কেবল ভাষার ভিত্তিতে কাউকে বিদেশি বলা যায় না: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
Published: 30th, August 2025 GMT
বিজেপি শাসিত ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য তাদের বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পুশব্যাকের অভিযোগও উঠছে। আর এই বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেশটির শীর্ষ আদালত। কেবলমাত্র ভাষার ভিত্তিতে কোনো নাগরিককে বিদেশি নাগরিক বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা, এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট মতামত চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, শুধুমাত্র ভাষা ভারতে কাউকে বিদেশি নাগরিক হিসেবে গণ্য করার ভিত্তি হতে পারে না। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিশেষ করে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রকে সরকারকে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ (এসওপি) মেনে চলার পরামর্শ দেন শীর্ষ আদালত।
সম্প্রতি বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশে পুশব্যাক করার অভিযোগ উঠে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবিকে। দিল্লিতে স্বামী-সন্তান নিয়েই থাকতেন সোনালী। পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে সেখানে কাজ করতেন তারা। কিন্তু গত জুন মাসে তাদের আটক করে দিল্লি পুলিশ। ওই সময় আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। সোনালী বিবি সহ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড ও কয়েকটি এনজিও। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সেই মামলার শুনানি ছিল শীর্ষ আদালতে। আদালতের বিচারপতি সূর্য কান্ত, জয়মাল্য বাগচী এবং বিপুল এম পাঞ্চোলির এক ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে সেই মামলা।
ওই শুনানিতে ওয়েলফেয়ার বোর্ড সহ এনজিওর প্রতিনিধি হিসেবে আদালতে সওয়াল করছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা।
শুনানি চলাকালীন সময়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সরগরম হয়ে ওঠে আদালতের কক্ষ। শীর্ষ আদালতে এই মামলার আবেদনের বিরোধিতা করে সলিসিটার জেনারেল বলেন, আদালতের উচিত এই সংগঠনের দ্বারা দায়ের করা আবেদনগুলো গ্রহণ না করা। কারণ কিছু রাজ্য ওই সংগঠনগুলোকে সমর্থন দিয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া আদালতের সামনে কোনো ব্যক্তিগত অভিযোগকারী উপস্থিত নেই। আমরা জানি কীভাবে কয়েকটি রাজ্য সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের উপর নির্ভর করে। এতে জনসংখ্যার পরিবর্তন একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবেদনকারী বোর্ড এবং অন্যান্য এনজিওর পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের কথা উল্লেখ করে সলিসিটর জেনারেল বলেন, ভূষণের মতো এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে অভিযোগকারীদেরকে আদালতে আবেদন করতে সাহায্য করা উচিত, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসনের বিষয়টি যেখানে বড়, সেখানে লোকেদের সাহায্য করা উচিত।
জবাবে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মেহতাকে জিজ্ঞাসা করেন, “অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যেভাবে মেক্সিকো সীমান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে উঁচু পাঁচিল নির্মাণ করেছে, ঠিক সেভাবেই অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও কি বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তবর্তী এলাকায় উঁচু পাঁচিল নির্মাণ করতে চায়?”
মেহতা উত্তর দেন, “অবশ্যই না। কিন্তু কোনো ব্যক্তিগত অভিযোগকারী নেই। ভারত সরকার কীভাবে আবেদনে করা অস্পষ্ট অভিযোগের জবাব দিতে পারে? কোনো ব্যক্তিকে এসে বলতে দিন যে আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি যে, অভিবাসীরা আমাদের সম্পদ খেয়ে ফেলবে না। আমরা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করতে পারি না। এমন এজেন্ট আছে যারা দেশে অবৈধ প্রবেশকে সহজ করে তোলে।”
বিচারপতি বাগচী তখন মেহতাকে বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা, জাতির অখণ্ডতা এবং আপনি যেমন বলেছেন আমাদের সম্পদ সংরক্ষণের প্রশ্ন রয়েছে। মনে রাখা দরকার যে একই সাথে, আমাদের একটি সাধারণ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার রয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবি ভাষাভাষী ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর ‘একই সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত’ ঐতিহ্যের মিল রয়েছে। সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের ভাষা এক হলেও দুটি আলাদা রাষ্ট্র। আমরা চাই ইউনিয়ন এই বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করুক।”
সলিসিটর জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর প্রশ্ন ছিল, “কোনো এক ব্যক্তির ভাষা দিয়ে তার নাগরিকত্ব যাচাই বা বিদেশি হিসেবে অনুমান করা যায় কিনা! আমরা চাই আপনি পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট করুন।”
সোনালী বিবির পুশ ব্যাকের প্রসঙ্গটি তুলে আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এর যুক্তি, “সীমান্ত কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই লোকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। এমনকি একটি ক্ষেত্রে, কলকাতা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন দায়ের করা সত্ত্বেও একজন গর্ভবতী মহিলাকে জোর করে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।”
প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগ, নাগরিক প্রমাণপত্র যাচাই না করে, শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে ওই নারীকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছিল। এমনকি, এর আগে এই মামলায় নোটিষ ইস্যু করলেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনো জবাব দেয়নি বলেই দাবি করেন তিনি।
আদালতকে ভূষণ জানান, “ওই নারীকে জোর করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে- তিনি গর্ভবতী- কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে তিনি একজন বিদেশি। তারা (কেন্দ্র) বলছে, বাংলা ভাষা একটি বাংলাদেশি ভাষা। অতএব, যারা বাংলা ভাষাভাষী তারাই বাংলাদেশি। কোনো ব্যক্তি বিদেশি কিনা তা নির্ধারণ না করে কীভাবে কোনো কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তাড়িয়ে দিতে পারে? বাংলাদেশে প্রবেশের পরই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ওই নারীকে ভারতীয় বলে তাদের বিদেশি আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করে।”
বিচারপতি বাগচী তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেহতাকে বলেন, ‘কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাষায় কথা বললেই কি তাকে বিদেশি বলা হবে?” একই সুরে বিচারপতি সূর্য কান্তের প্রশ্ন, “বাংলায় কথা বললেই তাকে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে?” এ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করেছে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর এই ব্যাপারে সরকারকে তার বক্তব্য জানাতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতৃত্ব।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলার সূত্রে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে যুগান্তকারী নির্দেশ ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সীমান্ত রাজ্য হিসেবে বাংলার ঐতিহাসিক ভূমিকা স্বীকার করে প্রজন্মের পর প্রজন্মে বাংলা কীভাবে আশ্রয়, ভরসা ও সংস্কৃতির আশ্রয়স্থল হয়েছে, তার স্বীকৃতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আজকে মিলেছে। আটক হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটা বড় ভরসার জায়গা আজ তৈরি হলো।”
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব চ রপত আইনজ ব পর য য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকারযুক্ত সংবিধানই জনগণ চায়
ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত হয়েছিল সংবিধানে, তা–ই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে আপিল বিভাগে এ–সংক্রান্ত শুনানিতে বলেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল–পরবর্তী নির্বাচনগুলোর চিত্র দেখিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন এবং ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে—দেশের জনগণ এমন বিতর্কিত কোনো নির্বাচন হোক, তা চায় না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ রোববার ষষ্ঠ দিনের মতো শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে বিএনপি মহাসচিবের আপিল–সংক্রান্ত শুনানি করেন জয়নুল আবেদীন।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকে মাঝে বিরতি দিয়ে ১টা পর্যন্ত শুনানি চলে। পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিন রাখা হয়েছে। এদিন বিরতির পর শুনানি শুরুর আগে প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিদের সঙ্গে এজলাসে আসেন বাংলাদেশে সফররত নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত। বিচারপতিদের সঙ্গে এজলাসে বসে এই শুনানি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই একটি আলোচিত বিষয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে যুক্ত করেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছর পর সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে এই ব্যবস্থা বাতিল করে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালতের এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
ওই রায়ের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ও আপিল বিভাগের রুলসের ব্যত্যয় ঘটেছে দাবি করে শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রায়ে সইয়ের আগেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার, সংসদ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সংবিধান সংশোধন (পঞ্চদশ সংশোধনী) করে। পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা ও স্বাক্ষরের (বিচারপতিদের রায়ে সই করা) আগে সরকার সংসদ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের বলে তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে, যা দেশবাসীর জানা। দেশের বিবেকবান মানুষ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে এই সংবিধান সংশোধনকে সরকারের হীন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল। এটি জনগণের বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র।’
বিএনপির একসময়ের আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন শুনানিতে বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করেছেন। সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার লক্ষ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি (বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) দেশের প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রুলস যথাযথভাবে অনুসরণ না করে সর্বশেষ (পূর্ণাঙ্গ রায়) রায় দেন, যা প্রথমে দেওয়া রায়ের (শর্ট অর্ডার সংক্ষিপ্ত রায়) সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।’
শুনানিতে অবসরের পর রায়ে সই প্রসঙ্গ
অবসরের পর কোনো বিচারপতি রায়ে সই করলে তার আইনগত মূল্য কী হবে—এ প্রসঙ্গ ওঠে শুনানিতে। বিরতির পর শুনানিতে অংশ নিয়ে এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিবের অপর আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, রায় ঘোষণা ও রায়ে সই করা দুটি ভিন্ন বিষয়। রায় ঘোষণার সময় এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতির পদে আসীন ছিলেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে যা ছিল, পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
দেওয়ানি কার্যবিধি, আপিল বিভাগের রুলস ও সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘শর্ট অর্ডারের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ে যে পার্থক্য, তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেছেন একজন বিচারপতি। এই বিচারপতিও বলেননি অবসরের পরে বিচারপতি খায়রুল হকের লেখা রায়টি অবৈধ হয়েছে। স্বাক্ষর পরে করেছেন বলে রায় অবৈধ বলা যাবে না। কারণ, অবসরের পর কোনো বিচারপতি রায়ে সই করতে পারবেন না কিংবা কত দিনের মধ্যে সই না করলে সেটি অবৈধ হবে, এমন বাধ্যবাধকতা আইনে নেই।’
রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘প্রকাশ্য আদালতে কোনো বিচারপতি যখন কোনো রায় দেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে দিলে ছোটখাটো দাড়ি, কমা, শব্দ বাদ পড়েছে—এগুলো ছাড়া যেকোনো পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই সেটি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) ছাড়া হবে না, যার ওপর শুনানি চলছে।’
এ মামলায় সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়। ওই প্রসঙ্গে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, ‘অবসরের পর রায়ে সই করলে তা বাতিল বা অকার্যকর হবে না। যেদিন প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষণা করলেন, সেই তারিখ হচ্ছে মূল। এটি হচ্ছে রায়ের তারিখ। কবে সই করলেন, এটি প্রাসঙ্গিক নয়। আপিল বিভাগের রুলসে বলা আছে, এ ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধির (সিপিসি) বিধান কার্যকর হবে না। আপিল বিভাগের জন্য সিপিসি প্রযোজ্য নয়।’
মামলার পূর্বাপর
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আপিল বিভাগের ২০১১ সালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন। এরপর বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জয়নুল আবেদীন শুনানি শুরু করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত আগস্টে বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার হন। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।