বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেছেন, ‘আমি চেষ্টা করেও আর নিজের চাহিদা দমন করতে পারছি না। একাকিত্ব, চারপাশের প্রলোভন আর নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব আমাকে ধীরে ধীরে কষ্ট দিচ্ছে।’

শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘আমি অন্যায় কিছু করিনি, করতেও চাই না। তবে তাঁর প্রবল আকাঙ্ক্ষা আমার ওপর ভর করেছে। আমি জানি, পাপ সম্পর্কে রাসুল (সা.

) কতটা কঠোর সাবধানবাণী দিয়েছেন। আমি জান্নাত পেতে চাই। কিন্তু এই চাপ আর নিতে পারছি না।’

আর নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্টের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।সুরা বালাদ, আয়াত: ৪

তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দে একজন তরুণ মুসলিমের গভীর সংকট, আত্মসংযমের চেষ্টা ও একটি পরিচ্ছন্ন জীবনের আকাঙ্ক্ষা ধরা পড়ে। আমাদের সমাজে এই বাস্তবতা নতুন নয়, কিন্তু খুব কমই প্রকাশ্যে আলোচনা হয়।

ইসলাম মানব প্রকৃতিকে অস্বীকার করে না। বরং এর মধ্যেই পবিত্রতা ও সৌন্দর্য খুঁজে নেয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন: ‘আর নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্টের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা বালাদ, আয়াত: ৪)

প্রাকৃতিক চাহিদা থাকা লজ্জার কিছু নয়। বরং সেই চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই একজন মুমিনের পরিণত চেতনার প্রতীক।

আরও পড়ুনহীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে১৭ জুলাই ২০২৫কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন

১. চোখের হেফাজত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চোখ হলো শয়তানের তির।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস ৭৮৭২)

আজকের সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া, ক্যাম্পাস লাইফ এবং অনলাইন পরিবেশে অহরহ যা চোখে পড়ে—তা থেকে বাঁচতে হলে নিজের দৃষ্টি সংযত রাখা জরুরি।

২. যিকির ও তিলাওয়াত: প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ১০ মিনিট মনোযোগ দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন। সকালে ও রাতে কিছু সময় ধিকিরে (যেমন: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) কাটান।

প্রাকৃতিক চাহিদা থাকা লজ্জার কিছু নয়। বরং সেই চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই একজন মুমিনের পরিণত চেতনার প্রতীক।

৩. শরীরিক ব্যায়াম ও রুটিন: দিনে অন্তত ২০ মিনিট হাঁটা, দৌড় বা হালকা ব্যায়াম মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চিন্তা দূর করে। রাতের ঘুম ঠিক রাখে ও মানসিক ভারসাম্য আনে।

৪. নিয়মিত রোজা রাখা: নবীজি (সা.) বলেন: ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। আর যে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে; কেননা, এটি তার জন্য আত্মসংযম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৬৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৪০০)

রোজা শুধু খাবার না খাওয়ার নাম নয়। এটি আত্মশুদ্ধির চর্চা। সময় করে অন্তত সপ্তাহে এক দিন রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

আরও পড়ুনভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ৯ ঘণ্টা আগেবিবাহের চিন্তা ও বাস্তবতা

শুধু কামনার বশবর্তী হয়ে নয়, বরং দ্বীন রক্ষা, ভালোবাসা, দায়িত্বশীলতা ও পরিবার গঠনের ইচ্ছা থেকেই বিয়ে করা উচিত। পরিবার যদি এখন রাজি না হয়, তবে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। অর্থনৈতিক ও আবেগীয় প্রস্তুতি না থাকলে বিবাহ হতে পারে আরও জটিলতা সৃষ্টি করার কারণ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আমি প্রতিদিন আল্লাহর নিকট ৭০ বার (অথবা ১০০ বার) ক্ষমা প্রার্থনা করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭০২)

একটি পাপ বারবার হয়ে গেলে হতাশ হবেন না। বারবার ফিরে আসুন আল্লাহর কাছে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৫০০ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলা শুরু করুন।

আমি প্রতিদিন আল্লাহর নিকট ৭০ বার (অথবা ১০০ বার) ক্ষমা প্রার্থনা করি।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭০২

এ ছাড়া নিয়মিত নিচের কাজগুলোর চর্চা করুন:

চোখ, কান ও অন্তরের সংযম

শারীরিক ব্যায়াম ও নিত্যচর্চা

 রোজা রাখা ও তাহাজ্জুদের অভ্যাস

 ভালো বই পড়া ও আত্মউন্নয়ন

 নফল ইবাদতের মাধ্যমে নিজের হৃদয়কে ব্যস্ত রাখা

 পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা

 তাড়াহুড়ো না করে, ধৈর্য ধরে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি

নৈতিকতাহীন সমাজে আমাদের নানারকম সমস্যা থাকবেই। কিন্তু মনে রাখুন, আপনি একা নন। এই লড়াইয়ে আপনি নিজেই এক সাহসী যোদ্ধা। দোয়া করুন, দোয়া চেয়ে যান। নিজেকে দোষ না দিয়ে বরং ধৈর্য, ইবাদত ও চেষ্টা দিয়ে পথ খুঁজে বের করুন। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ফিতনার যুগে নিরাপদে রাখেন, এবং হালাল ভালোবাসার পথ সহজ করে দেন। আমিন।

 [email protected]

মারদিয়া মমতাজ: শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী

আরও পড়ুনযে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির