লালমনিরহাট স্টেশনের পরিচ্ছন্ন সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ
Published: 12th, September 2025 GMT
রেলওয়ের স্টেশনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে ঝাড়ুসহ পরিষ্কার সামগ্রী কেনার চার মাসের অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক পরিবহন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী (বড় বাবু) নুরুজ্জামান সরকার সোহেলের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি বিভাগ লালমনিরহাট। এ বিভাগীয় রেলওয়ের স্টেশনগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সরকারি ও বেসরকারি দুইভাবে পরিচ্ছন্নকর্মীসহ পরিষ্কারক সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। বেসরকারিভাবে পরিচ্ছন্নকর্মী ও পরিষ্কারক সামগ্রী সরবরাহ করতে প্রতি দুই বছর পর দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। গত দুই অর্থ বছরে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলের ১৪টি স্টেশনে এসব সরবরাহের কাজ পান ক্লিন সার্ভিস নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
চুক্তি মতে, প্রতি স্টেশনে একজন পরিচ্ছন্নকর্মী ও প্রয়োজনীয় পরিষ্কারক সরবরাহ করবেন। পরিষ্কারকের মধ্যে রয়েছে, হারপিক, সাবান, লাইজল, ফুল ঝাড়ু, কাঠের ঝাড়ু, ফেসিয়াল টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, এয়ার ফ্রেশনার, এডোনিল, ড্যামফিক্স, হ্যান্ডওয়াশ, টয়লেট ব্রাশ, বেলচা, অ্যারোসল, মপ, ফিক্সল ও বালতি। ১৪টি স্টেশন শুধু পরিষ্কার বাবদ প্রতিমাসে বিল ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
বেসরকারিভাবে পরিচালিত স্টেশনগুলো হলো- আদিতমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, বুড়িমারী, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, দিনাজপুর, সেতাবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়।
নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদার এসব পরিষ্কারক সামগ্রী স্টোরকিপারের কাছে বুঝে দেবেন। তিনি তা বুঝে নিয়ে স্টেশনগুলো সমহারে বণ্টন করবেন। আর এ বিভাগের স্টোরকিপারের দায়িত্বে রয়েছেন লালমনিরহাট বিভাগীয় বাণিজ্য পরিবহন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী (বড় বাবু) নুরুজ্জামান সরকার সোহেল।
গত অর্থ বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে পরিচালিত ১৪টি স্টেশনে পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন প্রদান করা হলেও কোন পরিষ্কারক সামগ্রী প্রদান করা হয়নি। বলা হয়েছে, নিজের মত করে সামগ্রী ক্রয় করে স্টেশন পরিষ্কার করতে। জুনের শেষে বিল তুলে সমন্বয় করা হবে। এজন্য পণ্য না দিয়েও স্টেশন মাস্টারদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন সংগ্রহ করেন অফিস সহকারী সোহেল। এ প্রত্যয়ন সংগ্রহ করে ঠিকাদারের কাছ থেকে বিল উত্তোলন করা হয়।
এমন অনিয়মের কারণে চলতি অর্থ বছরে কোন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। সবগুলো স্টেশন সরকারিভাবে সরবরাহ করা প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে রেলভবন। সেই প্রক্রিয়াও সম্পন্ন না হওয়ায় গত তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না পরিচ্ছন্নকর্মীরা। পরিষ্কারক সামগ্রী দেওয়া হলেও তা নামমাত্র। দুই স্টেশন মিলে একটা ঝাড়ু বা একটা হারপিকের বোতল। যা দিয়ে একটা স্টেশন এক দিনও পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব নয়। ফলে নোংরা আবর্জনায় পড়ে থাকছে রেলওয়ে স্টেশনগুলো। এ কারণে দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
স্টেশনগুলো সরেজমিনে গিয়ে নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করলে ঝাড়ুসহ পরিষ্কারক সামগ্রীর টাকা লোপাটের তথ্য বেরিয়ে আসে। স্টোরকিপার ও ঠিকাদারের দিকে অভিযোগের তীর ছোড়েন স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টরা।
বুড়িমারী স্টেশনের কর্মচারী জুয়েল ইসলাম বলেন, “আমি পাটগ্রাম ও বুড়িমারী স্টেশনের জন্য পরিষ্কারক সামগ্রী নিতে গেলে স্টোরকিপার দুই স্টেশন মিলে মাত্র একটি ঝাড়ু ও দুইটি ফুল ঝাড়ু দেন। একটা ঝাড়ু দিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরের দুই স্টেশন কীভাবে ঝাড়ু দিবে?”
বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী মালতি রানী বলেন, “আগে চার মাস বেতন পেলেও হারপিক, সাবান, ঝাড়ু কিছুই পাইনি।”
আদিতমারী স্টেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী রবি বাসপোর বলেন, “সামনে পূজা, এদিকে তিন মাস বেতন নেই। এখন শুধু একটা ঝাড়ু পেলেও আগে চার মাস কোন সামগ্রী পাইনি। নিজের টাকায় স্টেশন পরিষ্কার রাখছি।”
পীরগঞ্জ স্টেশন মাস্টার সুজন বলেন, “গত অর্থ বছরের শেষ চার মাসের মধ্যে মাত্র এক মাসের পরিষ্কারক সামগ্রী বাবদ এক হাজার টাকা দিয়েছে। সেটাও ডিআরএম স্যারের পরিদর্শনের কারণে পেয়েছি।”
সোনাতলা স্টেশন মাস্টার খলিল বলেন, “গত অর্থ বছরে বোনাপাড়া স্টেশনে থাকা অবস্থায় এক বছরে কোনো বরাদ্দই পাইনি। অফিস বলেছে বরাদ্দ নেই।”
বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক বুড়িমারী ও পাটগ্রাম স্টেশন মাস্টার নুর আলম বলেন, “প্রত্যয়ন নিয়েও গত অর্থ বছরের মার্চ থেকে জুনে চার মাসে কোন পরিষ্কারক সামগ্রী দেওয়া হয়নি। একটি স্টেশন পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই হাজার টাকার পরিষ্কারক সামগ্রী প্রয়োজন হয়। ওই চার মাস নিজের টাকায় কখনো বাকিতে পণ্য কিনে স্টেশন পরিষ্কার রেখেছি। কিন্তু সেই টাকা আজও পাইনি।”
ক্লিন সার্ভিসের মালিক ওয়ালিউর রহমান বলেন, “প্রতি মাসে পরিষ্কারক সামগ্রী ক্রয় করে সরবরাহ করার জন্য অফিস সহকারী সোহেলকে তার রূপালী ব্যাংকের হিসাব নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। অসুস্থতায় দেশের বাইরে থাকায় চার মাসে পণ্য না দিয়ে সোহেলকে টাকা পাঠিয়ে দিতে হয়েছে। তিনি তা পৌঁছে না দিলে সেটা তার ব্যাপার। আমি প্রত্যয়ন পেয়েছি, বিলও পেয়েছি।”
অফিস সহকারী ও স্টোরকিপার নুরুজ্জামান সরকার সোহেল বলেন, “চার মাস নয়। শুধু মাত্র এক মাসের টাকা পাবেন তারা। ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা পেলে তা দ্রুত সমাধান করা হবে।”
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক পরিবহন কর্মকর্তা (ডিসিও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “স্টেশন মাস্টারদের প্রত্যয়ন স্বাপেক্ষে বিল দেওয়া হয়েছে। তারা না পেয়ে প্রত্যয়ন কেন দিবেন? এমন হলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/সিপন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ট রক প র সরক র ভ ব স ট শনগ ল পর ষ ক র ন পর ষ ক র লওয় র ন সরক র ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।