অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিল ভারতের নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠন সিপিআই-মাওবাদী
Published: 19th, September 2025 GMT
ভারতের নিষিদ্ধ ও সশস্ত্র বামপন্থী সংগঠন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মাওবাদী (সিপিআই-মাওবাদী) এই প্রথম সশস্ত্র লড়াই থেকে সরে আসার আবেদন জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
সিপিআই-মাওবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে। এর শিরোনাম ‘অস্থায়ীভাবে সশস্ত্র আন্দোলন বন্ধ করে উৎপীড়িত মানুষের লড়াইয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার’। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই প্রথম বিবৃতিতে একটি ই–মেইল দিয়ে বলা হয়েছে, এই ই–মেইলের মাধ্যমে সিপিআই-মাওবাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে শান্তি আলোচনা নিয়ে নাগরিক সমাজ বা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা দলীয় নেতৃত্ব তাঁদের বক্তব্য জানাতে পারে।
প্রায় এক বছর ধরে রাজ্য ও কেন্দ্রের সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ছত্তিশগড় রাজ্য ও এর সংলগ্ন অঞ্চলে প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বড় একটা অংশ রয়েছে। সাধারণ আদিবাসীরাও রয়েছেন, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাধিক মানবাধিকার ও নাগরিক সংগঠন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাওবাদীরা স্পষ্ট ভাষায় অস্ত্র ত্যাগ করতে চেয়েছেন। বিবৃতির এক জায়গায় লেখা হয়েছে, ‘আমাদের দলের মাননীয় সাধারণ সম্পাদক যে শান্তি আলোচনা শুরু করেছিলেন, তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট করছি।
পরিবর্তিত বৈশ্বিক ও জাতীয় পরিস্থিতির আলোকে এবং সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অস্ত্র সংবরণ করে মূলস্রোতে যোগদানের ধারাবাহিক অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অস্ত্র সংবরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সশস্ত্র সংগ্রামে সাময়িক বিরতি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি, আগামীতে যতটা সম্ভব জনসাধারণের ইস্যুতে লড়াই করা সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।’
এরপর বলা হয়েছে, সিপিআই–মাওবাদী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিযুক্ত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।
কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তবে আমাদের পরিবর্তিত মতামত দলকে জানাতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। পরবর্তী সময়ে যাঁরা পার্টির অভ্যন্তরে এই বিষয়ে একমত হবেন বা বিরোধিতা করবেন, তাঁরা নিজেদের মধ্য থেকে একটি প্রতিনিধিদল গঠন করবেন। (এই দল) শান্তি আলোচনায় সম্মত হবে এবং অংশগ্রহণ করবে।’
নিজেদের মধ্যে আলাপ–আলোচনার জন্য সিপিআই–মাওবাদী সরকারের কাছে এক মাস সময় চেয়ে বলেছে, এ মুহূর্তে পার্টির কিছু কর্মী ও নেতৃত্বের একাংশই নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলার অবস্থায় রয়েছেন। এই বিবৃতির বিষয়ে তাঁদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। পার্টির যে কর্মীরা জেলে বা অন্য রাজ্যে রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
বিবৃতিটি গত ১৫ আগস্ট লেখা হলেও সম্প্রতি এটি প্রচারমাধ্যমের হাতে এসেছে। বিবৃতির শেষে কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র অভয়ের সই রয়েছে। বিবৃতিতে তাঁর ছবিও রয়েছে।
ভিডিও ফোনে কথাবার্তার মাধ্যমে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাথমিক স্তরে আলাপ-আলোচনা শুরু করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি প্রয়োজন। একই সঙ্গে মাওবাদীদের ধরতে যে অভিযান চলছে, তা–ও বন্ধ রাখা প্রয়োজন। বিষয়টিকে বাস্তবায়িত করতে সরকার ও মাওবাদীদের মধ্যে থাকা নাগরিক সমাজের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন মাওবাদীরা।
অভয় বলেছেন, ‘সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ রক্তস্নাত অরণ্য অঞ্চলে শান্তি স্থাপন করবে।’ এই বিবৃতি মাওবাদীদের একেবারে শীর্ষ নেতৃত্বের বিবৃতি হলেও দলের গোটা নেতৃত্ব, অর্থাৎ পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য মেনে নিয়েছেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
মাওবাদীরা গত এক বছরে ছত্তিশগড় ও এর সংলগ্ন অঞ্চলে বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। এই বিজ্ঞপ্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে, তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে গত ২১ মে ছত্তিশগড়ের অরণ্য অঞ্চলে পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বাসাভারাজুসহ মোট ২৮ জন সংগঠকের মৃত্যু সিপিআই–মাওবাদীর জন্য বড় ধাক্কা। এর আগেই একটা শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া মাওবাদীরা শুরু করার চেষ্টা করেছিলেন, যা সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুর কারণে স্থগিত হয়ে যায়।
মোটামুটি স্পষ্টভাবেই মাওবাদীরা অস্ত্র ত্যাগ করে শান্তি আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। মাওবাদীরা দলের নেতৃত্ব, পার্টির কর্মী, জেলবন্দী কর্মী ও নেতাদের পাশাপাশি দলের কাজকর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের বক্তব্য ই–মেইল ও একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মারফত জানতে চেয়েছেন। তবে সরকার যাতে অবিলম্বে মাওবাদীদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করে তার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র সরকার এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বিজেপিশাসিত ছত্তিশগড় রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা বিষয়টি নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখাননি। তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, মাওবাদীরা এখনো কিছু শর্ত সাপেক্ষে কথা বলতে চাইছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি গত ১৫ আগস্ট প্রকাশ করা হয়েছে, ফলে এটি বিশ্বাসযোগ্য কি না, তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। আবার এ–ও মনে রাখা প্রয়োজন যে এই কথা বলার পাশাপাশি মাওবাদীরা গ্রামবাসীদের হত্যা করেছে এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আহত করেছে।’
তবে সরকারের মধ্যে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ছত্তিশগড়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র সশস ত র আম দ র স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
মতবিনিময় সভা: নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদ্যাপনে সবার সহযোগিতা আহ্বান
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপনে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা সেনানিবাসের ১০ সিগন্যাল ব্যাটেলিয়ন। দুষ্কৃতিকারীর বিষয়ে বা কোনো অঘটনের আশঙ্কা থাকলে, সে বিষয়ে প্রশাসনকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের ১০ সিগন্যাল ব্যাটেলিয়নে ভাষানটেক আর্মি ক্যাম্প আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। এ সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ১০ সিগন্যাল ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হামিদ বলেন, দুর্গাপূজার সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী পরিস্থিতি নস্যাৎ করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা কাউকে সেই সুযোগ দেবো না।
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু প্রতিমা ভাঙচুর নয়, পূজায় আসা ব্যক্তিদের হয়রানি বা অসম্মান করা অপরাধ। কেউ এমন ঘটনায় জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—আর্মি, পুলিশ, বিজিবি—সবাই মিলে কাজ করছে।’
আরও পড়ুনদুর্গাপূজায় নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ: আইজিপি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫সভায় ভাষানটেক থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতারা জানান, গত বছরের মতো এবারও দুর্গাপূজায় এলাকাবাসীর জন্য মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করবে সংগঠনটি। নেতারা জানান, চার-পাঁচ দিন পূজামণ্ডপ এলাকায় ভিড় থাকে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই আমরা চিকিৎসক ও ওষুধসহ মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করব।
এ প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হামিদ বলেন, যে কোনো উদ্যোগ পূজা উদ্যাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে। কারণ, এটি তাঁদের আয়োজন, তাঁদেরই জানাতে হবে যে, তাঁরা কোন ধরনের সহায়তা চান।
আরও পড়ুনসবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে: ডিএমপি কমিশনার৯ ঘণ্টা আগেলেফটেন্যান্ট কর্নেল হামিদ আরও বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত আছি। কোনো সমস্যা হলে জানাবেন। সবাই মিলে যেন সুন্দরভাবে এ আয়োজন শেষ করতে পারি।’
মতবিনিময় সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগ ও ভাষানটেক থানার কর্মকর্তা, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনপূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫