‘আল্টিমেটাম’ দিয়ে সচিবালয়ের সামনের সড়ক ছাড়লেন জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতরা
Published: 19th, August 2025 GMT
দাবি আদায়ে ‘আল্টিমেটাম’ দিয়ে সচিবালয়ের সামনের সড়ক ছেড়েছেন জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা।
আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে তাঁরা সড়ক ছাড়েন। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের পদত্যাগ দাবি করেন।
সড়ক ছেড়ে দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের আসামিরা কেন জামিন পাচ্ছেন, তা নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে আগামী রোববারের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে। সেই ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টার জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। আজকের কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে দৃশ্যমান বিচারের দাবি জানান তাঁরা।
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শহীদ তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, আইন উপদেষ্টা আমাদের আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আগামী রোববার পর্যন্ত তাঁরা সময় দিয়েছেন। এর মধ্যে আসামিদের জামিনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টার ব্যাখ্যা ও পুলিশি হামলার ঘটনায় দৃশ্যমান বিচার না হলে তাঁরা আবার আন্দোলন শুরু করবেন।
রবিউল আউয়াল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী রোববারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে আইন উপদেষ্টার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করবেন তাঁরা। সেই কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতরা অংশ নেবেন। সেই আন্দোলন সচিবালয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে হবে।
আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা প্রথমে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের ২ নম্বর ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এতে সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অবস্থান চলাকালে আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগান দেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল—‘পদত্যাগ পদত্যাগ, পদত্যাগ চাই, আসিফ নজরুলের পদত্যাগ চাই’, ‘দফা এক দাবি এক, আসিফ নজরুলের পদত্যাগ’, ‘খুনিরা বাইরে ঘোরে, বিচার বিভাগ কী করে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’।
জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা বলেন, অর্থের বিনিময়ে জুলাই গণহত্যার আসামিরা জামিন নিচ্ছেন। অবিলম্বে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে পদত্যাগ করতে হবে। তাঁরা বিচারকদেরও অপসারণ দাবি করেন।
অবস্থান কর্মসূচির আগে শহীদ পরিবার ও জুলাই আহত ব্যক্তিরা সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাথি ও গালি দেয় বলে অভিযোগ করেছেন শহীদ আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘পুলিশ জুলাই শহীদ পরিবারকে বিশ্রীভাবে গালি দিয়েছে। আমি সেটা উল্লেখ করতে পারব না। আমাকে পুলিশ লাথি দিয়েছে।.
অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ‘এমনটি হলে আমরা যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট র অবস থ ন পদত য গ সড়ক ছ ড়
এছাড়াও পড়ুন:
বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি
এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন আরফান হোসেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।’’
আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।
আরফান হোসেন বলেন, ‘‘ফেলানী হত্যার পর সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকে ইচ্ছে ছিল; বিজিবিতে চাকরি করব। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’’
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘‘ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে, দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।’’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।
ঢাকা/সৈকত/রাজীব