সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে হেড-নেক ক্যানসার নিরাময় সম্ভব
Published: 4th, August 2025 GMT
ক্যানসার গুরুতর রোগ। আমাদের দেশে আনুমানিক ২০ লাখ ক্যানসারের রোগী আছেন, প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং এক লাখ মানুষ মারা যান। সেই হিসেবে প্রতিদিন ক্যানসারের কারণে মৃত্যু হচ্ছে ২৭৩ জনের। আর হেড-নেক ক্যানসারের ঝুঁকি অন্যান্য ক্যানসারগুলোর তুলনায় বেশি। তবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে এই ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা সম্ভব।
গত বুধবার (৩০ জুলাই) ছিল ‘বিশ্ব হেড-নেক ক্যানসার দিবস’। দিবসটি উপলক্ষে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আয়োজনে অনুষ্ঠিত অনলাইন আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। আয়োজনটির মিডিয়া পার্টনার ছিল প্রথম আলো ডটকম এবং ব্র্যান্ড পার্টনার ছিল লুমনা, বিলটিন, কেফুক্ল্যাভ ও ওলনেজ।
বাংলাদেশ হেড-নেক সার্জনস সোসাইটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওটোল্যারিনগোলজি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো.
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ হেড-নেক সার্জন সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর কাছে হেড-নেক ক্যানসার সম্পর্কে জানতে চান।
অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘হেড-নেক ক্যানসার বলতে মূলত অনেকগুলো ক্যানসারকে একটি গ্রুপের মধ্যে ধরা হয়। যেমন মুখগহ্বরের ক্যানসার, শ্বাসনালির ক্যানসার, নাক বা সাইনাসের ক্যানসার, স্কিনের ক্যানসার, কানের ক্যানসার ইত্যাদি। এই ক্যানসারগুলো একসঙ্গে রাখার কারণ হলো, এগুলোর উপসর্গগুলো প্রায় একই ধরনের। এমনকি এই ক্যানসারগুলো শনাক্ত করার প্রক্রিয়াও মোটামুটি একই রকম। তবে এদের চিকিৎসাপদ্ধতি ভিন্ন।’
হেড-নেক ক্যানসারের উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক হাসান জাফর বলেন, ‘অনেক সময় অকারণে নাক দিয়ে রক্ত বের হয়, নাকে কোনো প্রকার গন্ধ পান না। আবার গলার ক্ষেত্রে, বারবার গলাব্যথা, গলায় কোনো কিছু আটকে থাকার মতো অনুভূতি, ধীরে ধীরে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন ইত্যাদি। এ ছাড়া মুখ বা মুখগহ্বরে ঘা কিংবা মুখে দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে কানের সমস্যা হলে কান দিয়ে রক্ত বের হতে পারে।’
সঞ্চালক জানান, প্রতি ৫ জন রোগীর মধ্যে ৩ জন এই প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে উপেক্ষা করেন। এরপর উপস্থাপক জানতে চান, কোন অভ্যাসগুলোর কারণে হেড-নেক ক্যানসার হতে পারে?
উত্তরে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওটোল্যারিনগোলজি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ ফারহান আলী রাজীব বলেন, ‘যারা পান, সুপারি, তামাক কিংবা ধূমপানে আসক্ত তাদের হেড-নেক ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন রেডিয়েশন ও ভাইরাসের কারণের হেড-নেক ক্যানসার হয়ে থাকে।’
সঠিক সময়ে যদি একজন রোগী হেড-নেক ক্যানসারের চিকিৎসা না নেয়, তাহলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওটোল্যারিনগোলজি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হেড -নেক ক্যানসারের রোগীরা সাধারণ উপসর্গগুলো উপেক্ষা করেন। প্রাথমিক দিকে রোগটি শনাক্ত করা গেলে অনেক ক্ষেত্রেই এর সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তবে এটি একেবারেই লাস্ট স্টেজে চলে গেলে রোগীকে অনেক শারীরিক কষ্টের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তাই সবাইকে উপসর্গগুলোকে নিয়ে সচেতন হতে হবে।’
বাংলাদেশ হেড-নেক সার্জন সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘সব সময় এসব উপসর্গ দেখা দিলেই ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এদের সবগুলো ক্যানসার নয়। তবে উপসর্গগুলো দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী হলে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। যেমন মুখে ঘা হলে তা যদি নিরাময় হতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় নেয়, তখন শনাক্তকরণ জরুরি। গলার ক্ষেত্রেও তাই। কোনো সমস্যা দেখা দিলে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ অপেক্ষা করুন। এরপরে ক্যানসার কিনা তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষা করাতে হবে।’
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ও ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘যত দ্রুত হেড-নেক ক্যানসার শনাক্তকরণ সম্ভব তত দ্রুত নিরাময় সম্ভব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাদের প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যানসারগুলো ধরা পড়ে, তারা অস্ত্রোপচারের সাহায্যে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। এর পরেও কিছু থেকে গেলে তাদের রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। যখন ক্যানসার অগ্রসর পর্যায়ে চলে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অগ্রসর পর্যায়ে চলে গেলে অনেকগুলো প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। এতে খরচও বেশি হয়। তবে আগেই শনাক্তকরণ সম্ভব হলে সব দিক দিয়েই সুবিধাজনক হয়।’
রোগীরা কোথায় গেলে হেড-নেক ক্যানসারের চিকিৎসা সবচেয়ে ভালো পাবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ওটোল্যারিনগোলজি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. মাজহারুল শাহীন বলেন, ‘যদি আমরা হেড-নেক ক্যানসারের সার্জারির কথা চিন্তা করি, তবে জাতীয় নাক-কান-গলা-গলা ইনস্টিটিউট আছে, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আছে, দেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো আছে। এ ছাড়া ক্যানসারের কিছু কিছু চিকিৎসা জেলা হাসপাতালগুলোতেও পাওয়া যায়। রোগ শনাক্তকরণ কিংবা প্রাথমিক চিকিৎসা থানা হেলথ কমপ্লেক্সেও হতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে রেডিওথেরাপির ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই নেতৃত্ব দিচ্ছে।’
আয়োজনের শেষপর্যায়ে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নির্বাহী মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিশেষজ্ঞদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ও পুরুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের মধ্যে হেড-নেক ক্যানসার একটি। এ ছাড়া যত ধরনের ক্যানসার হয়, তার মধ্যে পুরুষদের ৩০ শতাংশের ও নারীদের ১১ থেকে ১৩ শতাংশই হেড-নেক ক্যানসার। এই ডেটা থেকেই এ ধরনের ক্যানসারের ভয়াবহতা সম্পর্কে বোঝা যায়। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করতেই এসকেএফের এ আয়োজন।’
পাশাপাশি তিনি এসকেএফের বিশ্বমানের ওষুধ প্রস্তুত প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি বাজারে সবচেয়ে উন্নতমানের ওষুধ নিয়ে আসার। এসকেএফের যে অনকোলোজি সুবিধা রয়েছে তা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক স্বীকৃত।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ হ ড ন ক স র জন লস ল ম ট ড র স স ইট র উপসর গ পর য য় ধরন র ক সময়
এছাড়াও পড়ুন:
গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন
অ্যানথ্রাক্স রোগটি‘তড়কা’ নামেই বহুল পরিচিত। গ্রীক শব্দ ‘অ্যানথ্রাকিস’ বা কয়লা থেকে উদ্ভূত এই নামটি হয়তো অনেকেই জানেন না। তবে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই অবগত।
অ্যানথ্রাক্স নামের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগটি শুধু বন্য বা গৃহপালিত পশুকে নয়, বরং মানুষের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে বারবার।
আরো পড়ুন:
১৬ দিন ধরে অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ বাকৃবি ছাত্রশিবিরের
দ্রুত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি বাকৃবি শিক্ষার্থীদের
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, দেশের অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়াকে আক্রান্ত করে এই ব্যাকটেরিয়া। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই রোগে মারা গেছে অন্তত ১ হাজার গবাদিপশু। আর আক্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের রিপোর্ট করেছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এরইমধ্যে এ রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন, যা নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি মানব অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার সবগুলোই ছিল ত্বকের অ্যানথ্রাক্স। তবে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬ হাজার ৩৫৪টি পশুর অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯৮টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে মোট মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১৫.৭ শতাংশে।
গবেষণার তথ্য মতে, বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ১৯৮০ সালে। এরপর থেকে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বারবার ফিরে এসেছে। বিশেষ করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মেহেরপুর জেলাকে ‘অ্যানথ্রাক্স বেল্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা ময়মনসিংহ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে যথাক্রমে উচ্চ, মাঝারি ও নিম্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে, বিশেষত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
অ্যানথ্রাক্সের মূল কারণ হলো- ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত মৃত পশুর দেহে পাওয়া যায়। এটি এতই শক্তিশালী যে, জৈবিক অস্ত্র হিসেবেও এর ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসে উড়ন্ত স্পোর তৈরি করতে পারে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
অ্যানথ্রাক্স নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের স্নাতক রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্ণব সাহা।
তিনি বলেন, “মানুষ তিনভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে— ত্বকের মাধ্যমে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এবং খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে। এর মধ্যে ত্বকের অ্যানথ্রাক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এর সুপ্তিকাল সাধারণত দুই থেকে ছয়দিন।”
অন্যদিকে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংক্রমিত অ্যানথ্রাক্সের সুপ্তিকাল গড়ে চারদিন, যা ১০-১১ দিন পর্যন্তও হতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট আক্রান্তের ৯১.৩ শতাংশ মানুষই ত্বকের অ্যানথ্রাক্সে ভুগেছে, যেখানে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল এবং উভয় ধরনের সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৬.৫২ শতাংশ ও ২.৬৬ শতাংশ।
ত্বকীয় অ্যানথ্রাক্সের ক্ষেত্রে চামড়ায় প্রথমে একটি চুলকানিযুক্ত লাল ফোঁড়া দেখা যায়, যা পরবর্তীতে কালো কেন্দ্রযুক্ত ব্যথাহীন ঘা হিসেবে প্রকাশ পায়। উলের কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যাওয়ায় এটি ‘উল-সর্টার্স ডিজিজ’ নামেও পরিচিত।
সবচেয়ে মারাত্মক ধরণ হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের অ্যানথ্রাক্স। ব্যাকটেরিয়ার স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে ঠান্ডা, জ্বর ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা যায়, যা দ্রুত শ্বাসকষ্ট, শক এবং উচ্চ মৃত্যুহারের দিকে নিয়ে যায়।
অর্ণব বলেন, “প্রাণীদের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স হলে হঠাৎ মৃত্যু সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ। মৃত পশুর নাক, মুখ ও মলদ্বার থেকে কালচে, জমাট না বাঁধা রক্ত বের হয় এবং পেট ফুলে যায়।”
রোগটির প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়ে বাকৃবি মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কারণ হলো জনসচেতনতার অভাব। অসুস্থ পশু জবাই করে তার মাংস কম দামে বিক্রি করার একটি প্রবণতা আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। অনেক বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষ জানেনই না যে, এই মাংস থেকে মানুষের শরীরেও রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
“পাশাপাশি, মৃত পশুর দেহ সঠিক উপায়ে অপসারণ না করে খোলা মাঠে, নদী, খাল বা বন্যার পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে এই জীবাণু পরিবেশ ও পশুপালনের জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে,” যুক্ত করেন ড. গোলজার।
তিনি বলেন, “অ্যানথ্রাক্সের বিস্তার রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ এই রোগের বিস্তার রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম- জনসচেতনতা বৃদ্ধি। পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে জনশিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো গবাদি পশুর মধ্যে নিয়মিত এবং ব্যাপক হারে টিকাদান নিশ্চিত করা। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। আমদানি করা ও জবাই করা পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
ড. গোলজার বলেন, “এছাড়া মৃত পশুর দেহ ও দূষিত পদার্থ সঠিকভাবে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে এবং অনুমোদিত মাংস বিক্রেতাদের মাধ্যমে এবং পশু চিকিৎসকের পরীক্ষা করা মাংস বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
ঢাকা/মেহেদী