‘আমাদের লঞ্চ যেখানে নোঙর করা ছিল, সেখানে ছিল কুমির’
Published: 2nd, February 2025 GMT
চঞ্চল চৌধুরী। অভিনেতা। গত বুধবার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিরিজ ‘ফেউ’। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগনা জেলার মরিচঝাঁপিতে ঘটে যাওয়া গণহত্যার পটভূমিতে সিরিজটি গড়ে উঠেছে। এই সিরিজ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে–
আপনার অভিনীত ‘ফেউ’ সিরিজ নিয়ে বলুন?
একটি জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার লড়াই নিয়ে তৈরি হয়েছে সিরিজটি। তাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়া। তাদের জীবনের সংকট, জীবন-মরণ– সবকিছু মিলিয়ে অনবদ্য একটি গল্প। এটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হলেও গল্পটি খুব বেশি মানুষ জানে না। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগনা জেলার মরিচঝাঁপির গণহত্যা নিয়ে সিরিজের গল্প। নির্মাতার কাছে থেকে যখন প্রথম গল্পটি শুনি, তখন খুব চিন্তায় ছিলাম কীভাবে সে পর্দায় দেখাবে। সেই কঠিন কাজটি খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছেন নির্মাতা। গল্পটি দর্শকদের ভিন্ন দুটি সময়ের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়, যার একটি ১৯৭৯ সালের, অন্যটি ২০০২ সালের। দর্শকরাও এই দুই সময়ের ট্রানজেকশন বেশ পছন্দ করছেন। কেউ অভিনয়ের মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন, কেউ কারিগরি দিক নিয়েও কথা বলেছেন। এই সিরিজে আমি অভিনয় করেছি সুনীল চরিত্রে, যিনি একজন ফটোগ্রাফার।
সিরিজটির শুটিংয়ের সময়কার কথা মনে আছে?
হ্যাঁ। আমরা যখন শুটিং করেছি, তখন প্রচণ্ড ঠান্ডা ছিল। মাসখানেক সুন্দরবনে শুটিং হয়েছে, এর মধ্যে আমি ছিলাম ২০ দিন। রাতে যখন লঞ্চে ঘুমাতাম, খুব ঠান্ডা লাগত। শীতের জামাকাপড় পরেই ঘুমাতাম। তবে ঠান্ডার চেয়ে ভয়ের বিষয় ছিল কুমির। আমাদের লঞ্চ যেখানে নোঙর করা ছিল, সেখানে ছিল কুমির। সকালে জানালা দিয়ে মুখ বের করলেই কুমিরসহ বিভিন্ন পশুপাখি দেখা যেত। আমরা লঞ্চ থেকে শুটিং স্পটে যেতাম ছোট ছোট ট্রলারে। রাতেও শুটিং করতে হতো। এক কথায় বলতে গেলে, খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের শুটিং হতো।
ওটিটি মাধ্যমে এখন প্রায় একই ধরনের গল্প দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে আপনার কী মনে হয়?
এটি হয়তো সত্যি, আমরা একই ধরনের গল্পের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। নতুন নতুন গল্প নিয়ে কাজ করলে দর্শকের আগ্রহ বেশি থাকে। যখন নতুন ভাবনা দিয়ে দর্শকদের চমকে দেওয়া যায়, তখনই তারা কাজটি দেখে। দর্শক সবসময় আমাদের কাছে ভালো কাজ চায়। আমাদের প্রচুর গল্প আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাখ লাখ গল্প ছড়িয়ে আছে। যাঁরা নতুন গল্প ও ভাবনা নিয়ে কাজ করবেন এবং সেটি যদি রিয়েলিটির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে, তাহলে দর্শক সবসময় তাদের সঙ্গে থাকবে।
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে। গত মাসে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় ‘পদাতিক’ সিনেমাটি দেখানো হলো। এবারই প্রথম দেশের দর্শক সিনেমাটি দেখার সুযোগ পেল। উৎসবে অনেকেই আপনার উপস্থিতি আশা করছিলেন। আপনি ছিলেন না কেন?
প্রথমবার বাংলাদেশে সিনেমাটি দেখানো হলো। উৎসবে আমি থাকতে পারলে আরও ভালো লাগত। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় ছিল। তাই যাওয়া হয়নি। পদাতিকের প্রদর্শনীর পর অনেকেই আমাকে ফোন করে ভালো লাগার কথা বলছেন। পদাতিকে কাজের সময়ও আমার অন্যরকম আগ্রহ ছিল। মৃণাল সেনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিচালকের চরিত্রে অভিনয় করব, এটি চিন্তা করতেই অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছিল। ভারতবর্ষে লাখ লাখ অভিনেতা আছেন। অনেকেই মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই সৌভাগ্যটা আমার হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশেও পদাতিক মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু পায়নি। ভবিষ্যতে কি মুক্তির কোনো সম্ভাবনা আছে?
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভারত ও বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। আমি খুব করে চাই, সুযোগ থাকলে সিনেমাটি যেন এ দেশের হলে মুক্তি দেওয়া হয়। চলচ্চিত্র উৎসবে সবাই সিনেমাটি দেখতে পাননি। সিনেমা হলে রিলিজ হলে সাধারণ দর্শকেরা দেখার সুযোগ পাবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদ ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস