প্রলোভনের এই যুগে নিজেকে রক্ষার উপায়
Published: 2nd, August 2025 GMT
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেছেন, ‘আমি চেষ্টা করেও আর নিজের চাহিদা দমন করতে পারছি না। একাকিত্ব, চারপাশের প্রলোভন আর নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব আমাকে ধীরে ধীরে কষ্ট দিচ্ছে।’
শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘আমি অন্যায় কিছু করিনি, করতেও চাই না। তবে তাঁর প্রবল আকাঙ্ক্ষা আমার ওপর ভর করেছে। আমি জানি, পাপ সম্পর্কে রাসুল (সা.
তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দে একজন তরুণ মুসলিমের গভীর সংকট, আত্মসংযমের চেষ্টা ও একটি পরিচ্ছন্ন জীবনের আকাঙ্ক্ষা ধরা পড়ে। আমাদের সমাজে এই বাস্তবতা নতুন নয়, কিন্তু খুব কমই প্রকাশ্যে আলোচনা হয়।
ইসলাম মানব প্রকৃতিকে অস্বীকার করে না। বরং এর মধ্যেই পবিত্রতা ও সৌন্দর্য খুঁজে নেয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন: ‘আর নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্টের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা বালাদ, আয়াত: ৪)
প্রাকৃতিক চাহিদা থাকা লজ্জার কিছু নয়। বরং সেই চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই একজন মুমিনের পরিণত চেতনার প্রতীক।
আরও পড়ুনহীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে১৭ জুলাই ২০২৫কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন১. চোখের হেফাজত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চোখ হলো শয়তানের তির।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস ৭৮৭২)
আজকের সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া, ক্যাম্পাস লাইফ এবং অনলাইন পরিবেশে অহরহ যা চোখে পড়ে—তা থেকে বাঁচতে হলে নিজের দৃষ্টি সংযত রাখা জরুরি।
২. যিকির ও তিলাওয়াত: প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ১০ মিনিট মনোযোগ দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন। সকালে ও রাতে কিছু সময় ধিকিরে (যেমন: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) কাটান।
প্রাকৃতিক চাহিদা থাকা লজ্জার কিছু নয়। বরং সেই চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই একজন মুমিনের পরিণত চেতনার প্রতীক।৩. শরীরিক ব্যায়াম ও রুটিন: দিনে অন্তত ২০ মিনিট হাঁটা, দৌড় বা হালকা ব্যায়াম মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চিন্তা দূর করে। রাতের ঘুম ঠিক রাখে ও মানসিক ভারসাম্য আনে।
৪. নিয়মিত রোজা রাখা: নবীজি (সা.) বলেন: ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। আর যে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে; কেননা, এটি তার জন্য আত্মসংযম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৬৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৪০০)
রোজা শুধু খাবার না খাওয়ার নাম নয়। এটি আত্মশুদ্ধির চর্চা। সময় করে অন্তত সপ্তাহে এক দিন রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আরও পড়ুনভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ৯ ঘণ্টা আগেবিবাহের চিন্তা ও বাস্তবতাশুধু কামনার বশবর্তী হয়ে নয়, বরং দ্বীন রক্ষা, ভালোবাসা, দায়িত্বশীলতা ও পরিবার গঠনের ইচ্ছা থেকেই বিয়ে করা উচিত। পরিবার যদি এখন রাজি না হয়, তবে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। অর্থনৈতিক ও আবেগীয় প্রস্তুতি না থাকলে বিবাহ হতে পারে আরও জটিলতা সৃষ্টি করার কারণ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘আমি প্রতিদিন আল্লাহর নিকট ৭০ বার (অথবা ১০০ বার) ক্ষমা প্রার্থনা করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭০২)
একটি পাপ বারবার হয়ে গেলে হতাশ হবেন না। বারবার ফিরে আসুন আল্লাহর কাছে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৫০০ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলা শুরু করুন।
আমি প্রতিদিন আল্লাহর নিকট ৭০ বার (অথবা ১০০ বার) ক্ষমা প্রার্থনা করি।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭০২এ ছাড়া নিয়মিত নিচের কাজগুলোর চর্চা করুন:
চোখ, কান ও অন্তরের সংযম
শারীরিক ব্যায়াম ও নিত্যচর্চা
রোজা রাখা ও তাহাজ্জুদের অভ্যাস
ভালো বই পড়া ও আত্মউন্নয়ন
নফল ইবাদতের মাধ্যমে নিজের হৃদয়কে ব্যস্ত রাখা
পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা
তাড়াহুড়ো না করে, ধৈর্য ধরে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি
নৈতিকতাহীন সমাজে আমাদের নানারকম সমস্যা থাকবেই। কিন্তু মনে রাখুন, আপনি একা নন। এই লড়াইয়ে আপনি নিজেই এক সাহসী যোদ্ধা। দোয়া করুন, দোয়া চেয়ে যান। নিজেকে দোষ না দিয়ে বরং ধৈর্য, ইবাদত ও চেষ্টা দিয়ে পথ খুঁজে বের করুন। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ফিতনার যুগে নিরাপদে রাখেন, এবং হালাল ভালোবাসার পথ সহজ করে দেন। আমিন।
[email protected]
মারদিয়া মমতাজ: শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী
আরও পড়ুনযে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ মারধরের ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী মো. গোলাম আজম ফয়সাল চিকিৎসা কেন্দ্রেই ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। হামলার পর গুরুতর আহতাবস্থায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।
আরো পড়ুন:
তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
রাবি ছাত্রদলের কমিটি: সভাপতি-সম্পাদকসহ অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা কেন্দ্রের ২৩ নম্বর কক্ষে ফয়সাল ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। প্রথমে একজন বহিরাগত এসে ফয়সালের পরিচয় নিশ্চিত করে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই ৭-৮ জন কক্ষে প্রবেশ করে ফয়সালকে ‘আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি পেয়েছে’ অ্যাখ্যা দিয়ে এবং কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মারধর শুরু করে।
এক পর্যায়ে তারা ফয়সালকে টেনেহিঁচড়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে আসে এবং এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। মারধর শেষে যাওয়ার সময় যারা হামলার দৃশ্য ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা তিনজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী গোলাম আযম ফয়সাল বলেন, “হামলাকারীদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ‘জনি, আর মারিস না’ বলে থামায়। চলে যাওয়ার সময় তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দিয়ে যায়।”
নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকি। খুব আতঙ্কে দিন পার করছি।” হামলাকারীদের কাউকে চেনেন না বলে মামলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি। তিনি বলেন, “ফয়সাল আগে আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে যেত বলে আমরা শুনেছি। এ ঘটনায় আমরা সবাই আতঙ্কিত। কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে আমাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে বহিরাগতরা অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিকভাবে প্রহার করেছে। আমরা জনি নামে একজনের কথা শুনেছি, যার নেতৃত্বে এই হামলা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা পুলিশের সহায়তায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমি মাত্র বিষয়টি জানতে পারছি। এ বিষয়ে প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলব। এছাড়া ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গতকাল পুলিশর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। তারা নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে কাজ করছে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী