জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরবিরোধী অংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, গত ২০ মে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ২৮ জুন জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জেনে জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করেন। পরে আদালতের নির্দেশে সদস্যপদ ফিরে পেয়ে তাঁরা সম্মেলন আয়োজন করেন। তাই জি এম কাদের আর আইনত চেয়ারম্যান নন।

আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এই অভিযোগ করেন।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে দাবি করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আদালতে যাই, আদালত আমাদের সদস্যপদ বহাল করেন ও কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। আমরা রায় পেয়েছি ৩০ জুলাই। কাউন্সিল হয় ৯ আগস্ট। এই মধ্যবর্তী সময়ে জি এম কাদের আদালতে যাননি। এখন তিনি বাইরে চিল্লাচিল্লি করছেন। সুতরাং বিষয়টি আপনাদের বুঝতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা কাউন্সিল করেছি।’

সম্মেলন আয়োজনে কোনো তড়িঘড়ি বা লুকোচুরি করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির এই নেতা। তিনি বলেন, অনৈতিকভাবে জি এম কাদের যে সম্মেলন স্থগিত করেছিলেন, সেই সম্মেলন তাঁরা আবার আয়োজন করেছেন। জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙ্গল’ এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নম্বর–১২ তাঁরা ব্যবহার করবেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁরা সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। তাঁরা আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী তাঁদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেবেন।

জি এম কাদের সম্মেলনের ট্রেন মিস করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন কাদেরবিরোধী অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, কাউন্সিল হয়ে গেছে। এখন আর কোনো আকুতির সুযোগ নেই। তাঁরা পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস ব্যবহার করছেন, এটা অন্যায় করছেন। শিগগির এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাদেরবিরোধীদের কাউন্সিলে জি এম কাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৯ আগস্ট কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। আগের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। তাই আইনত জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান পদের ভিত্তি নেই। তাঁরা মিলেমিশে কাজ করার জন্য জি এম কাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির কাদেরবিরোধী অংশের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের সর্বাত্মক সংস্কারে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে যে ক্রান্তিকাল চলছে, তার উত্তরণে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দরকার।

আরও পড়ুননির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি চেয়ে আনিসুল-হাওলাদার কমিটির চিঠি১৩ আগস্ট ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু হোসেন, শফিকুল ইসলাম, নাজমা আক্তার, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম, মাসরুর মাওলা, সাইদুর রহমান, ইয়াহইয়া চৌধুরী, সরদার শাহজাহান, নুরুল ইসলাম মিলন, লিয়াকত হোসেন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, হারুন আর রশিদ, সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, মো.

ইয়াকুব হোসেন, শেখ আলমগীর হোসেন, নীগার সুলতানা, মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, নাসির উদ্দিন সরকার, হাফেজ মাহমুদুর রহমান, সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী, শারমিন পারভীন লিজা, মিজানুর রহমান, তাসলিমা আকবর রুনা, শারমিন আকতার, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

আরও পড়ুনজাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর আনিসুল, ঠেকাতে সক্রিয় জি এম কাদের১৩ আগস্ট ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক দ রব র ধ এম ক দ র ক উন স ল কর ছ ন অন য য় আগস ট করছ ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর আনিসুল, ঠেকাতে সক্রিয় জিএম কাদের

নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জি এম কাদের এবং সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই পক্ষই তৎপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায়। দুই পক্ষই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারস্থ হয়েছে।

সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করার পর আনিসুল ইসলামরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের ‘স্বীকৃতি’, অর্থাৎ দলের নিবন্ধন ও ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ব্যবহারের অধিকার চাইছে। অন্যদিকে জি এম কাদের সম্মেলন অনুষ্ঠান, কমিটি গঠনসহ পুরো প্রক্রিয়াকে অবৈধ বলে ইসিকে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির ‘দশম কাউন্সিল’–এর পর নবনির্বাচিত নেতৃত্বের তথ্য দিয়ে ইসি সচিবের বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে তারা দলীয় গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা ২০/১/ক বাতিল করার কথা বলেছে। এ ধারায় চেয়ারম্যানকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ধারাটি সংশোধন করে আনিসুল ইসলামরা দলের কোনো কেন্দ্রীয় সদস্যকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি এবং জেলা ও ইউনিটি বাতিল করার আগে প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান কাউকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিলেও প্রেসিডিয়াম সভায় তাঁর অনুমোদন নেওয়ার কথাও যুক্ত করেছে। গঠনতান্ত্রিকভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে এসব সংশোধনী আনার কথা উল্লেখ করে তারা ইসির স্বীকৃতি চেয়েছে।

সম্মেলনের পরদিন ১০ আগস্ট আনিসুল ইসলামদের নেতৃত্বাধীন নবনির্বাচিত কমিটির শীর্ষ চার নেতার তালিকা কমিশনে জমা দেওয়া হয়। এ কমিটিকে জাতীয় পার্টির ‘মূলধারা’ দাবি করে তারা বলেছে, ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ব্যবহারের বৈধ অধিকার কেবল তাদের কমিটির আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন তারা জাতীয় পার্টির কার্যালয় ও দলীয় তহবিল বুঝিয়ে দিতে এবং দলের নিবন্ধন নম্বর ১২ ব্যবহার না করতে জি এম কাদেরকে আইনি নোটিশ পাঠানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

এদিকে আজ বুধবার জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একজন নেতা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে চিঠি দিয়েছেন। জানা গেছে, ওই চিঠিতে দলের গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যাঁরা সম্মেলন আহ্বান করেছেন, তাঁরা দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কারও সম্মেলন ডাকার এখতিয়ার নেই। ফলে এ সম্মেলন ও কমিটি গঠনের পুরো প্রক্রিয়া অবৈধ, বেআইনি।

৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির ‘দশম কাউন্সিল’ করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)। সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম চেয়ারম্যান, মুজিবুল হক নির্বাহী চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশীদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও এ বি এম রহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব নির্বাচিত হন। জি এম কাদের তাঁদের জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদসহ অন্যান্য পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জি এম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে বিবাদী করে আনিসুল ইসলামসহ ১০ নেতা ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত দুজনের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর ১২ আগস্ট পর্যন্ত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে (৯ আগস্ট) আনিসুল ইসলামরা সম্মেলন করে নতুন কমিটি করেন।

১২ আগস্ট ছিল জি এম কাদেরের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। সেদিনই বাদীপক্ষ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন করে। এদিকে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বিব্রতবোধ করায় ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত থেকে ১১ আগস্ট মামলাটি ষষ্ঠ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বদলি করা হয়। পরদিন (১২ আগস্ট) বিচারক মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে জি এম কাদেরসহ দুজনের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আর থাকছে না।

এ বিষয়ে জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতে আমরা আনন্দিত। এর ফলে চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আইনগতভাবে নেই। এখন তিনি মুক্তভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন।’

আনিসুল ইসলামসহ ১০ নেতা হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলেন, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন তো তিনি (জি এম কাদের) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন। আমরা সম্মেলন করে নতুন কমিটি করেছি, মামলা থাকবে কেন? মামলা থাকলে তো তাঁকে চেয়ারম্যান স্বীকার করা হয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জি এম কাদের ছাড়া অন্য কারও লাঙ্গল পাওয়ার সুযোগ নেই: শামীম হায়দার পাটোয়ারী
  • জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর আনিসুল, ঠেকাতে সক্রিয় জিএম কাদের