মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি
Published: 31st, July 2025 GMT
এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কারের সব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। এর মধ্যে দলগুলোর ঐকমত্যের দলিল বা জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা করার দাবি উঠেছে। ফলে আজ বৃহস্পতিবার সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে ছয়টি কমিশনের যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে। ৩১ জুলাইয়ের (আজ বৃহস্পতিবার) মধ্যে এই সনদ তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। গত সোমবার দলগুলোকে সনদের একটি খসড়াও দেওয়া হয়েছিল। তবে সে খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দলের আপত্তি আছে। গতকাল বুধবার ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি তুলেছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি।
আপনারা যে দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন, তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমরা চেষ্টা করছি এসব বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে।আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনগতকাল দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল সাতটি বিষয়। সেগুলো হলো ১.
এর মধ্যে গতকাল পুরোপুরি ঐকমত্য না হলেও রাত নয়টার দিকে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ঐকমত্য কমিশন। আর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে দলগুলোকে একটি ধারণাপত্র দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি, এমন কয়েকটি বিষয়ে আজ ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
৩১ জুলাইয়ের (আজ বৃহস্পতিবার) মধ্যে এই সনদ তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। গত সোমবার দলগুলোকে সনদের একটি খসড়াও দেওয়া হয়েছিল। তবে সে খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দলের আপত্তি আছে।সংস্কার নিয়ে ১০ মাসগত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে আইনবিধি সংস্কার করে বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন সম্ভব, এমন অনেক সুপারিশকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে। অন্যদিকে ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন।
প্রথম পর্বে ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পৃথক আলোচনা করে কমিশন। প্রথম পর্বে ঐকমত্য হয়নি, এমন ২০টির মতো মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গত ৩ জুন থেকে সব দলকে একসঙ্গে নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। সংস্কারের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাবগুলোকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে এখন পর্যন্ত ১৩টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল প্রথম পর্বে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার একটি তালিকা দলগুলোকে দেওয়া হয়। সেখানে মোট ৬২টি বিষয় এবং কোন প্রস্তাবে কয়টি দল একমত হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলোর বেশির ভাগই বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রয়েছে ৬টি।
এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৮টি সুপারিশ রয়েছে। যদিও এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। যেমন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন। এ বিষয়ে ৩০টি দল প্রথম পর্বে একমত হলেও গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি।
গতকাল রাতে বৈঠকের বিরতিতে কমিশনের প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন কমিশনের সদস্যরা। পরে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে অগ্রগতি জানানো হয়েছে। তিনি কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ১৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
গতকাল প্রথম পর্বে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার একটি তালিকা দলগুলোকে দেওয়া হয়। সেখানে মোট ৬২টি বিষয় এবং কোন প্রস্তাবে কয়টি দল একমত হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলোর বেশির ভাগই বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রয়েছে ৬টি।যেসব বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্তদ্বিতীয় পর্বে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন বিষয়ের মধ্যে রয়েছে এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন; সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন; সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান; হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ ও পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর; সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি; জরুরি অবস্থা জারিসংক্রান্ত; প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; ইসি গঠনপদ্ধতি সংবিধানে যুক্ত করা হবে; পুলিশ কমিশন গঠন; প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয়েছে, একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না, এ প্রস্তাবে তিন-চতুর্থাংশ দল একমত এবং সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব। এগুলোর মধ্যে সেসব বিষয়ে বিএনপিসহ যারা একমত হয়নি, তারা জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে।
ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে ন্যূনতম ৫ শতাংশ বর্ধিত হারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন অব্যাহত থাকবে। এটিও সংবিধানে যুক্ত হবে। সংরক্ষিত নারী আসন ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।নারী আসন নিয়ে যে সিদ্ধান্তসংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০টি থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং সেখানে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছিল সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে ঐকমত্য কমিশন ৫০টি আসন বহাল রাখা এবং ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে ৫-৭ শতাংশ আসনে দলগুলো নারী প্রার্থী দেবে, এমন প্রস্তাব দেয়। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আলোচনা হলেও এ বিষয়ে মতৈক্য হয়নি।
পরে রাতে নারী আসন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের জানান, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করার বিষয়ে প্রায় সব দল একমত হয়েছে, যদিও দু-একটি দলে এতে দ্বিমত রয়েছে। কিছু দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ১০০ আসনে উন্নীত করার পক্ষে, আবার কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের পক্ষে।
সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলী রীয়াজ জানান, সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রাখা হবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বিদ্যমান ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ন্যূনতম ১০ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এটিও সংবিধানে যুক্ত হবে।
ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে ন্যূনতম ৫ শতাংশ বর্ধিত হারে নারী প্রার্থী মনোনয়ন অব্যাহত থাকবে। এটিও সংবিধানে যুক্ত হবে। সংরক্ষিত নারী আসন ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্বরাতে আলী রীয়াজ জানান, কমিশন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিষয়ে একটি সাধারণ ধারণাপত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে বিবেচনার জন্য দিয়েছে। কমিশন প্রস্তাব করেছে যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়াই নিয়োগ দিতে পারেন। আজ আলোচনার মাধ্যমে এটি নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি আশা করেন।
মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে এখনো যেখানে আপত্তিসাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জোরালো আপত্তি আছে বিএনপির। তারা এ–সংক্রান্ত বিধান সংবিধানে যুক্ত না করে আইনের মাধ্যমে নিয়োগ করার পক্ষে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও উচ্চকক্ষের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা আছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে অর্থাৎ সারা দেশে একটি দল যত ভোট পাবে, তার অনুপাতে তারা উচ্চকক্ষে আসন পাবে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল এই প্রস্তাবে একমত। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের এতে আপত্তি আছে। উচ্চকক্ষের ক্ষমতা কী হবে, তা নিয়েও মতভিন্নতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে কমিশনকে একটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার ভার দেওয়া হয়েছিল। তবে গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি।
রাষ্ট্রের মূলনীতি প্রশ্নেও দলগুলো মোটাদাগে বিভক্ত। সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব নিয়েও এখন পর্যন্ত সেভাবে আলোচনা হয়নি। রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি।
অবশ্য গতকাল দুপুরে আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনারা যে দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন, তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমরা চেষ্টা করছি এসব বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে এবং আগামীকালের মধ্যেই আপনাদের অবহিত করতে পারব।’
বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার দাবিগত সোমবার দলগুলোকে জুলাই জাতীয় সনদের একটি খসড়া দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, এই সনদের অন্তর্ভুক্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে অঙ্গীকার করবে রাজনৈতিক দলগুলো।
গতকাল ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, খসড়ায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, তা দেখে তিনি বিস্মিত ও খুব হতাশ হয়েছেন। তিনি জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলাদাভাবে আলোচনা করার দাবি জানান। তিনি বলেন, যদি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না থাকে, তাহলে এসব সিদ্ধান্তের এক পয়সা দাম আছে বলে তিনি মনে করেন না। সে ক্ষেত্রে এত দিন যা হয়েছে, তা সময়ের অপচয়।
এ বিষয়ে আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ঐকমত্য কমিশন অনুমতি দেয়নি। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন।
রাতে আলোচনার শেষ পর্যায়ে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন আবারও এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কার বাস্তবায়নের ছয়টি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছিল। এটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। তবে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন আগে সনদের প্রক্রিয়া শেষ করতে চায়। বাস্তবায়নের পথ নিয়ে এখন আলোচনায় যাচ্ছে না কমিশন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত র ক ষমত স স ক র প রস ত ব ও স দ ধ ন ত হয় স রক ষ ত ন র ঐকমত য হয়ন প রথম পর ব ঐকমত য হয় ন প রস ত ব জ ল ই সনদ জ ত য় সনদ দল একমত র লক ষ য ম হ ম মদ দলগ ল ক ন য নতম গতক ল প দলগ ল র ল একমত ত হয় ছ ন ত কর জ বল ন হয় ছ ল সরক র এনস প ইসল ম আপত ত র একট সনদ র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত
জুলাই সনদের খসড়াকে অসম্পূর্ণ বলেছে জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকারকে দুই বছরের মধ্যে এই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে বিপজ্জনক বলেছে দলটি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এটি অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। আজকে তারা বলছে, এটা একটা নমুনামাত্র, ভুল হয়েছে। যদি সেটাই হয়, তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। তবে যদি সেটাই মূল কথা হয়, তাহলে একে গ্রহণ করা যাবে না।’
জামায়াত নিজস্ব একটি খসড়া সনদ তৈরি করছে এবং কমিশনে জমা দেবে বলে জানান তাহের। তিনি বলেন, ‘সংলাপে যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।’ তিনি প্রস্তাব করেন দুটি পথ—১. অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত পার্লামেন্টে তা অনুমোদন। ২. গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা যেকোনো একটি পদ্ধতিতে এই কাঠামোকে আইনগত বৈধতা দিতে চাই।’ তিনি জানান, তাঁরা ঐকমত্যের পক্ষে কিন্তু সেটা হতে হবে কার্যকর এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে হতে হবে। অন্যথায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ‘অনিশ্চয়তার দিকে’ চলে যেতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে বলে জানান জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হতে হবে, এখানে প্রায় সবাই একমত, একমাত্র বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। এঁরা ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান নির্বাচন করবেন।
যদি একমত না হন, তাহলে প্রথমে সর্বসম্মতভাবে, পরবর্তী সময়ে এক চয়েস ভোট, তারপর প্রয়োজনে র্যাংক চয়েস ভোটিং পদ্ধতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। এ পদ্ধতিতে ভোটার হবেন মোট সাতজন—ওপরে উল্লিখিত পাঁচ সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের একজন করে বিচারপতি।
জামায়াতের এ নায়েবে আমির বলেন, ‘বিচারপতি দুজন যুক্ত করা হয়েছে যেন এককভাবে তৃতীয় দল বা অন্য কেউ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর না হয়ে যায়। আমরা আশা করি, বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকবেন এবং হর্স ট্রেডিংয়ের আশঙ্কা কমবে।’ তিনি জানান, বিএনপির আপত্তি মূলত এই যে—যদি ঐকমত্য না হয় তাহলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল মনে করে সংসদে পাঠালে তা আর সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে না।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সংসদে পাঁচ-ছয়টা দল আছে, অথচ এই বডিতে ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’
আজকের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. আইয়ুব মিয়া।