ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে প্রতিদিনই প্রাণহানি ঘটছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ক্ষুধায় আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

আরো পড়ুন:

জিতলে নিউ ইয়র্ক শহরে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করব: মামদানি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরো ৫০ ফিলিস্তিনি

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭ জনের মরদেহ হাসপাতালে পৌঁছেছে এবং আরো ২০৫ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ৬৪ হাজার ৮০৩ জনে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে অবরুদ্ধ নগরীতে আহতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৬৪ জনে পৌঁছেছে।

মন্ত্রণালয়ের আরো জানিয়েছে, নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে ৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। এতে করে গত ২৭ মে থেকে মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ২ হাজার ৪৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরো ১৮ হাজার ১১৭ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে গাজা উপত্যকায় সব ধরনের আন্তর্জাতিক জরুরি সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। যা গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দার জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দুর্ভিক্ষ, ব্যাপক রোগব্যাধি দেখা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো ভেঙে পড়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে গাজায় দুর্ভিক্ষে মোট মৃতের সংখ্যা ৪২০ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১৪৫ জন শিশু রয়েছে।  

 

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

জাতিসংঘ বলছে, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী