এলাকাবাসীর চোখে ভিপি সাদিক কায়েম যেমন
Published: 11th, September 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন শিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাদিক কায়েম। তার এই সাফল্যে আনন্দিত পরিবার ও খাগড়াছড়িবাসী। তারা মনে করেন, এ বিজয় ব্যক্তি বিশেষের নয়, যারা সৎ সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেন এ বিজয় তাদের জন্য।
ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েমের গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদরের নয়নপুরে। তার বাবার নাম মো.
আরো পড়ুন:
ডাকসুর ভিপি-জিএস দুজনই বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার ছাত্র
সারা দেশে ছাত্রশিবিরের ২ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা
ছেলের সাফল্যে খুশি মো. আবুল কাশেম বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই প্রতিবেদককে জানান, ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় খুশি তিনি। যারা ভোট দিয়ে সাদিক কায়েমকে নির্বাচিত করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
আবুল কাশেম বলেন, “আমার ছেলে যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি।”
প্রতিবেশী মায়ারানী দে সাদিক কায়েমকে ছোট থেকে কাছ থেকে দেখেছেন। সাদিক যেমন মেধাবী তেমনি ভদ্র ছেলে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “তার এ সাফল্য শুধু পরিবারের নয়, পুরো খাগড়াছড়িবাসীর।”
এ কি কথা বললেন অপর প্রতিবেশী মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, “সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় আমরা অত্যান্ত আনন্দিত, গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত। তার এ বিজয় ব্যক্তি বিশেষের নয়, যারা সৎ সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেন এ বিজয় তাদের জন্য।”
চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু সালেহ মুহাম্দ ছলিমুল্লাহ জানান, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম ও জিএস এস এম ফরহাদ এই মাদরাসার ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষা জীবনে তারা অত্যন্ত মেধাবী।
ভিপি হয়ে বদলে জাবেন না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করে শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় সবটুকু দিয়ে পাশে থাকার কথা দিয়েছেন সাদিক কায়েম। গতকাল সকাল সোয়া ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাদিক কায়েম বলেন, “জয় পরাজয়ের কিছু নেই। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। জুলাইয়ের আকাঙ্খার বিজয় হয়েছে।” এ সময় তিনি জুলাই শহীদ, ও একাত্তরের শহীদদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর নেতৃত্বের আমানত রেখেছেন। তারা আমাদের প্যানেলের ওরপ যে আমানত রেখেছেন সেই হক আদায় করব। কথা দিচ্ছি, স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করব। আমি ভিপি হিসেবে নয়, বড় ভাই, বন্ধু, ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে চাই।”
গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ইসলামী ছাত্রশিবির। ব্যাপক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর মধ্যেই ডাকুস নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয় সংগঠনটি। নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও আন্তরিক হওয়ায় ভোটমুখী হয় ডাকসু। শেষপর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যাপক নিরাপত্তা বয়ল তৈরি করে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়।
আটটি কেন্দ্রে আট শতাধিক বুথে ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে রাত দেড়টার দিকে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রী মিলে মোট ১৮টি হল। একে একে ফলাফল ঘোষণা করা হয়, যা শেষ করতে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল হয়ে যায়। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
২২ নম্বর ব্যালটে ভিপি পদে ১৪ হাজার ৪২ পেয়ে জয়ী হয়েছেন সাদিক কায়েম। নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান, তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। জিএস পদে এস এম ফরহাদ হোসেন ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে জিতেছেন। এই পদে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৮৩ ভোট।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এ ব জয় হয় ছ ন ম দর স
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ