সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারই অংশ হিসেবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কি ও ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দিনভর কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠকের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টেলিফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক আয়োজনে কাজ শুরু করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

আলস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের তিন দিনের মাথায় সোমবার (১৮ আগস্ট) হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। খবর আলজাজিরার। 

ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের তুলনায় ট্রাম্প ও জেলেনস্কির কথোপকথন উল্লেখযোগ্যভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। এমনকি জেলেনস্কির স্যুটের প্রশংসাও করেন তিনি। 

যুদ্ধ শেষ করার আলোচনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে ইউরোপকে সমর্থন দেবে মার্কিন সরকার। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “অনেক সাহায্য আসছে। ইউরোপীয় দেশগুলো এখানে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে কাজ করছে।”

ট্রাম্প বলেন, “আমাদের পাশে আরেকটি কক্ষে ইউরোপ থেকে আসা প্রতিনিধিরা অপেক্ষা করছেন। তারা সবাই এখানে আছে। তারা রক্ষা করতে চাইছে এবং তারা এ বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

ট্রাম্প আরো জানান, আলোচনার ফলাফল যাই হোক, মার্কিন সমর্থন ইউক্রেনের জন্য অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, “মানুষ মারা যাচ্ছে এবং আমরা এটি বন্ধ করতে চাই। তাই আমি বলব না এটি শেষের পথ। আমার মনে হয় আমাদের এটি সফল করার ভালো সুযোগ আছে।”

জেলেনস্কি ট্রাম্পের এই প্রতিশ্রুতিকে ‘বড় পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইউক্রেন প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্র ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের জন্য একটি আগ্রাসনবিরতি প্রয়োজন… যাতে মানুষ গণতান্ত্রিক, উন্মুক্ত, আইনসঙ্গত নির্বাচন করতে পারে।”

যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন নেই জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন নেই। যুদ্ধবিরতি তাৎক্ষণিকভাবে সহিংসতা কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শান্তিচুক্তি ছাড়া এই সংঘাত থামবে না।”

ট্রাম্প বলেন, “এই বছর আমি যে ছয়টি চুক্তি সম্পন্ন করেছি, সবই যুদ্ধকালীন অবস্থায় ছিল। আমি কোনো যুদ্ধবিরতি করিনি। যদিও যুদ্ধবিরতি ভালো হতে পারে, তবে কৌশলগত কারণে কোনো একটি দেশ তা চাইতে নাও পারে।”

যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড় দেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি  বলেন, “আমাদের যুদ্ধ বন্ধ করা প্রয়োজন। রাশিয়াকে থামানো প্রয়োজন। কূটনৈতিক উপায়ে যুদ্ধ থামানোর ট্রাম্পের পরিকল্পনা সমর্থন করেন ইউক্রেনীয়রা।” পুতিন ও ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কথাও বলেন তিনি।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট  ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে একটি বহুপাক্ষিক বৈঠক করেন। সেখানে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ও ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে উপস্থিত ছিলেন। 

ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এই বৈঠককে ‘সম্মান’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন, তারা সবাই একসঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যকে সমর্থন করছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের আজকের দিনটি অত্যন্ত সফল এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।”

জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “বৈঠক শেষ হওয়ার পর আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ফোন করেছি এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে একটি বৈঠকের আয়োজন শুরু করেছি, যেখানে স্থানের বিষয় নির্ধারণ করা হবে।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সম্মিলিতভাবে একটি চুক্তি করা সম্ভব, যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন রোধ করতে সাহায্য করবে।

ট্রাম্প জানান, তিনি আশা করছেন পুতিন শীঘ্রই ইউক্রেনের বন্দিদের মুক্তি দেবেন।

ইউরোপীয় নেতাদের অবস্থান 

ন্যাটো মহাসচিব বলেন, “প্রধান অগ্রাধিকার হতে হবে হত্যাকাণ্ড ও ইউক্রেনের অবকাঠামোর ধ্বংস রোধ করা। ট্রাম্পের এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান। 

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “ফোকাস থাকতে হবে ‘ইউক্রেনের জন্য ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তি’ অর্জনে। প্রত্যেক শিশুকে তার পরিবারে ফিরিয়ে দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, “আমি কল্পনাও করতে পারি না যে পরবর্তী বৈঠক যুদ্ধবিরতি ছাড়া হবে। তাই চলুন, এ নিয়েই কাজ করি এবং রাশিয়ার ওপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করি।”

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে একটি হলো নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং কীভাবে নিশ্চিত করা যায় যে এটি আর ঘটবে না।”

ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, “যখন আমরা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা বলি, তখন তাতে পুরো ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়টিও থাকে।” 

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই আলোচনাগুলো কেবল ইউক্রেন নিয়ে নয়, বরং ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার বিষয়েও, এবং এ কারণেই এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট বলেন, “এই বৈঠকটি ‘প্রতীকী’। অর্থাৎ এটি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ইউক্রেনকে সহায়তার প্রতীক।”

রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের দীর্ঘ সীমান্ত উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “আমরা ১৯৪৪ সালে একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছিলাম, এবং আমি নিশ্চিত যে ২০২৫ সালে আমরা রাশিয়ার আগ্রাসী যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি স্থায়ী ও ন্যায়সংগত শান্তি খুঁজে বের করতে সক্ষম হব।” 

আলজাজিরা জানিয়েছে, সোমবারের আলোচনার ফলাফল পর্যালোচনার জন্য আগামীকাল ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন ইউরোপীয় নেতারা।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট র ম প বল ন ইউক র ন র ইউর প য় আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নীল সমুদ্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নীল বেদনা, ভারত বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন

অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল মুম্বাইয়ের ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। ২২ গজে আরও একবার ভারতের আধিপত‌্য, শাসন। যেন শিরোপার পায়চারি অনেক আগের থেকেই। 

ব‌্যাটিংয়ে পর্বত ছুঁই-ছুঁই রান। এরপর স্পিনে ফুল ফোটালেন স্পিনাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াই করল সাধ‌্যের সবটুকু দিয়ে। ব্যাটে-বলে সহজে হাল ছাড়ল না তারাও। হৃদয় জিতলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাত্তাই পেল না। ভারতের শক্তি-সামর্থ‌্যের গভীরতার কাছে হার মানতেই হলো প্রোটিয়া নারীদের।

আরো পড়ুন:

৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে

কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস

মুম্বাইয়ের নাভি স্টেডিয়ামের নীল সমুদ্রে সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিশ্বকাপ  উদ্‌যাপনে। প্রথমবার ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন। ৫২ রানের বিশাল জয় বুঝিয়ে দেয় হারমানপ্রীত কৌর, জেমিমা রদ্রিগেজ, দীপ্তি শর্মা কিংবা শেফালি বার্মা, স্মৃতি মান্ধানা, রিচা ঘোষরা ২২ গজকে কতটা আপন করে নিয়েছেন। শিরোপা জয়ের মঞ্চে ছাড় দেননি একটুও। ২০০৫ ও ২০১৭ বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো হয়েছিল...সেগুলো আজ ফুল হয়ে ঝরল। 

বৃষ্টি বাঁধায় বিঘ্ন ম‌্যাচে আগে ব‌্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের স্কোর পায় ভারত। ৪৫.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রান করতে পারে প্রোটিয়া নারীরা। নাডিন ডি ক্লার্ক শেষ ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে যখন আউট হলেন, স্টেডিয়ামের প্রায় ষাট হাজার ভারতীয় সমর্থকদের মুখে একটাই স্লোগান, চাক দে ইন্ডিয়া।

ওই জনসমুদ্রের স্লোগান, ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’। 

বিস্তারিত আসছে …

 

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ