রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের কবরের উন্নয়নকাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ ঘটনায় দোষী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার সকালে জুলাই শহীদদের কবর জিয়ারতে রায়েরবাজার কবরস্থানে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তখন তিনি দেখতে পান, জুলাই আন্দোলনে নিহত ১১৪ শহীদের গণকবর ঘিরে চলমান নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঠিকাদারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শহীদদের কবরের ওপর আপনি এ রকম দুর্নীতি করছেন!’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়ে কবরস্থানের কাজ দেখছেন। ইট দেখে তিনি ঠিকাদার কে, জানতে চান। ইটের মান নিয়ে প্রশ্ন করেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে ইটগুলো দেখান। তখন পাশে থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধি বলছিলেন, ‘এক নম্বর (ইট)।’

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘এটা কি এক নম্বর? একটা বাইর করো। এটা এক নম্বর নাকি? এটা কিসের এক নম্বর?’ ইটগুলো নির্বাহী প্রকৌশলীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন তো কী ইট লাগাইতাছে?’

একই সঙ্গে ঠিকাদারকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরে শোনেন, এটা কী ইট লাগাইতাসেন আপনি? শহীদদের কবরের ওপর আপনি এ রকম দুর্নীতি করতাসেন! এটা ভালো ইট নাকি?’

এ সময় পাশে ঠিকাদারের লোকদের একজন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘১০০ পার্সেন্ট ভালো ইট ছিল।’ তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ধমক দিয়ে তাঁকে থামিয়ে দেন। নির্বাহী প্রকৌশলীকে ডেকে উপদেষ্টা বলেন, ‘কই, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কই? আপনি দেখেন।’

ভিডিওতে এ সময় ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে যেতে দেখা যায়। এ সময় প্রকৌশলী বলেন, ‘স্যার, আমি ঠিক করে দিচ্ছি স্যার।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রকৌশলীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কোথা থেকে পাস করেছেন?’ আইইবি (ইনস্টিটউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ) উত্তর শুনে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি আইইবি থেকে পাস করেছেন। আপনিই তো বুঝতে পারবেন, দেখেন।’ এ বলে ইটগুলো দেখান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইটগুলো দেখিয়ে বলেন, ‘সব সরাতে হবে। ভালো ইট দাও। দুই নম্বরি ইট এখানে লাগাইতাছে। দেহেন ইঞ্জিনিয়ার সাব, দুই নম্বর। সব দুই নম্বর ইট। এ জন্যই উনি (ঠিকাদার) বলেন মোনাজাত করে চলে যেতে। এ জন্যই বলতেছে, ওই হানে মোনাজাত করেই যানগা।’

এ সময় আবারও কথা বলছিলেন ঠিকাদারের প্রতিনিধি। এতে ক্ষেপে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যান।’ প্রকৌশলীকে বলেন, ‘এই কন্ট্রাক্টর আপনি চেঞ্জ করেন। খালি চুরি ছাড়া আর কিছু নাই।’ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের খারাপ ইটগুলো দেখিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যে দেখেন, ছবি তুলে নেন। ছবি উঠান, প্রচার করেন।’

ঠিকাদার ইট পাল্টে দেওয়ার কথা বললে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেন, বলার পরে চেঞ্জ কেন?’ প্রকৌশলীকে উন্নয়নকাজের রাফ (প্রাথমকি) ঢালাই দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার সাব, রাফ ঢালাই এ রকম কোয়ালিটি হবেনি? ভাইঙ্গা গেছে। একটু ছবি উঠায় নেন। এ রকম হবে কেন?’ এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি যদি না আসতাম, তখন আপনারা কী করতেন? সে সময় এগুলো লাগাই দিতেন। এত দুর্নীতি করলে তো দেশ চলবে না। এত দুর্নীতি যদি করেন, তো দেশ চলবে?’

রায়েরবাজার কবরস্থানটি ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন। এ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো.

মিজানুর রহমান। ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে ১১৪ শহীদের কবর একটি ব্লকে গণকবর হিসেবে রয়েছে। প্রশাসকের নির্দেশে ওই গণকবরের জায়গাটি অন্য কবর থেকে আলাদা করার কাজটি গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। কাজটি টার্মস কন্ট্রাক্টের (টিসি) আওতায় বাচ্চু কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হচ্ছে।

এ প্রকৌশলী আরও বলেন, গত শুক্রবার রাতে এ কাজের জন্য এক ট্রাক ইট আসে। এর মধ্যে কিছু ইট খারাপ এসেছে। আজ সকালে সেখানে গিয়েই তিনি বিষয়টি দেখেন এবং ইটগুলো সরাতে বলেন। কিন্তু এর মধ্যে আজ শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শহীদদের কবর জিয়ারতের জন্য রায়েরবাজারে যান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ মোতাবেক বাচ্চু কনস্ট্রাকশনকে বাদ দিয়ে সেখানে অন্য ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো হবে বলেও জানান তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র য় রব জ র কবরস থ ন প রক শ এ সময় এ রকম ইটগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মালেগাঁওয়ে কবরস্থানে বিস্ফোরণ মামলায় বিজেপি নেত্রী প্রজ্ঞাসহ সবাই খালাস

ভারতের মহারাষ্ট্রের মালেগাঁওয়ে ১৭ বছর আগে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত সাতজনকেই বেকসুর খালাস দিলেন এনআইএর বিশেষ আদালত। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে লোকসভায় নির্বাচিত বিজেপি নেত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞা।

আজ বৃহস্পতিবার এনআইএর বিশেষ আদালতের বিচারক এ কে লাহোটি তাঁর রায়ে বলেন, শুধু সন্দেহের বশে মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ দাখিল করা হয়েছে, তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বাইকটিও যে সাবেক সংসদ সদস্যের, তা প্রমাণ করা যায়নি।

এ মামলায় মোট ৩২৩ জন সাক্ষীর বয়ান খতিয়ে দেখে বিচারপতি লাহোটি বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনাটি ভয়াবহ, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নিতান্তই সন্দেহের বশে ও নৈতিকতার যুক্তিতে কাউকে দোষী ঠাওর করা যায় না।

মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিক জেলার মালেগাঁও শহরে ২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে এক বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু হয়, আহত হয়েছিলেন শতাধিক। শহরের মসজিদ লাগোয়া এক কবরস্থানে এক বাইকে দুটি বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। তাতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

অভিযোগ উঠেছিল, পূর্ববর্তী সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা হিসেবে মুসলিম–অধ্যুষিত এলাকায় ওই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। ব্যবহৃত বাইকটির মালিক ছিলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন সংস্থার তদন্তে জানা যায়, এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ওই দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত।

ওই মামলার তদন্তের সময় সাধ্বী প্রজ্ঞা ও এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজনেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিলেন। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

তদন্তে জানা গিয়েছিল, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বাইকটি প্রজ্ঞার নামে নিবন্ধন করা ছিল। কিন্তু ফরেনসিক তদন্তে তা প্রমাণ করা যায়নি। তা ছাড়া আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, প্রজ্ঞা ওই ঘটনার দুই বছর আগেই সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এরপর তদন্তের ভার এনআইএ গ্রহণ করে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগ করা হয়েছিল। অস্ত্র আইনে মামলাও রুজু হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি লোহাটি জানান, এই মামলায় ইউএপিএ প্রযোজ্য হবে না।

মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে ভোপাল থেকে বিজেপি প্রার্থী করে। তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ভোটে প্রজ্ঞা জিতে যান। ২০২৪ সালের ভোটে অবশ্য বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেনি।

বেকসুর খালাস পাওয়ার পর ৫৫ বছর বয়সী সাধ্বী প্রজ্ঞা গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাঁর ওপর অত্যাচার হয়েছিল। তাঁর জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। বেঁচে রয়েছেন সন্ন্যাসী হয়েছেন বলে। তিনি দাবি করেন, মামলাটি ছিল গেরুয়া অবমাননার। তবে গেরুয়ারই জয় হয়েছে। হিন্দুত্বের জয় হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মালেগাঁওয়ে কবরস্থানে বিস্ফোরণ মামলায় বিজেপি নেত্রী প্রজ্ঞাসহ সবাই খালাস