পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলা, নিহত ১৩
Published: 3rd, September 2025 GMT
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায় এক রাজনৈতিক সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৩১ জন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। খবর সিনহুয়ার।
সরকারি কর্মকর্তা হামজা শাফায়াত জানান, মঙ্গলবার বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি) নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সরদার আতাউল্লাহ মেঙ্গলের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। এ উপলক্ষে কোয়েটায় একটি স্মরণসভা আয়োজন করা হয়। সেখানে বিএনপির শত শত সদস্য জড়ো হয়েছিল। সমাবেশ শেষে অনেকেই বেরিয়ে আসেন। সে সময়ে কাছের পার্কিং লটে হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
আরো পড়ুন:
অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিলেন আলিজাহ শাহ
ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ
পুলিশের এক কমর্কর্তা আতহার রশিদ বলেন, “বিস্ফোরণটি আত্মঘাতী বোমা হামলা বলেই মনে করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।”
এখানো কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও দরিদ্রতম। এছাড়া মানব উন্নয়ন সূচকের স্কোরকার্ডেও নিচের দিকে থাকে।
পাকিস্তানি বাহিনী এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেলুচিস্তানে বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং ২০২৪ সালে এই অঞ্চলে সহিংসতা তীব্রভাবে বেড়েছে, যার মধ্যে ৭৮২ জন নিহত হয়েছে।
গত মার্চ মাসে, বিচ্ছিন্নতাবাদী বেলুচ লিবারেশন আর্মি প্রদেশটিতে একটি ট্রেন দখল করে। তিন দিনের অবরোধে শত শত যাত্রীকে জিম্মি করে এবং কর্তব্যরত নিরাপত্তা বাহিনীকে হত্যা করে।
এএফপির পরিসংখ্যান অনুসারে, ১ জানুয়ারি থেকে বেলুচিস্তান ও পার্শ্ববর্তী প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিরুদ্ধে লড়াইরত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতায় ৪৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে খাইবার পাখতুনখোয়া শহরের বান্নুতে একটি আধাসামরিক সদর দপ্তরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ছয় সৈন্য নিহত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বিস্ফোরক ভর্তি গাড়িটি এফসি ক্যাম্পের গেটে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর আরো পাঁচজন আত্মঘাতী হামলাকারী প্রবেশ করে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, পরবর্তীতে ১২ ঘন্টা ধরে গোলাগুলি হয় এবং শেষ পর্যন্ত ছয় হামলাকারী নিহত হলে অভিযান শেষ হয়।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরনো বন্ধু কিম জং উনের সাথে সাম্প্রতিক এশিয়া সফরে হঠাৎ করেই আলোচনার আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি।
ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের সময় কিমকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি বৈঠকের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত। এমনকি ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে মার্কিন নীতির বিপক্ষে গিয়ে স্বীকার করেছেন যে উত্তর কোরিয়া ‘এক ধরণের পারমাণবিক শক্তিধর।’
কিন্তু পিয়ংইয়ং আমন্ত্রণে চুপ ছিল। এর পরিবর্তে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে, যাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া সেন্টারের একজন ভিজিটিং স্কলার সিওং-হিওন লি বলেন, “নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল যে কিম জং উনের অংশগ্রহণের কোনো উৎসাহ ছিল না। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস করা যে তিনি আসবেন, এটি একটি মৌলিক ভুল হিসাব ছিল।”
লি জানান, ট্রাম্পের বারবার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা যায়, যা তাকে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশাল মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিমকে একটি বিশাল, অপ্রাপ্ত ছাড় দিয়েছেন।”
২০১৯ সালে শেষবারের মতো ডিমিলিটারাইজড জোনের (ডিএমজেড) পানমুনজমে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।
তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেকে একটি‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সমর্থন করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক সু কিম এএফপিকে বলেছেন, কিম এখন ‘বেশ স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গায়’ আছেন।
তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমর্থন সম্ভবত আজকাল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত হাতকে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করার সবচেয়ে নির্ধারক কারণগুলোর মধ্যে একটি। তিনিই (উন) সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যার ফলে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।”
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি কিমের সাথে দেখা করার জন্য খুব ‘ব্যস্ত’ ছিলেন।
দৃশ্যটি ২০১৯ সালের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আলোচনা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল - কিমকে কোনো চুক্তি ছাড়াই পিয়ংইয়ং ফিরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা সহ্য করতে হয়েছিল।
অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ এএফপিকে বলেছেন, “অভিজ্ঞতা পিয়ংইয়ংকে বেদনাদায়ক করে তুলেছে। তারা খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যেতে চায় না।”
তিনি জানান, পিয়ংইয়ং ট্রাম্পের কাছ থেকে আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
ঢাকা/শাহেদ