ইনস্টাগ্রামের সেই পেইজটার নাম ঠিক মনে নেই। তবে বাবর ও রিজওয়ানদের ছবি পোস্ট করে যে ক্যাপশন দিয়েছে তার ভাষা ছিল এরকম, ‘‘অর্থের শক্তি দেখাল ভারত!’’ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিজেদের মাটিতে আয়োজন করেও পাকিস্তান দুবাই গেছে ভারতের বিপক্ষে খেলতে। বিমানবন্দরে রিজওয়ান ও বাবরের সেই ছবি।

ক্রিকেট এবং ক্রিকেট বাণিজ্য এখন এমন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়ে, ভারত পূর্ব দিকে থাকলে বাকি সবাই পশ্চিমে। দুই মেরুতে অবস্থান। ২৯ বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসির ইভেন্ট আয়োজন করেছে পাকিস্তান। লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। প্রতিবেশী দেশ ভারত অংশগ্রহণের জন্য সরকার থেকে পায়নি সবুজ সংকেত।

আইসিসির যেকোনো ইভেন্টের সূচি যেখানে তিন মাস আগে ঠিক হয়ে যায় সেখানে ভারতের কারণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি আটকে থাকে দিনের পর দিন।

এর আগে, এশিয়া কাপ পাকিস্তান বিনা শর্তে মেনে নিলেও এবার তারাও একটু বেঁকে বসে। ভারতকে আসতেই হবে তাদের দেশে নয় তো তারা বাদ! ভাবনা ছিল এরকমই। কিন্তু এই কথা যে, কেবল নিজেদের আলোচনার টেবিলেই ছিল বলাবাহুল‌্য। আইসিসির মিটিংয়েও এমন কথা বলা মানে নিজেদের অবস্থানকেই ছোট করে ফেলা। বাধ্য হয়ে ভারতের হাইব্রিড মডেলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

ভারত নিজেদের সব ম্যাচ খেলবে দুবাইয়ে। বাকি সব ম্যাচ পাকিস্তান। আয়োজক পাকিস্তান এক্ষেত্রে কৌশলী হতে পারত। ভারতের গ্রুপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারত। তাহলে তাদের ঘরের মাঠেই খেলতে হতো অন্তত গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ। এরপর সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে উঠলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত।

কিন্তু ওই যে ক্রিকেট বাণিজ্য এমন অবস্থানে যেখানে পাকিস্তান চাইলেও কৌশলী হতে পারবে না। আইসিসি এবং এসিসি বাড়তি লাভের আশায় এখন গ্রুপ পর্বেই ভারত ও পাকিস্তানকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো যদি দুই দল ফাইনাল খেলে তাহলে এর আগ পর্যন্ত নক আউটে মুখোমুখি হতে হবে না। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিই যার বড় প্রমাণ। গ্রুপ পর্বে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর আবার তারা ফাইনাল খেলেছিল।

গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তারা একসঙ্গে খেলেছিল। এরপর ভারত নক আউট পর্বে গেলেও পাকিস্তান যেতে পারেনি। ফলে তাদের ম্যাচ খেলাও আর সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও একই কাণ্ড। গ্রুপ পর্বের পর দুই দল আবার সেরা চারে মুখোমুখি। ভারত ফাইনাল খেলতে পারলেও পাকিস্তান পারেনি। এবারও বাণিজ্যিক দিক থেকেই বিবেচনা করে আইসিসি দুই জায়ান্টকে একই গ্রুপে রেখেছে।

সুবিধা হলো একটাই, ক্রিকেট বাণিজ্য। দুই দলের মুখোমুখি লড়াই এখন কেবল মুখে মুখেই সীমাবদ্ধ। পুরোনো সেই জৌলুস নেই। নেই লড়াইয়ের তীব্র জেদ। খেলোয়াড়রাও সেই উত্তাপ টের পান না। গণমাধ্যম, ব্রডকাস্ট আর দর্শকই সেই উত্তেজনা টিকিয়ে রেখেছেন। সব মিলেই কিন্তু বাণিজ্য। তাইতো দুই দলের ম্যাচের টিকিট দুই ঘণ্টাও অনলাইনে থাকে না। স্টেডিয়ামের বাইরে কালোবাজারিতে বিক্রি হয় চড়া দামে। সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন।

স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। বাকিদের ভরসা টিভি সেট, অনলাইন স্ট্রিমিং। এজন্য ব্রডকাস্টরাও চওড়া দামে বিক্রি করেছে বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, প্রতি ১০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন বিক্রি হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লাখ রুপিতে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ৩০.

৪ বিলিয়ন মিনিট। টি-টোয়েন্টিতেও ওয়াচ টাইম রেকর্ডে শীর্ষে এই দুই দলের ম্যাচ। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের ওয়াচ টাইম ছিল ২২ বিলিয়ন মিনিটের মতো।

ধারণা করা হচ্ছে, এবার ভেঙে যাবে অতীতের সব রেকর্ডই। এ ম্যাচের দিকে তাই অপেক্ষা নিয়ে তাকিয়ে বিজ্ঞাপনদাতা ও প্রচারস্বত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। তাইতো ‘মওকা-মওকা’ গান প্রচার করে বাড়তি নজর কাড়ার চেষ্টাতে পুরো সফল হয়ে যান তারা।

গ্রুপ পর্বে দুই দলের প্রথম ম্যাচটি ছাড়া যদি ফাইনালে তাদের আবার দেখা হয় তাহলে তো কথাই নেই। বাণিজ্যের অঙ্কটা তখন কোথায় গিয়ে থামে, সেটি অনুমানেরও বাইরে। মাঠের ক্রিকেটের সৌন্দর্যের থেকে অর্থের ঝনঝনানি নিশ্চিত বেড়ে যাবে। আয়োজকরা সেই অপেক্ষাতেই।

সেজন্যই ক্রিকেট বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করা ভারতের জেদের কাছে একপ্রকার নত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে! বাবর-রিজওয়ানকে তাই স্বাগতিক হয়েও লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দর পাড়ি দিতে হয়। মাঠের ক্রিকেটে সেই জবাবটা তারা আজ দিতে পারলে কিছুটা মুখরক্ষা হলেও হতে পারে।

ঢাকা/ইয়াসিন/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প পর ব দ ই দল র অবস থ ন ফ ইন ল আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন

ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।

লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।

গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।

ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।

লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।

এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’

এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।

আরও পড়ুনঘুমাচ্ছিলেন বিবিসির সাংবাদিক, হঠাৎ ট্রাম্পের ফোন, বললেন অনেক কথা১৫ জুলাই ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’

সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’

এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।

গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।

আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্‌বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫

সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’

ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রাম চেম্বারে ‘পরিবারতন্ত্র’ পুনর্বহালের অভিযোগ
  • পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের থ্রো লাগল আম্পায়ারের মাথায়, এরপর যা হলো
  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার