার মধ্যেই ফ্যাসিস্ট হওয়ার উপাদান নিহিত আছে। অতীতে জনগণের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারার কারণে সফলতা এসেছে। এবার আন্দোলনের নেতৃত্বকে কিছু বুড়ো মানুষ ভুল পথে পরিচালিত করেছে, এবং টাকাওয়ালাদের কাছে নিয়ে গেছে, ফলে রাষ্ট্রের সংস্কার আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’’
পুরোনো পথে নতুন বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন হবে না। তিনটি দলের এই আয়োজন দল ও ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নয় বলেও জানান তিনি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘‘বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ কথায় কথায় সংবিধানের রেফারেন্স দেন, এটা ভালো। তবে তার কাছে প্রশ্ন- ফ্যসিস্ট হাসিনা সংবিধানের কোন আর্টিকেলের আলোকে আপনাকে গুম করে বিনা ভাড়ায় বিনা টিকিটে শিলংয়ে নিয়ে গিয়েছিল? আমাদের জানতে ইচ্ছে করে।’’
এবি পার্টি শক্তিশালী হলে তার লোকেরা পাবলিক টয়লেট ইজারা নেবে না এমন গ্যারান্টি নাই মন্তব্য করে মঞ্জু বলেন, এই সংস্কৃতি বদলানোর জন্যই নতুন রাজনীতি দরকার। নতুন রাজনীতি দাঁড়াতে না পারার কারণ খোঁজার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূসের সরকার তিন দলের চাপে পড়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘জনগণের জন্য যা ভালো সেটা করতে হবে; কোনো দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়।’’ জনগণের কথা না শোনায় উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'আপনাদের কিছুদিন পর জনগণের কাতারে আসতে হবে।'
সরকারের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, এক-দুইটা রাজনৈতিক দলের মন যুগিয়ে চললে জুলাই শহীদ এবং আহতদের কাছে আজীবন ভিলেন হিসেবে অভিশাপ পেতে হবে।
আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, হাসিনার হাতে ভেঙ্গে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শক্তিগুলি ক্ষমতা ভোগের উৎসবে মেতেছে। ভোট কেন্দ্র দখলে অভ্যস্ত এবং বিপ্লব বিরোধীরা ক্ষমতায় আসলে জনগন আবারো হতাশ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
জনগণকে অন্ধকারে রেখে চেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জনগনের রাষ্ট্র গঠন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি করা উচিৎ বলে মত দেন তিনি। গণভোটে দুইটা ব্যালট রাখার প্রস্তাব আবারো তুলে ধরেন তিনি। সংস্কার প্রশ্নে জনগণকে সাথে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন তিনি।
শহিদ উদ্দিন স্বপন বলেন, আইনের শাসন না থাকা এবং বৈষম্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সমাজ বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি হলেও রাজনৈতিক নেতাদের পুরোনো চিন্তাচেতনার কারণে মানুষ আশাহত হয়েছে। যেটুকু অগ্রগতি গত ১৫ মাসে হয়েছে তাকে ভিত্তি ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।
সৈয়দ হাসিব উদ্দিন বলেন, এই মুহুর্তে চরম দুর্বল অবস্থায় আছে বাংলাদেশ, এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এই অবস্থার মোকাবেলায় নির্বাচন জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে গরম বক্তব্য না দিয়ে জনগনকে সাথে নিয়ে সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে।
অধ্যাপক আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, আমাদের দেশের সর্বস্তরে আস্থার প্রচণ্ড সংকট, এটি দূর করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের কাছে পরীক্ষা দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জীবিত থাকতে আওয়ামী লীগ এদেশে রাজনীতি করবে সেটি হতে পারে না। অহমিকা ছেড়ে সব দলকে ঐক্যের পথে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ডায়নোসর অনেক বড় ছিল কিন্তু আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
আরেফিন মো. হিজবুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে শেখ মুজিবের ছবি টানানো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাঠামোগত ফ্যাসিবাদ সংকটকে তরান্বিত করছে। যেসব জায়গায় ফ্যাসিবাদ তৈরি হওয়ার আশংকা আছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
দিদার ভুইয়া বলেন, ছেড়া 'স্যান্ডেল থেকে ফাইভস্টার হোটেল কোন বিপ্লবীর চরিত্র হতে পারে না।' রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আস্থাহীনতা বর্তমান সংকটের অন্যতম কারণ। উচ্চকক্ষে পিআর না মেনে বিএনপি নিজেদের ক্ষতি করছে। এমনকি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা তৈরি হচ্ছে।
ব্যারিস্টার জোবায়ের বলেন, প্রশাসনে নিজস্ব লোক সেট করতে ব্যস্ত তিন দল অথচ টেকসই রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য রাজনৈতিক ইকো সিস্টেম জরুরি।
সভায় তিন দলের ঐক্যবদ্ধ পথ চলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
রাইজিংবিডি/নঈমুদ্দীন নি