প্রাক-মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশোত্তর রাজনীতির বিশ্লেষণ
Published: 23rd, February 2025 GMT
জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান রচিত ‘মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লববাদ ও অন্যান্য’ গ্রন্থটিকে ঐতিহাসিক তথ্যাশ্রয়ী একটি বিশ্লেষণী গ্রন্থ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ গ্রন্থে সুলতানি শাসনাধীন সময়ের কিছু স্পর্শকাতর অংশ, ঔপনিবেশিক ও উপনিবেশোত্তর কাল, দেশভাগ, প্রাক-স্বাধীনতাকালের ধারাক্রমিক অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাংলাদেশোত্তর অস্থির রাজনীতি, এর প্রায় সব ঐতিহাসিক চরিত্র, ধাপ, ঝাঁপ, বাঁক, অভিঘাতসহ বর্ণিত ও বিশ্লেষিত। লেখক নিজেও বর্ণিত আন্দোলনঘন সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশী। তাই তাঁর বিশ্লেষণ হয়ে উঠেছে প্রাণময়; তত্ত্বের ওপর তথ্য, স্বপ্নাবিষ্টতার ওপর বাস্তবতা, অনুমানের ওপর অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পেয়েছে।
মানুষের পক্ষে নির্মোহ হওয়া কঠিন। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় যেহেতু প্রত্যেকের হাতে অদৃশ্য রাজদণ্ড আছে, সেহেতু মোহমুক্ত মন নিয়ে তাকে রাজ্যভার বহন ও চালনার স্বার্থে ইতিহাসের প্রবাহ বুঝতে হয়, গন্তব্যের দিকে চোখ রাখতে হয়, প্রতিবন্ধকগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সাহস রাখতে হয়। মোহের খঞ্জর সমষ্টির নিয়তিকে কাটে, তাকে পরিণত দেহ নিয়ে দাঁড়াতে দেয় না। এর প্রতিকার কী?
ধর্ম ও আদর্শ, অর্থ ও সাম্রাজ্য কিংবা সাম্য সংস্থাপনের তাৎক্ষণিক তাড়নায় যখন শাসক ও শাসিত উভয় পক্ষ বর্তমানের পরিবর্তে অতীত বা ভবিষ্যতে বাস করতে থাকে, তখন বিপর্যয় আসে। বিপর্যয় রোধে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোটাধিকারপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষিত নাগরিককে চিন্তার নৈরাজ্য থেকে বের হয়ে আসতে হয় যেমন তথ্যাশ্রয়ী, তেমনই দর্শনসচেতন হতে হয় তাকে। নিছক তথ্যাশ্রয়ী মন সব সময় সত্য পথ দেখায় না। তথ্যের বিরুদ্ধে তথ্য দাঁড়িয়ে সহজে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে, যদি দর্শনে খাদ থাকে। মানুষের পৃথক দার্শনিক বিভিন্ন অবস্থান থাকতেই পারে। এই বহুত্ববাদ কল্যাণমুখী করে তোলা যায় যদি চরমপন্থা বর্জন করে মধ্যম পন্থাকে আশ্রয় করা যায়। মধ্যমপথ বর্জিত হওয়ার কারণে বিপুল সমর্থন ও ক্ষমতা নিয়ে আবির্ভূত বহু শাসক, বিপুলা বোধ নিয়ে জাগ্রত বহু জনসমষ্টি ব্যর্থ হয়ে যায়। ‘মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লববাদ ও অন্যান্য’ গ্রন্থটি এই মধ্যমপন্থাকে এগিয়ে রাখে। যুগে যুগে গণমানুষের দীর্ঘস্থায়ী কল্যাণে যথাসম্ভব কম লোকক্ষয় ও শক্তিক্ষয় ঘটিয়ে কীভাবে এগোনো যেতে পারে, বহুদিকগামী বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে গ্রন্থটি সেই লব্ধি-পথ নির্দেশ করতে চায়।
আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রীয় বিচৈতন্যের দিকে তাকালে একটি কথা মনে বাজে। যখন ভোটাধিকার হরণ করে কোনো শাসক দানব হয়ে ওঠে, নৈরাজ্যবাদ ছাড়া তার পতন ঘটানো প্রায় অসম্ভব। দানবের পতন যখন ঘটে যায়, তখন নৈরাজ্যকে থামতে হয়, কারণ তার কাজ শেষ হয়েছে। তখনও যদি তা চলতে থাকে, দীর্ঘ পরিসরে নাগরিক-অকল্যাণের কারণ ঘটায়। যুগে যুগে, প্রতিটি বাঁক-সন্ধিতে নৈরাজ্য তার ভূমিকা রেখেছে। যখনই বাঁক অতিক্রমের পরও কোনো না কোনো কারণে ও সুযোগে নৈরাজ্য বজায় থেকেছে, জাতি পথ হারিয়েছে। নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে যে দার্শনিক পরিপক্বতা দরকার, তা অর্জনের দায়িত্ব গণতান্ত্রিক কাঠামোয় প্রত্যেক শিক্ষিত বোধ ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিকের ওপর বর্তায়। আমাদের বর্তমান কি সেই দাবি মেটাচ্ছে? আমরা কালের ঘূর্ণায়মান চাকায়, ভুলের একই পরিধির নিচে আবারও পিষ্ট হয়ে চলেছি।
এ গ্রন্থ থেকে হয়তো এ মুহূর্তে আমাদের স্থিরতা অর্জনের কিছু পথনির্দেশ মিলতে পারে। শান্তির গন্তব্যভেদ জরুরি। তীর গন্তব্যে ছুটে যাওয়ার আগে ধনুকে ভর দিয়ে খানিক পেছায়। তীরের পেছানোর মতোই ‘মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লববাদ ও অন্যান্য’ আমাদের সুলতানি, ঔপনিবেশিক ও প্রাক-বাংলাদেশকালে নিয়ে যায়, যেখানে তৎকালীন শাসকদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কীভাবে আমরা সংগঠিত হয়েছিলাম, কোন ভুলগুলো আমাদের পিছিয়ে দিয়েছিল, কোন ঠিক সিদ্ধান্তটি নেওয়ায় সবাই সুফল ভোগ করেছে– এসব বিশ্লেষিত হয়েছে। একই সঙ্গে সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের পুরাতন রাজনৈতিক সংশ্রবও এখানে আলোচিত হয়েছে। উপলক্ষ হিসেবে এসেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
আবু সাঈদ খানের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে দেওয়া ভাষণ ও প্রকাশিত লেখা থেকে উৎকৃষ্টতার বিচারে পনেরোটি রচনা এ গ্রন্থে স্থান দেওয়া হয়েছে। কিছু শিরোনাম আগ্রহ জাগাতে পারে। ‘পলাশীর বিপর্যয় ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’, ‘মুক্তিসংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ’, ‘বিদ্রোহী ও সেই সময়’, ‘ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের রাজনীতি’, ‘একাত্তরের পথ দেখিয়েছে ঊনসত্তর’, ‘সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্র ও রাজনীতি’, ‘নিখোঁজ সংস্কৃতি ও সংবাদমাধ্যমের সংবেদনশীলতা’, ‘বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লববাদ’, ‘বহুত্ববাদ: সেকাল ও একাল’ প্রভৃতি।
মুক্তিযুদ্ধে বিপ্লববাদ ও অন্যান্য, আবু সাঈদ খান, প্রচ্ছদ আনিসুজ্জামান সোহেল, পাঠক সমাবেশ, পৃষ্ঠা-১৪৬, মূল্য ৩৫০ টাকা।
হামিম কামাল: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল আম দ র র জন ত র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।
প্রশিক্ষণের বিষয়১. বেসিক কম্পিউটার,
২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,
৩. ইন্টারনেট,
৪. গ্রাফিক ডিজাইন,
৫. ফ্রিল্যান্সিং,
৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।
আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,
২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,
৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,
৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,
৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে১. ঢাকা,
২. চট্টগ্রাম,
৩. রাজশাহী,
৪. খুলনা,
৫. বরিশাল,
৬. সিলেট,
৭. দিনাজপুর,
৮. গোপালগঞ্জ।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,
২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,
৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,
৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,
৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।
নিবন্ধন ফিমনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।
দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে