হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। এই জেলাবাসীর জন্যে একমাত্র চিকিৎসাস্থল হিসেবে রয়েছে ২৫০ শয্যার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল। সেখানে সম্প্রতি প্রায় আড়াই কোটি টাকার সরকারি ওষুধ স্টোররুমে পড়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়েছে, অন্যদিকে হাজারো রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে, বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংক্রান্ত বিষয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এই কমিটিকে ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণের কারণ, দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও করণীয় বিষয়ে তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা তদন্তের জন্য হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা.

আশুতোষ সিংহকে প্রধান করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব ওষুধ কীভাবে স্টোরে জমা হলো, তার কোনো সঠিক নথি দেখাতে পারেনি। তবে এর আগে দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালে আসা রোগীদের বিনা মূল্যের সরকারি ওষুধ যথাযথভাবে সরবরাহ না হয়ে বাইরে পাচার হচ্ছিল। চলতি বছরের ২৬ মে সুনামগঞ্জে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানিয়েছিলেন দুদক কর্মকর্তারা।

হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরা নানা অভিযোগ তুলে জানান, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ নষ্ট হয়েছে এটা কেবল দুঃখজনক নয়, এটি স্বাস্থ্যখাতের চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র। এই বিপুল পরিমাণ ওষুধ সময়মতো বিতরণ না হওয়ায় হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের হাজার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যেখানে দেশের মানুষ ওষুধ কিনতে না পারায় কষ্ট পাচ্ছে, সেখানে এ ধরনের গাফিলতি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ রুবেল মিয়া বলেন, “আমাদের সরকারি হাসপাতালের সেবা তো নিম্নমানেরই। আর একটা স্যালাইন ও ওষুধ দেয় না ঠিক মতো। বাইরে থেকে কিনে আনা লাগে। যা যা আছে সব কিছুই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। এই যে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ নষ্ট হইছে এগুলো যদি সুনামগঞ্জের রোগীরা পেতো, তাহলে গরিব রোগীদের কত উপকার হতো!” 

রোগীকে রক্ত দিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, “আজকে আমি একজন রোগীকে রক্ত দিতে আসছিলাম সদর হাসপাতালে। এখানে আসার পর যেটা মনে হলো- এই হাসপাতাল থেকে রক্তটা দেওয়াও একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। যেখানে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়, সেখানে রক্ত দেওয়ার পর একটু তুলা ও ব্লাড আটকার ব্যান্ডেজ নেই! খুবই বাজে অবস্থা।”

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সুনামগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘‘আমাদের বাংলাদেশে ওষুধের দাম সবচেয়ে বেশি। এই ওষুধ কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ খুব হিমশিম খাচ্ছে। আর এদিকে আমাদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ পড়ে থেকে মেয়াদ নষ্ট হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই ও সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে সকল গাফিলতিকারী ও সকল জড়িতদের বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।”

বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেওয়া সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের প্রায় আড়াই কোটি টাকার মূল্যবান ওষুধ প্রায় ছয় মাস আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এসব ওষুধ এখনো বাক্স বন্ধ অবস্থায় স্টোরে পড়ে আছে।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে যে ওষুধগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলো হলো- Syp. Kitomar রয়েছে ১ হাজার পিস। এটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে। Tab. Cefuroxime 250mg রয়েছে ৫০ হাজার ৭৫০ পিস। Tab. Bisoprolol 5mg রয়েছে ২২ হাজার ৩২০ পিস। Tab. Montelukas 10mg রয়েছে ছয় হাজার। 

Tab. Montelukas 4mg রয়েছে এক লক্ষ পিস। Tab. N-Bion রয়েছে ১৬ হাজার পিস। Tab. Rosuba 5mg রয়েছে ৫৩ হাজার ৪০০ পিস। Tab. Fexofenadin 120mg রয়েছে ২২ হাজার ৪০০ পিস। Tab. Naproxen 500mg রয়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার ৪০০ পিস।

Tab. Atorvastatin 10mg রয়েছে তিন লাখ ৬৭ হাজার পিস। Tab. Rabeprazole 20mg রয়েছে ১০ হাজার পিস। এই ওষুধগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে গেল এপ্রিল মাসে। Tab. Glucozid 80mg রয়েছে ২৫ হাজার ৬০০ পিস। Tab. Lopiral Plus 75mg রয়েছে আট লাখ ৯১ হাজার পিস। এই দুই রকমের ওষুদের মেয়াদ শেষ হয়েছে বিগত মার্চ মাসে। Tnj. Ceftriaxone 250mg রয়েছে ২২ হাজার পিস। এটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জুন মাসে। Tab. Esoral 20mg রয়েছে ১৮ হাজার ৯০০ পিস। এটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১ আগস্ট। এই পনেরো পদের ওষুধগুলোর বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই তালিকার বাইরেও আরও অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রয়েছে হাসপাতালের স্টোর রুমে।

সুনামগঞ্জ (২৫০ শয্যা বিশিষ্ট )সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনস্যালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ বলেন, “আমাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুমন বনিক স্যারের অনুপস্থিতিতে আমি একদিনের (ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক) দায়িত্বে আছি। ওষুধ নষ্টের বিষয়ে একটি অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, আমরা বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি।” 

হাসপাতালে নবনিযুক্ত স্টোর কিপার রুপম কুমার দাস বলেন, ‘আমি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে যোগ দিলেও এখন পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।’’

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘স্টোর রুমে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রয়েছে এই বিষয়ে কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলতে পারব না।’’

এ বিষয়ে জানতে সদ্য বদলি হওয়া তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমানের নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন বলেন, “এসব বিষয়ে আমার কিছুই জানা নাই। আমি সম্পূর্ণ আলাদা। তবে এই অভিযোগের আলোকে তদন্ত কমিটি হয়েছে, আশা করি সঠিক কারণ ও কারা অপরাধী তা জানা যাবে।”

সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “আমরা জেনেছি হাসপাতালে বিপুল পরিমাণ ওষুধ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই তদন্ত করে দেখব এই কাণ্ডে কারা কারা জড়িত রয়েছে।”

ঢাকা/মনোয়ার/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ম য় দ শ ষ হয় ছ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনকে নিয়ে মন্তব্য, বন্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘জিমি কিমেল লাইভ!’ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা হয়েছে। মার্কিন নেটওয়ার্ক এবিসি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাতিলের পেছনে মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে শোর হোস্ট জিমি কিমেলের বক্তব্য, যেখানে তিনি কনজারভেটিভ প্রভাবশালী চার্লি কার্কের হত্যার পটভূমিতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। খবর ভ্যারাইটির
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী লেট নাইট শোগুলোর একটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত করার এই চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক বলে অভিযোগ করে নানা পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন।

‘জিমি কিমেল লাইভ!’–এর সম্প্রচার বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি আমেরিকার জন্য দারুণ খবর।’
চার্লি কার্ক ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র। গত সপ্তাহে ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গুলিতে নিহত হন। ২২ বছর বয়সী টাইলার রবার্টসন এই হত্যার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

জিমি কিমেল। এএফপি ফাইল ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ