বিতর্কে শেষ হলো বিপিএলের চট্টগ্রামের পর্ব, প্লে’অফের দৌড়ে কারা?
Published: 24th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চট্টগ্রাম পর্ব বরাবরের মতো এবারও ছিল বিতর্কে মোড়ানো। খেলা মাঠে গড়ানোর আগেই শুরু হয় ক্রিকেটারদের পাওনা-দেওনা নিয়ে বিতর্ক; যা চলে শেষ দিন পর্যন্ত। তাতে ঢাকা পড়ে যায় মাঠের পারফরম্যান্স।
১৬ জানুয়ারি ঢাকা ক্যাপিটালস-ফরচুন বরিশাল ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় চট্টগ্রাম পর্ব, আর শেষ হয় ২৩ জানুয়ারি খুলনা টাইগার্স-সিলেট স্ট্রাইকার্স ম্যাচ দিয়ে।
১৫ জানুয়ারি বিতর্কিত কাণ্ডে শিরোনাম হয় পাঁচ বছর পর বিপিএলে ফেরা দল দুর্বার রাজশাহী। চেক বাউন্স হওয়ায় অনুশীলনে নামে না দলটির ক্রিকেটাররা, এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ ছুটে যান চট্টগ্রামে।
আরো পড়ুন:
খুলনার প্রতিশোধে শেষ বিপিএল চট্টগ্রাম পর্ব
ব্যাটিং ছায়া থেকে বেরিয়ে বোলিং আনন্দে বার্ল
মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আশ্বস্ত করেন ক্রিকেটারদের। ৬৮ লাখ টাকা নেন গ্যারান্টি মানি। পরিস্থিতি শান্ত করেন।
একই কাণ্ড ঘটে চিটাগং কিংসের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। তাদেরও চেক বাউন্স হয়। রাজশাহীর মতো বয়কটের পথে হাঁটেননি তারা। তবে একসঙ্গে তিনজন বিদেশি ক্রিকেটার একাদশ থেকে বাদ পড়ার পেছনে পাওনা-দেওনা ইস্যুই কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী এবারের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি। মালিকানা বদল হওয়ায় চিটাগংকেও নতুন বলতে হবে। বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে বিপিএল মাঠে গড়ালেও মাঝ পথে এসে হোঁচট খেতে হয়েছে বড় বিতর্কে।
চট্টগ্রাম পর্ব শেষে শুরু হয়েছে প্লে’অফের হিসাব-নিকাশ। সর্বোচ্চ ১০টি করে ম্যাচ খেলেছে দুর্বার রাজশাহী-ঢাকা ক্যাপিটালস। দল দুটির অবস্থান পঞ্চম ও ষষ্ঠ। মাত্র তিন জয় পাওয়া ঢাকার প্লে’অফের দৌড় শেষ বলাই চলে। চার জয় নিয়ে এখনো স্বপ্ন দেখতে পারে রাজশাহী। তা নির্ভর করছে যদি-কিন্তুর উপর।
৯ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৮ জয়ে প্লে’অফ নিশ্চিত রংপুর রাইডার্সের। তাদের লড়াই এখন শীর্ষ দুইয়ে থাকার। ৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দৌড়ে এগিয়ে আছে ফরচুন বরিশাল। এক ম্যাচ জিতলেই নিশ্চিত হবে প্লে’অফ। এরপর হিসাব আসবে কোয়ালিফায়ার নাকি এলিমেনেটর।
৯ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে চিটাগং কিংস। দুই ম্যাচ জিতলেই নিশ্চিত হবে প্লে’অফ। এক ম্যাচ জিতলেও সম্ভাবনা থাকবে, তবে নির্ভর করবে রান রেটের উপর। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট দ্বোটানায় আছে খুলনা টাইগার্স। শেষ তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতলে নিশ্চিত প্লে’অফ। এর কম জিতলে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলের দিকে।
বাকি রইলো সিলেট স্ট্রাইকার্স। ৯ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লে’অফের দৌড়ে ছিটকে গেছে বললেই চলে। সঙ্গে ঢাকাও একই পথে। শেষ পর্যন্ত প্লে’অফের চারটি জায়গার লড়াইয়ে আছে পাঁচ দল। রংপুর-বরিশালের এক প্রকার নিশ্চিত হওয়ায় আরও স্পষ্ট করে বললে দুটি স্থানের জন্য লড়াই করবে তিন দল।
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’