বেসরকারিতে বাণিজ্য সরকারিতে নৈরাজ্য
Published: 22nd, February 2025 GMT
সরকারি হাসপাতালে শক্ত তদবির ছাড়া মিলছে না মুমূর্ষু রোগীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বরাদ্দ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাগছে ঘুষও। আর বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবার নামে কাটা হচ্ছে রোগী ও স্বজনের পকেট। সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। উল্টো বেড়েছে আইসিইউতে নৈরাজ্য।
জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও বিপৎসংকুল হতে পারে। সরকারের উচিত এখনই আইসিইউর ব্যাপারে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে অচল আইসিইউ সচল করার ব্যাপারে জোর দেওয়া উচিত।
এখন সারাদেশে আইসিইউর শয্যা আছে ১ হাজার ১৯৫টি। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই রাজধানী ঢাকায়। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হলো, ৩৪ জেলা শহরেই নেই জটিল রোগীর জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা। ফলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক মুমূর্ষু রোগী ছোটেন রাজধানীর দিকে। শারীরিক পরিস্থিতি বেশ জটিল হলে অনেক রোগীর প্রাণ নিভে যায় পথেই। ঢাকামুখী রোগীর চাপ কমাতে করোনা মহামারিতে প্রতি জেলায় ১০ শয্যার আইসিইউ তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার।
পরে ২৭ জেলায় স্থাপনও করা হয় আইসিইউ ইউনিট। তবে এর মধ্যে ১৮টিই সচল করা যায়নি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। আইসিইউ স্থাপন নিয়ে খামখেয়ালিতে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। ফলে ফেরত যাচ্ছে প্রকল্পের ১৪৬ কোটি টাকা।
দেশে আইসিইউ সেবার কী অরাজক হাল, তা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন সাংবাদিক মাসুমা আক্তার। গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন মাসুমা। আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রাতেই কুমিল্লা থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তবে ঢামেক হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা না থাকায় বেকায়দায় পড়ে তাঁর পরিবার। স্বজনরা রাজধানীর আরও কয়েকটি হাসপাতালে চেষ্টা-তদবির করেও আইসিইউর ব্যবস্থা করতে পারেননি। অগত্যা নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নেমে চার দিন পর হেরে যান মাসুমা।
এদিকে, মসজিদের ইমাম আশরাফ আলী গত মঙ্গলবার হঠাৎ স্ট্রোক করলে চিকিৎসক তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠান। আইসিইউর খোঁজে রাজধানীতে এসে তাঁরও একই গতি। শয্যা ফাঁকা না থাকায় ঢামেক হাসপাতালে জায়গা হয়নি আশরাফ আলীর। কর্তৃপক্ষ তাঁর ছেলেকে সাফ জানিয়ে দেয়, এক সপ্তাহের আগে মিলবে না আইসিইউ। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউর খোঁজ নেবেন– আর্থিক সংগতি না থাকায় সেই পথও রুদ্ধ। অসহায় ছেলে এখন বাবার জীবন-মৃত্যু সঁপে দিয়েছেন আল্লাহর ওপর।
আরও জটিল পরিস্থিতি নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি এ এস এম হাসান। কিডনি, লিভার, হৃদরোগসহ নানা রোগ নিয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেলে পা রাখেন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। ভর্তির পরপরই চিকিৎসক তাঁকে আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে আইসিইউ নামের ‘সোনার হরিণ’ দেখার অপেক্ষায় এখনও হাসান। তাঁর স্ত্রী আমেনা খাতুনের অভিযোগ, ‘টাকা ও তদবির ছাড়া এখানে আইসিইউ শয্যা মেলে না। আমাদের পরে কাগজ জমা দিয়েও অনেকে আইসিইউ বরাদ্দ পেয়েছেন। আনসাররা প্রকাশ্যে টাকা চান। টাকা না থাকায় সেই সুযোগটা আমরা নিতে পারিনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালে ৬০ শয্যার আইসিইউর বিপরীতে দিনে শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। তবে দিনে আইসিইউর শয্যা খালি হয় মাত্র তিন থেকে চারটি। শুধু ঢামেক নয়, দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই একই পরিস্থিতি। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৫ আইসিইউ শয্যার বিপরীতে গত বৃহস্পতিবার ৭৪টি আবেদন জমা পড়ে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২০ শয্যার বিপরীতে ৪৫টি আবেদন পড়ে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ শয্যার আইসিইউর আবেদন জমা পড়েছে ৩৩টি।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.
একটি যন্ত্র বিকল হলে ছয় মাসেও মেরামত করা সম্ভব নয় না। এতে নতুন করে জটিলতা দেখা দেয়। নতুন ভবনে ১৫টি আইসিইউর মধ্যে তিনটি যন্ত্র শুরু থেকে নষ্ট। বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো
হলেও কাজ হচ্ছে না।
৭৫ শতাংশ আইসিইউ শয্যা ঢাকায়
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে মোট আইসিইউ শয্যা আছে ১ হাজার ১৯৫টি। ঢাকা মহানগরে ৮২৬টির মধ্যে ৩৮৪টি সরকারি হাসপাতালে, বাকি ৪৪২টি বেসরকারি হাসপাতালে। আর ঢাকার বাইরে ৩৬৯টি। আইসিইউর প্রায় ৭৫ শতাংশ ঢাকা বিভাগে। তাই এই সেবা নিতে রোগীরা সব সময় ঢাকামুখী।
ক্লিনিকে বাণিজ্য
সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার জন্য আলাদা খরচ দিতে হয় না। সাশ্রয়ের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা-তদবির করে স্বজনরা। এ পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালে রোগীর লম্বা সারি দেখা যায়। যারা সরকারি হাসপাতালে চেষ্টা করেও আইসিইউর ব্যবস্থা করতে পারেন না, তারা আবার ফিরে যান বেসরকারি হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মাঝারি মানের একটি বেসরকারি হাসপাতালের দৈনিক আইসিইউ শয্যা ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। চিকিৎসক ফি, ওষুধের দাম এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ এর বাইরে। সব মিলিয়ে দিনে স্বাভাবিক খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। রোগীর অবস্থা জটিল হলে এই খরচা ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। যে হাসপাতাল যত বড়, তার আইসিইউর খরচ তত বেশি। এই খরচ অনেক রোগীর স্বজনের পক্ষে টানা সম্ভব হয় না। মাত্রাতিরিক্ত খরচার নিচে চাপা পড়ে অনেকে মাঝপথে চিকিৎসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। অনেক সময় রোগী মারা গেলেও তা স্বজনকে না জানিয়ে আইসিইউতে রেখেই ‘বিল বাণিজ্য’ করার অনৈতিক পথে হাঁটে কোনো কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত বুধবার ঢামেক হাসপাতালে শয্যা খালি না পেয়ে আল আমিন নামের এক রোগীকে যাত্রাবাড়ীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচের কথা জানায়। তবে এক দিন না যেতেই ৫৭ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে রোগীর স্বজন কোনোমতে বিল পরিশোধ করে দুপুরেই আল আমিনের ছাড়পত্র নেন। গ্রামের বাড়ি বরিশাল যাওয়ার পথেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ছোট ও মাঝারি গোছের বেসরকারি হাসপাতালে যেসব আইসিইউ শয্যা আছে, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যথাযথ অনুমতি নিয়ে তারা আইসিইউ সেবা চালু করেনি। তবু এসব হাসপাতাল বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেই অধিদপ্তরের।
৩৪ জেলায় নেই আইসিইউ সেবা
সরকারি হাসপাতালে মোট শয্যার ১০ শতাংশ আইসিইউ থাকা আন্তর্জাতিক নিয়ম। তবে দেশের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ যেন ‘ডুমুরের ফুল’। ৬৪ জেলার ৩৪টি সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা নেই। হাসপাতালে হাসপাতালে আইসিইউর অভাব প্রকট হয়ে ওঠে করোনাকালে। সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২ জুন জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দেন। চার বছর পার হলেও সেই নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
এ প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী তুহিন বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু জায়গায় আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় আইসিইউর যন্ত্রপাতি সরবরাহে দরপত্রও দেওয়া হয়। তবে সে সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নতুন করে স্পেসিফিকেশন কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। এতে দরপত্র উন্মুক্ত করা হলে ট্রায়াল রিভিউ ও এলসি খোলা নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়। এ পরিস্থিতিতে দরপত্র বাতিল করা হলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যায়।
১৮ জেলায় আইসিইউ অচল
করোনা মহামারির সময় জেলা হাসপাতালে স্থাপিত ২৭ আইসিইউর ১৮টি এখনও অচল। করোনার পর এসব ইউনিট পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল ডেপুটেশনে চলে যায়। এতে ১৮ জেলা হাসপাতালে ২০২টি আইসিইউ শয্যা অকার্যকর হয়ে পড়ে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের অচল আইসিইউ সচলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুসারে আইসিইউ সেবা মিলছে না। সেবাবঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, সরকার টাকা খরচ করে আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করলেও নানা সংকটে অনেক শয্যা পড়ে আছে শুধু জনবল সংকট ও সমন্বয়হীনতার কারণে। করোনার সময় গড়ে তোলা ১৮ জেলায় আইসিইউ সচল থাকলে বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে পারত। তবে দুঃখের বিষয়, এর কিছুই হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, যেসব ক্লিনিক আইসিইউ সেবার নামে অনৈতিক বাণিজ্য করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এটিও মানতে হবে, দেশে আইসিইউ পরিচালনায় লোকবলের সংকট রয়েছে। তাই অনেক জেলায় স্থাপিত আইসিইউ পড়ে আছে। জনবল নিয়োগে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ের আইসিইউগুলো সচল করা আমাদের প্রথম লক্ষ্য।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র আইস ইউত পর স থ ত ব যবস থ ব সরক র আম দ র র জন য তদব র
এছাড়াও পড়ুন:
টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
‘কেনাকাটা আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় ফয়েজের’ শিরোনামে ২৭ জুলাই প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ‘৫-জি উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শিরোনামের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদনটির প্রতিবাদ পাঠানো হয় ২৮ জুলাই।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, প্রকল্পটি নিয়ে করা প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে যে ‘অভিযোগ ও ব্যাখ্যাহীন অনুমানমূলক’ মন্তব্য করা হয়েছে, তা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর, একপক্ষীয় এবং ভিত্তিহীন। এতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করে ফয়েজ আহমদের মানহানি করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা সাংবাদিকতার নৈতিকতা বিরুদ্ধ।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রতিবাদপত্রে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে। নিচে সেই সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রতিবেদকের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
আরও পড়ুনদুর্নীতির অভিযোগে কেনাকাটা আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় ফয়েজ আহমদের২৭ জুলাই ২০২৫এক. প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ফয়েজ আহমদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানাধীন একটি প্রকল্পের কার্যক্রম ‘এগিয়ে নিতে’ বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেছেন। বাস্তবতা হলো, বিটিসিএলের ৫–জি রেডিনেস প্রকল্পে ২৯০ কোটি টাকার ঋণপত্র (এলসি) পূর্ববর্তী সরকারের আমলে চূড়ান্ত হয়েছে। সেই টাকা ফেরত পাওয়ার আর কোনো বাস্তবসম্মত পথ নেই। এবং এসব যন্ত্রপাতি গ্রহণ না করলে সম্পূর্ণ অর্থই রাষ্ট্রের অপচয়ে পরিণত হবে।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ আরও বলেছে, ফয়েজ আহমদ শুধু অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে, আইনি কাঠামোর ভেতরে থেকে দুদকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেছেন, যেখানে দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও তিনি তুলে ধরেছেন। এটি দুর্নীতির ‘সহযোগিতা’ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় দায়িত্বশীল পদক্ষেপ।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে বিটিসিএল একটি বেসরকারি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দুদকের অনুসন্ধানাধীন প্রকল্পের বাকি কাজ এগিয়ে দিতে আইনগত মতামত নেয় (২৭ মার্চ, ২০২৫)। যদিও এ ধরনের আইনগত মতামত দেওয়ার জন্য বিটিসিএলের নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল রয়েছে। বেসরকারি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রথমে ইতিবাচক মতামত দিলেও পরে (৮ এপ্রিল, ২০২৫) দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরে সতর্ক করে দেয় যে তদন্তাধীন প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
দুদক চিঠি দিয়ে বিটিসিএলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় (১৮ জুন, ২০২৫) যে তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ক্রয় আইনের লঙ্ঘন পাওয়া গেছে। তাই কেনাকাটার কার্যক্রম এগিয়ে নিলে আইনের ব্যত্যয় হবে এবং অর্থ ব্যয় আইনসিদ্ধ হবে না। দুদক তাদের মতামত জানানোর পরও ফয়েজ আহমদ আবার (২২ জুন) সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত মনোযোগ ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
দুদকের নেতিবাচক মতামতের পরও কেনাকাটার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া টেলিযোগাযোগ বিভাগের (প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করা) দাবিকে সমর্থন করে না। ফয়েজ আহমদ দুদককে দ্রুত অনুসন্ধান শেষ করার অনুরোধ করতে পারতেন। অনুসন্ধান শেষ হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারতেন। বিটিসিএলের ওই প্রকল্পে দুদক গত ৯ জানুয়ারি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এই অনুসন্ধান নিশ্চয়ই বছরের পর বছর চলবে না। কেনাকাটায় আর কিছুদিন দেরি হলে রাষ্ট্রের বিপুল ক্ষতি হয়ে যাবে, এ দাবি যৌক্তিক নয়।
‘দুর্নীতি সহায়ক’ বক্তব্যটি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের মতামত, প্রথম আলোর নয়।
দুই. প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, প্রয়োজনের চেয়ে ৫ গুণ সক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিয়ে অর্থ অপচয়ের চেষ্টার অভিযোগ অসত্য। প্রতিবাদপত্রে কারিগরি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের চাহিদা বিবেচনা করা হয়নি। সেসব বিবেচনায় নেওয়া হলে যন্ত্রপাতির সক্ষমতা ২৬ টিবিপিএস (টেরাবাইট পার সেকেন্ড) নয়, ১২৬ টিবিপিএসের প্রয়োজন হবে। ফাইভ-জি প্রকল্পে ১২৬ টেরাবাইট ক্ষমতা ‘রিডান্ডেন্ট’সহ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে কোনো যন্ত্রপাতি বা সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকার সুযোগ নেই।
প্রতিবাদপত্রে আরও বলা হয়, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল ২০২১ সালে প্রণীত বিটিসিএলের ফাইভ-জি প্রকল্পের একটি সমীক্ষায় মতামত দেয় যে শুধু আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ যদি ২৬ টিবিপিএস হয়, তাহলে সব মিলিয়ে ‘সিস্টেমের লাইন ক্যাপাসিটি’ ১২৬ টিবিপিএস প্রয়োজন হবে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: এই প্রকল্প নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তুই হলো ‘দরপত্রের শর্তানুযায়ী দরদাতাদের মূল্যায়ন না করে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি লঙ্ঘনপূর্বক শুধু প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যের ভিত্তিতে তিনজন দরদাতাকেই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ (যোগ্য) ঘোষণা করাসহ নন-রেসপনসিভ দরদাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সক্ষমতার পাঁচ গুণ বেশি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ।’ প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এ ‘অভিযোগ’ই শুধু তুলে ধরা হয়েছে।
তা ছাড়া ২০৩০ সাল পর্যন্ত যে ২৬ টিবিপিএস চাহিদা নিরূপিত হয়েছিল, কিন্তু কেনা হচ্ছে ১২৬ টেরাবাইট—এটা ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিটিসিএলের ২১৩তম পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে রয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে টেলিকম যন্ত্রপাতিও অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। এ কারণে দীর্ঘ সময় যন্ত্রপাতির খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য থাকে না। সাধারণভাবে টেলিকম যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহারযোগ্য আয়ুষ্কাল সাত বছর ধরা হয়। এই দরপত্রের ক্ষেত্রেও কারিগরি নির্দেশে যন্ত্রপাতির আয়ুষ্কাল সাত বছর নির্ধারিত রয়েছে। তিনি সাবধান করেছিলেন যে ২০৪০ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণে বেশি সক্ষমতার যন্ত্রপাতি চাওয়া হলেও বাস্তবে তা সচল থাকার নিশ্চয়তা ২০৩০ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ যে পরিমাণ যন্ত্রপাতি কেনা হবে, তার একটি বড় অংশই ২০৩০ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হবে না এবং ব্যবহারের পূর্বেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
বিগত সরকারের সময় অতিরিক্ত সক্ষমতার যন্ত্র কেনার অনুমোদন না দেওয়ার কারণেই আসাদুজ্জামানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
তিন. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, দুদকের ওপর প্রভাব বিস্তারের দাবি তথ্যভিত্তিক নয়। দুদকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করা এবং চিঠি পাঠানো একটি প্রাতিষ্ঠানিক, নীতিগত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অংশ। এর মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই সংস্থাটির ওপর ‘প্রভাব বিস্তার’ করা হয়নি; বরং তদন্তকাজ চলমান রাখতে এবং যন্ত্রপাতি গ্রহণের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে একটি প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে। তা ছাড়া বিশেষ সহকারীর দুদকে প্রেরিত আধা সরকারি পত্রের বক্তব্যকে প্রকল্পের কেনাকাটা করতে বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ বলে প্রচার করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। এটা অপসংবাদিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক নম্বর পয়েন্টেও একই বিষয়ে বলা হয়েছে। সেখানেই প্রতিবেদকের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ বিভাগের এই বক্তব্য আবার উল্লেখ করা হলো। এখানে বলে রাখা দরকার, দুদকের স্পষ্ট মতামত পাওয়ার পরও চেয়ারম্যানকে দ্বিতীয় দফা চিঠি দেওয়া এবং অভিযোগকে ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করা স্বাধীন সংস্থাটিকে প্রভাবিত করারই চেষ্টা। দুদকের মতামত যাতে কেনাকাটার পক্ষে পরিবর্তিত হয়, সে জন্যই ফয়েজ আহমদ দ্বিতীয় দফা আধা সরকারি পত্র দিয়েছিলেন এবং তিনি সেখানে দুদক চেয়ারম্যানের ‘ব্যক্তিগত মনোযোগ ও আন্তরিক সহযোগিতা’ কামনা করেন।
চার. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কারখানা পরিদর্শন ও জিও (সরকারি আদেশ) জারির প্রেক্ষাপট চেপে রাখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেই জিও অনুমোদন না হওয়ায় চীনে কারখানা পরিদর্শনের জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানো সম্ভব হয়নি। সরকারের নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী, যখন কারখানা পরিদর্শন সম্ভব নয়, তখন পণ্য সরবরাহ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জাহাজীকরণ করা যেতে পারে—বিষয়টি সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্রের নিয়মানুযায়ী কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা বিটিসিএলের চারজন প্রকৌশলীর। সেখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে চারজনের জায়গায় পাঁচজনকে কারখানা পরিদর্শনে পাঠানোর জন্য জিও জারির অনুরোধ করা হয়। নতুন দলে বিটিসিএলের প্রকৌশলী রাখা হয় দুজন আর টেলিযোগাযোগ বিভাগের তিনজন। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে তাঁদের চীন সফরে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যদিও তাঁদের চীনে যাওয়া হয়নি। কারণ, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জিও (সরকারি আদেশ) জারির বিষয়টি আটকে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গত ৯ ডিসেম্বর বিদেশ ভ্রমণসংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে সাধারণভাবে বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে নির্দেশনার ৯ নম্বরে কেনাকাটা, জাহাজীকরণের আগে কারখানা পরিদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কেবল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ প্রেরণের বিষয় বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ‘ফ্যাক্টরি একসেপটেন্সের’ জন্য বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ নয়। আরও উল্লেখ্য যে এই কেনাকাটার জন্য কারখানায় যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জিও গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ২৪ সেপ্টেম্বর তা বাতিল করা হয়। ২৪ অক্টোবর (২০২৪) বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদ প্রকল্প নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ বছরের ৬ জানুয়ারি সেই তদন্ত প্রতিবেদন দুদকে পাঠাতে বলে।
পাঁচ. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ফয়েজ আহমদের চীন সফর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। এতে চীন সফরের ব্যাখ্যা এবং এর সরকার অনুমোদিত বৈধতা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এটিকে ‘অপরিচিত সংস্থার অর্থে’ পরিচালিত বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ এটি ছিল সরকারি অনুমোদিত সফর, যার উদ্দেশ্য ছিল তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন ও অবকাঠামোগত সক্ষমতা পর্যালোচনা।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: এ সফর সরকারের অনুমোদনহীন, তা প্রথম আলোর প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি। বলা হয়েছে, জিওতে উল্লিখিত ‘চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারস ইন বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি অপরিচিত। তবে ‘চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন রয়েছে। উল্লেখ্য, ওই সফরে বিশেষ সহকারীর একান্ত সচিব সফরসঙ্গী ছিলেন, যা সরকারের বিদেশ ভ্রমণবিষয়ক নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ নির্দেশনায় একান্ত সচিবদের জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত সঙ্গে নেওয়া পরিহার করতে বলা হয়েছে।
ছয়. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত বাস্তবতা বিশ্লেষণ না করে শুধু প্রাক্তন আমলাদের বক্তব্য, বাতিল হওয়া দরপত্র এবং অনুমাননির্ভর ব্যাখ্যা দিয়ে ফয়েজ আহমদের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজের অবস্থান গণমাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যার কিছু অংশ প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকলেও প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের প্রতি উত্তরের অনুপস্থিতিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: বক্তব্য জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ১৬ জুলাই ফয়েজ আহমদ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হয়। পরে ফয়েজ আহমদকে ফোন করা হয় এবং খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। ২০ জুলাই আইসিটি বিভাগে গেলে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে জানানো হয়, ফয়েজ আহমদ অফিসে উপস্থিত নেই। তখন আইসিটি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠাবেন বলে জানান। তিনি পাঠাননি। পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ৭ জুলাই ফয়েজ আহমদ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেটাই তাঁর বক্তব্য। উল্লেখ্য, ফয়েজ আহমদের আগের বক্তব্যের চুম্বক অংশ প্রতিবেদনে রয়েছে। পাশাপাশি ৭ জুলাই তা প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে অনুমাননির্ভর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
সাত. টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে দুজন কারিগরি ও দুজন ক্রয় বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে ‘কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস’ (ব্যয়ের বিপরীতে সুফল পর্যালোচনা) কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: ‘কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস’ করা হয়েছে কি না, সেটা প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে জানতে চেয়েছিলেন টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান।
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, প্রথম আলোর প্রতিবেদন মোটেও ‘ব্যাখ্যাহীন অনুমানমূলক’ নয়, এটা ‘বিভ্রান্তিকর, একপক্ষীয় এবং ভিত্তিহীন’ও নয়; বরং প্রথম আলোর প্রতিবেদন সঠিক এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র প্রথম আলোর কাছে আছে।