করব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উদ্যোক্তাদের ক্রমেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে করব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে করের নিয়মিত পরিবর্তন, অগ্রিম আয়কর ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কের বোঝা এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশের বেসরকারি খাতের ওপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপের সৃষ্টি হচ্ছে।

দেশে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও যানজটের অবনতির কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, ঋণপত্র (এলসি) খুলতে জটিলতা, এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তিতে পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ সুদ স্থানীয় শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ অবস্থায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় জোর দেন তিনি।

রাজধানীর তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বারের আয়োজিত ‘আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক, যানজট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় এ কথা বলেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ। ডিসিসিআইর গুলশান সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এ সভায় গুলশান, মহাখালী, বনানী ও বাড্ডা এলাকার ১৪টি বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

ঢাকা চেম্বারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ) মো.

সাইয়েদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (মূসক বাস্তবায়ন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. তারেক মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি দক্ষিণ পাঁকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, শতভাগ মার্জিনের কারণে ব্যবসায়ীরা ভুগছেন। ঋণপত্র (এলসি) খোলা থেকে সমন্বয় হওয়া পর্যন্ত তিন মাস সময় লেগে যায়। দীর্ঘ সময়ের জন্য টাকা আটকে থাকায় মূলধনে টান পড়ে।

মহাখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম স্বপন জানান, ভ্যাটের হার বৃদ্ধি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের উচ্চ ফির কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন।

আমিন হোসেন অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পার্টনার মোহাম্মদ আল আমিন জানান, অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতার জন্য ব্যবসায়ীরা আর্থিক দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসার মূলধন থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

হাসান হার্ডওয়্যারের স্বত্বাধিকারী মাহফিজুল হক বলেন, অসহনীয় যানজট, অটোরিকশার দৌরাত্ম্য এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ক্রেতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজা মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দোকানমালিক দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট থানায় সহযোগিতা চাওয়া হলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো ভূমিকার ওপর জোর দেন তিনি।

মওলা ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চ হার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, এলসি পেমেন্টে দীর্ঘসূত্রতা, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি প্রভৃতি কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, ঋণপত্রের মার্জিন শতভাগ হবে কি না, এটি ব্যাংক ও ভোক্তার সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। ঋণপত্রের মার্জিনের বিষয়টি সব পণ্যে এক নয়।

রাজস্ব আহরণে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে এনবিআরের প্রথম সচিব মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিবন্ধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে করজাল বিস্তারের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে অটোমেটেড ও স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. তারেক মাহমুদ চাঁদাবাজি, হয়রানি ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণকে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও মো. সালেম সোলায়মান।

মত বিনিময় সভার পর ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআইয়ের সদস্যপদ প্রদান করা হয় বলে সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র পর স থ ত ল ইসল ম ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা