গ্রামে গলানো হচ্ছে সিসা, ঝুঁকিতে পরিবেশ
Published: 28th, August 2025 GMT
গ্রামের ভেতরেই পরিত্যক্ত ব্যাটারির অংশগুলো মাটির বড় বড় চুলায় পুড়িয়ে গলানো হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হওয়া এই কাজ চলে ভোর পর্যন্ত। রাতভর গ্রামের বাতাসে মিশতে থাকে বিষাক্ত ধোঁয়া। যা মানুষ থেকে শুরু করে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। ঝুঁকিতে রয়েছে পশু-পাখিও।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের লাকচতল গ্রামের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই সিসা গলানোর অবৈধ কারখানাটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাত হলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এক ধরনের ঝাঁঝালো গন্ধ। এর কারণে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামবাসী। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে চারপাশের গাছপালাও।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন বলেন, ‘‘এই গ্যাস খুবই ক্ষতিকর। নাকে-চোখে লাগে, জ্বলে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পর্যন্ত টিকতে পারছে না। মানুষের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।’’
অপর বাসিন্দা জান্নাতুল রুমা বলেন, ‘‘আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আগেই ছিল। এখন রাত হলেই সিসা গলানোর ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। চোখ জ্বালা করে, কাশিতে দম বন্ধ হয়ে আসে।’’
মাদ্রাসাছাত্র রাকিবুল হাসান ও স্কুলছাত্র মাহিবুল হাসান নীরব জানায়, রাতে সিসা পোড়ানোর গন্ধে এলাকায় টিকে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়েছে।
‘সততা ব্যাটারি হাউস’ নামে এই কারখানাটি এই গ্রামে কয়েক মাস ধরে চালাচ্ছেন বগুড়ার আশিক মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি। জমির মালিক আলমগীর জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে স্থাপন করা হয় এটি। এখানে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন, সবাই বগুড়া থেকে আসা।
কারখানার ব্যবস্থাপক মো.
জমির মালিক আলমগীর জাহাঙ্গীর এবং কারখানা মালিক আশিক মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি জানি। এই সপ্তাহেই পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়ে অভিযান চালানো হবে।’’
ঢাকা/রফিক/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের রাউজানে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আলমগীর আলমের সহযোগী ছিলেন। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম মুহাম্মদ রাজু (২৮)। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার মৃত নুর নবীর ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, আলমগীর আলমকে গুলি করার সময় তাঁর পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন মুহাম্মদ রাজু।
গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। আলমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঢালারমুখ এলাকায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আলম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেছেন। নিহত আলমের শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।
রাউজান থানা-পুলিশ জানায়, আলম নিহত হওয়ার দুই দিন পর তাঁর বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করে রাউজান থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে রাজুর নাম নেই। তবে ঘটনার তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে এ মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন রাউজান কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রাসেল খান (৩২) ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী মুহাম্মদ হৃদয় (৩০)।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন অস্ত্রধারীরা আলমগীর আলমকে গুলি করার জন্য কবরস্থানে লুকিয়ে ছিলেন, তখন আলমগীর আলমের পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন রাজু। তিনি আলমগীরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তবে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন আলম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।