আমাদের কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে মানুষ: মির্জা ফখরুল
Published: 31st, July 2025 GMT
জনগণ বিএনপির কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এসে ভিড় করছে লোকজন, যে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আগে তো এমপি ছিল, মেয়র ছিল, তাঁরা কথা বলতে পারত, এখন কিন্তু তারা কথা বলতে পারছে না। এই যে বিষয়টা, এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’
সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন সাধারণ চেতনার মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেটা হয় না। কারণ, আমাদের বাংলাদেশে এখন একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে যে লিবারেল ডেমোক্রেসিকে এখন কিছুটা নিচে নেমে যেতে হচ্ছে। একটু পরাজিত হতে হচ্ছে পপুলিস্টদের কাছে রিসেন্ট টাইমে। এটা বাস্তবতা। এটা কেন হচ্ছে, গবেষকেরা বলতে পারবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে মুক্তি পেয়েছি ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ কলোনি থেকে। তারপরে পাকিস্তানি গোলামি শুরু হয়, তারপর বাংলাদেশি প্রভুদের গোলামি শুরু হয়েছে। এই গোলামিতেই আছি আমরা। আমরা একটা মুক্ত সমাজ চাই, আমরা একটা মুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, আমরা মানুষের মধ্যে মানুষের ভালোবাসা তৈরি করতে চাই।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় পাঁচজন হত্যার ঘটনার স্মরণে গতকাল বুধবার বিএনপি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব। গণ–অভ্যুত্থানে স্বামী হারানো এক নারীর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সেই অনুষ্ঠানে এক মা তাঁর ১৪ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে এসে বলেন, ‘আমার স্বামীকে এখানে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমি জানি না, এই শিশুকে নিয়ে এখন কী করে বাঁচব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বোনের কথা যখন আমি শুনি, তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে, আসলে রাষ্ট্রটা কী? রাষ্ট্র কার জন্য? যাঁরা এখন দায়িত্বে আছেন রাষ্ট্র পরিচালনার, তাঁরা এই এক বছরেও কি তাঁদের খুঁজে পেলেন না?’
২০২৪ সালের আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানের পর পল্টনে বিএনপির সভা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তখন আমার খুব সমালোচনা হয়েছিল। আপনারা বলেছিলেন যে বিএনপি ও মির্জা ফখরুল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এত অস্থির হয়ে গিয়েছে কেন? এখন আপনারাই বলছেন যে ব্যাপারটা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, যার শক্তি, যার ক্ষমতা, যার মালিকানা, তার হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এরই মধ্যে ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলেন মির্জা ফখরুল। বাকি বিষয়েও ঐকমত্যে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা–ছোড়াছুড়ি হলেও সেটার একটা সীমা থাকা দরকার বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোয় পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। সেটা না হলে এই কাদা–ছোড়াছুড়ি ভবিষ্যতে রাজনীতিকে আরও কলুষিত করে।
আলোচনা সভায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে নির্যাতিত পাঁচ সম্পাদককে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, উত্তরায় শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন ও জুলাই শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জুলাই বাংলাদেশ’ নামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফখর ল ইসল ম অন ষ ঠ ন র রহম ন আম দ র র জন য ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের প্রয়োজনে না এলে সেই সংস্কার কাজে আসবে না: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম যদি মানুষের প্রয়োজনে না আসে, শিশুদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে না পারে, শিশুদের জন্য নিরাপদ জীবন গড়ে দিতে না পারে, তাহলে সে সংস্কার কোনো কাজে আসবে না।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ মাঠে ‘গণতান্ত্রিক পদযাত্রায় শিশু’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
আমরা বিএনপি পরিবার আর মায়ের ডাক যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে গুমের শিকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া শিশুদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শিশুদের (গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্তান) পুনর্বাসনের জন্য একটি স্পেশাল সেল গঠন করবে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কাজটি হয়নি। আশা করব, দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার তাদের জন্য কিছু করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘একটি কমিশন করা হয়েছে। এই কমিশন এখন পর্যন্ত একটা রিপোর্ট নাকি করেছে। কিন্তু তাদের এই যে খোঁজ করা, এ বিষয়ে খুব বেশি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না।’
গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানে এলে ‘ভারাক্রান্ত হন’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ পরিবারগুলো যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, আমরা কিন্তু সেই ত্যাগ অনেকেই করতে পারিনি। যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে শিশুদের বলতে শুনি যে আমি আমার বাবাকে দেখতে চাই, বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চাই, ঈদের মাঠে নামাজ পড়তে যেতে চাই, তখন আমি আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’
গুমের শিকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া শিশুদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ মাঠে, ২৯ জুলাই