ভিনিসিয়ুসকে খুঁচিয়ে সিটিরই ‘রক্ত’ ঝরল
Published: 12th, February 2025 GMT
ইতিহাদে দুই দলের খেলোয়াড়েরা তখন মাঠে। বাজছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের সংগীত। কিন্তু ক্যামেরা চলে গেল দক্ষিণ দিকের গ্যালারিতে। বিশাল এক তিফোয় (এত ধরণের ব্যানার) চোখ সবার। কালো ব্যানারের ওপর ব্যালন ডি’অর ট্রফিতে রদ্রির চুমু খাওয়ার ছবি। পাশে গোটা গোটা হলুদ অক্ষরে লেখা, ‘স্টপ ক্রাইং ইউর হার্ট আউট।’ বাংলায় খুব কাছাকাছি অর্থ হতে পারে, কেঁদেকেটে বুক ভাসিও না!
খেলা শুরুর আগে প্রায় মিনিট পাঁচেক তিফোটি প্রদর্শন করা হয়। সিটির ‘স্কাই ব্লু’ সমর্থকেরা ‘উয়েরি ১৮৯৪’ নামের আড়ালে তিফোটি প্রদর্শন করেন। সেখানে লেখা সান্ত্বনাবাণীর মোড়কে আদতে খোঁচাটি কার প্রতি, সেটাও পরিষ্কার। গত অক্টোবরে ব্যালন ডি’অর নিয়ে মহাক্যাঁচাল তো মনে আছে? ভিনিসিয়ুস জুনিয়র তুমুল ফেবারিট হয়েও ট্রফিটি উঠতে দেখেছেন রদ্রির হাতে। রিয়াল মাদ্রিদ তো আগেভাগেই টের পেয়ে বর্জন করে অনুষ্ঠান। রিয়াল ও ভিনি তারপর থেকেই বিভিন্নভাবে ব্যালন ডি’অর নিয়ে সমালোচনা করেছে। সিটির সমর্থকদের তা সহ্য হবে কেন? ব্যালন ডি’অর দেওয়ার পর গতকাল রাতেই প্রথমবারের মতো ইতিহাদে গিয়েছিল রিয়াল, অভ্যর্থনা হিসেবে ‘সিটিজেন’ সমর্থকেরা যে এমন আতিথেয়তা দেবেন, সে তো মাদ্রিদের ক্লাবটিরও বোঝার কথা!
গ্যালারিতে বসে রদ্রিও দৃশ্যটি উপভোগ করেছেন তাড়িয়ে তাড়িয়ে। স্মার্টফোন বের করে ছবিও তুলেছেন। ব্যালন ডি’অর নিয়ে যাঁর সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ হলো, সেই ভিনির প্রতি নিজ দলের সমর্থকদের কাছ থেকে এমন বার্তা দেখতে কার না ভালো লাগে! আর বার্তাটিও কিন্তু ধার করা নয়। বলতে পারেন, সিটির ঘরোয়া আয়োজনই।
১৯৯১ সালে ম্যানচেস্টারেই জন্ম নেওয়া ব্যান্ড ‘ওয়েসিস’ এর বেশ বিখ্যাত গান এই ‘স্টপ ক্রাইং ইউর হার্ট আউট।’ ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া গানটি যাঁর লেখা, ওয়েসিস ব্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নোয়েল গ্যালাঘার নিজেও সিটির পাঁড়ভক্ত। ইতিহাদে কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ নকআউট প্লে–অফের প্রথম লেগ শুরুর আগে টকস্পোর্টে নোয়েল নিজেও এই ম্যাচ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দেন। তবে বাস্তববাদী নোয়েল কিন্তু পা মাটিতেই রেখেছিলেন। খুব বেশি আশা করেননি ব্যান্ডের এই গায়ক ও লিড গিটারিস্ট।
কিন্তু গ্যালারিতে সিটির সমর্থকেরা ওসব বাস্তবতার ধার ধারেননি। ভিনির পায়ে বল যাওয়া মানেই দুয়ো বের হয়েছে সিটির সমর্থকদের মুখ থেকে। আর ভিনি? কাটা ঘায়ে খোঁচা ও দুয়োর জবাবে তাঁর হৃদয় নিংড়ে বের হয়েছে ম্যাচ সেরার পারফরম্যান্স। ম্যাচের মধ্যে সিটির সমর্থকেরা তাঁকে তাক করে একবার সুর তুলেছিলেন ‘তোমার ব্যালন ডি’অর কই! তোমার ব্যালন ডি’অর কই!’। বেচারা ভিনির তো বর্ষসেরার এই ট্রফি নেই। কী আর করা, রিয়ালের জার্সির বাহুতে খোদাই করা ‘১৫’ সংখ্যাটি আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। হয়তো বুঝিয়েছেন, ‘আমার ব্যালন ডি’অর না থাকতে পারে, কিন্তু আমার দলের ১৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের গর্ব আছে।’
ইতিহাদে একটু নেচেও নিয়েছেন ভিনিসিয়ুস.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি