ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন ঘাঁটি উন্মোচন করল ইরান
Published: 2nd, February 2025 GMT
নতুন একটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করেছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ইরানের সামরিক বাহিনী ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) নৌবাহিনী দক্ষিণ ইরানের উপকূলীয় অঞ্চলে আরেকটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করেছে।
নতুন ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচনের পর আইআরজিসি নৌবাহিনী প্রধান আলিরেজা তাংসিরি বলেছেন, “আমরা যেকোনো শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছি- যেকোনো মাত্রায় ও যেকোনো উপায়ে।” খবর ইরান ইন্টারন্যাশনালের।
আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি ইরানের শত্রুদের প্রতি একটি বার্তা হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেন, “শত্রুকে আরো সুনির্দিষ্ট হিসাব কষতে ও নিশ্চিত হবে যে, তারা এমন ভুল না করে যা নিজেদের এবং অন্যদের উভয়কেই সমস্যায় ফেলবে।”
আরো পড়ুন:
মহানবীকে অবমাননার দায়ে ইরানে পপ তারকার মৃত্যুদণ্ড
ইরান দূতাবাসে ‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার
আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার সতর্ক করে আরও বলেন, “যদি তারা কোনো ভুল করে, তাহলে ‘আপনি যেসব সিস্টেম দেখতে পাচ্ছেন’ তা সক্রিয় করা হবে।”
আইআরজিসির নৌবাহিনী কমান্ডার আলিরেজা তাংসিরির মতে, আইআরজিসি নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও উন্মোচন করেছে, যার রেঞ্জ ১,০০০ কিলোমিটারের বেশি এবং এটি অ্যান্টি-জ্যামিং ক্ষমতা সম্পন্ন।
আইআরজিসি-অনুমোদিত সাবেরিন নিউজ জানিয়েছে, শত্রু পক্ষের ইলেকট্রনিক যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আইআরজিসির নতুন ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত প্রস্তুত করে উৎক্ষেপণ করা যায়।
ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরে এ নিয়ে তিনটি ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করল ইরান। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণের দুই দিন আগে আইআরজিসি নৌবাহিনী পারস্য উপসাগরের একটি অপ্রকাশিত স্থানে একটি ভূগর্ভস্থ নৌ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উন্মোচন করে।
সেসময় একটি যুদ্ধ মহড়ার সময় গোপন ঘাঁটিটি পরিদর্শন করার পর আইআরজিসি প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি বলেন, ঘাঁটিটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং দূরবর্তী যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম জাহাজের বেশ কয়েকটি ঘাঁটির মধ্যে একটি।
তার আগে, গত ১০ জানুয়ারি আইআরজিসির অ্যারোস্পেস ফোর্স রাষ্ট্রীয় টিভিতে ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্রের আরো একটি ঘাঁটির উন্মোচন প্রচার করে। আইআরজিসি-অনুমোদিত তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল এবং অক্টোবরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এই ঘাঁটিটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
এর ক্ষমতা সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই পর্বতমালার নিচে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অগ্ন্যুৎপাত করতে পারে।”
ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে মিত্রদের টানা পরাজয়ের পর ইরান গত কয়েক সপ্তাহে একাধিক সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে নাতানজের মতো পারমাণবিক স্থাপনার কাছে বিমান প্রতিরক্ষা মহড়া এবং তেহরানে ১,১০,০০০-শক্তিশালী বাসিজ মোবিলাইজেশন। এসব সামরিক মহড়া পরিচালনা করা হয় সেপ্টেম্বর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি মিত্রদের টানা পরাজয়ের পর, এই অঞ্চলে ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদর্শন ও শক্তির বার্তা প্রদানের জন্য।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কম ন ড র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।