বাড়ি থেকে হেঁটে দুই মিনিট দূরত্বে পারিবারিক কবরস্থান। পাশাপাশি তিনটি কবর খোঁড়া হয়েছে। পশ্চিম দিকের প্রথম দুটি কবর খানিকটা বড়। প্রথমটি বাবা মিনারুলের, পরেরটি ছেলে মাহিনের। সবচেয়ে ছোট কবরটি একেবারে পূর্ব পাশে। এটি দুই বছর বয়সী ছোট মিথিলার।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিখর গ্রামে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধারের পরদিন দাফনের জন্য কবরগুলো পাশাপাশি খোঁড়া হয়। চারটি কবর খোঁড়ার কথা থাকলেও তিনটি খোঁড়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত দুটি মরদেহ সেখানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ফয়সালা হওয়ার কথা জানিয়ে স্থানীয় পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আলী বলেন, ছেলের পরিবার চারটি মরদেহই নিতে চেয়েছিল। পরে তিনটি মরদেহ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য তিনটি কবর খোঁড়া হয়েছে। কিন্তু মরদেহ নিয়ে নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত ছেলে ও বাবাকে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। মা ও ছোট মেয়েকে শাশুড়ির কাছে দেওয়া হবে।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক বলেন, দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে দুটি করে মরদেহ দুই পরিবার নিয়ে দাফন করবে। তাঁরা সেভাবেই মরদেহগুলো হস্তান্তর করবেন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে পবার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিখর গ্রামে নিজ ঘর থেকে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত ব্যক্তিরা হলো ওই গ্রামের মিনারুল ইসলাম (৩৫), তাঁর স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮), ছেলে মাহিন (১৩) ও মেয়ে মিথিলা (২)। মাহিন খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। আর মিনারুল কৃষিকাজ করতেন। ঘটনাস্থল থেকে দুই পৃষ্ঠার একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’ পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ধারণা, অভাব ও ঋণের কারণে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর নিজে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন মিনারুল।

আরও পড়ুন‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’১৫ আগস্ট ২০২৫

আজ শনিবার সকালে বামনশিখর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে কবরস্থানে কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউবা কবর খনন করছেন। এসব কাজ তদারকি করছেন মৃত মিনারুলের চাচা ও চাচাতো ভাইসহ প্রতিবেশীরা।

‘মনের বেদনা’ নিয়ে কবর খোঁড়ার কাজ করছিলেন মিনারুলের প্রতিবেশী মো.

রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এক বাড়ির এতগুলো কবর খোঁড়ার কাম আমি আগে কুনুদিন করি নাই। কী যে একটা বেদনা। চারডা খোঁড়ার কথা ছিল। কিন্তু মাইয়ার মা বলছে, মাইয়ার লাশ দিবি না। সেই জন্নি তিনটা কবর খোঁড়ার সিদ্ধান্ত হচ্চে।’

মিনারুলের চাচা আবু তালেব বলেন, ‘মেয়ের মরদেহ দেবে না বলে তিনটি কবর খোঁড়া হয়েছে। তাঁরা চেয়েছেন, চারজন একসঙ্গে মারা গেছেন। চারজন এক জায়গায় থাক। কিন্তু তাঁরা এটা মানবেন না।’

আরও পড়ুনরাজশাহীতে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার, পাশে পড়ে ছিল চিরকুট ১৫ আগস্ট ২০২৫

এ ঘটনায় নগরের মতিহার থানায় অপমৃত্যু ও হত্যার অভিযোগে গতকাল রাতে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। অপমৃত্যুর মামলাটি করেছেন মৃত মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী। আর হত্যা মামলা করেছেন মিনারুলের শাশুড়ি শিউলি বেগম।

মতিহার থানার ওসি আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। একটি অপমৃত্যু ও অপরটি হত্যা মামলা। প্রথমে শাশুড়ি মামলা করতে চাননি। পরে সন্দেহ থেকে মামলাটি করেছেন। তাঁরা এ বিষয়ে তদন্ত করছেন। দুপুরে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ই পর ব র র মরদ হ কর ছ ন চ রজন কবর খ

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় কিশোর গ্যাং লিডার, পেশাদার ছিনতাইকারী দুর্জয় গ্রেপ্তার

ফতুল্লায় একাধিক মামলার আসামি পেশাদার ছিনতাইকারী, দূর্ধর্ষ অপরাধী, কিশোর গ্যাং লিডার  প্রধান দুর্জয় (২২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সে ফতুল্লার দাপা কবরস্থান সড়কের মহিউদ্দিন ওরফে সুমনের ছেলে।

বুধবার দিবাগত  রাত দুইটার দিকে দাপা ইদ্রাকপুর শারজাহান রোলিং মিল বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।দূর্র্ধষ এই অপরাধী গ্রেফতারে স্থামীয়বাসীদের মাঝে স্বঃস্তি নেমে এসেছে।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত বার রাত  দুইটার দিকে শারজাহান রোলিং মিলস্ বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে একাধিক মামলার আসামি, কিশোর গ্যাং লিডার, পেশাদার ছিনতাইকারী দুর্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, দাপা কবরস্তান রোড, শারজাহান রোলিং মিলস্ বাজার, খাঁ বাড়ী, খোঁজপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় দুর্জয়ের নেতৃত্বে রয়েছে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। যা স্থানীয় মহলে কিশোর গ্যাং নামে পরিচিত। এই বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটায়।

সন্ধ্যা নামলেই সুযোগ বুঝে ছিনিয়ে নেয় পথচারীদের সর্বস্ব। বিশেষ করে মোবাইল ফোন হচ্ছে এই বাহিনীর প্রধান টার্গেট। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এরা রক্তক্ষয়ী সহিংস ঘটনার জন্ম দিয়ে থাকে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক(ওসি) শরিফুল ইসলাম কল জানান, দুর্জয় একজন পেশাদার অপরাধী ও ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার  একাধিক মামলা রয়েছে। বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে, কোনো শক্তি প্রতিহত করতে পারবে না: প্রেস সচিব
  • ফতুল্লায় কিশোর গ্যাং লিডার, পেশাদার ছিনতাইকারী দুর্জয় গ্রেপ্তার