রাজধানীর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার শেষ হয়নি ১৬ বছরেও। কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা আশা প্রকাশ করছেন, সাক্ষী হাজির করে দ্রুত মামলার বিচার শেষ করা হবে।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, এটা মিথ্যা মামলা। প্রকৃত আসামিরা আইনের আওতায় আসেনি। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগের তীর শেখ হাসিনার দিকেই।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশ হারায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় এবং ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি হয়। তবে এ ঘটনার বিস্ফোরক আইনে করা মামলা এখনো বিচারাধীন। 

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তারিখ ধার্য ছিলো। ওইদিন একজন সাক্ষ্য দেন। আগামি ১৩ মার্চ মামলা পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। ওইদিন ৪৬২ জনের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হবে। গত ১৯ জানুয়ারি ১৭৮ জন জামিন পান। সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছেন তারা।

এ সম্পর্কে বিডিআর মামলার প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আলহাজ বোরহান উদ্দিন জানান, বিডিআর বিদ্রোহের বিস্ফোরক আইনের মামলায় এ পর্যন্ত ১৭৮ জন বিডিআর সদস্যের জামিন হয়েছে। আরও ৪৬২ জনের জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তাদের জামিন বিষয়ে শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৩ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে।

তিনি বলেন, “এ মামলার চার্জশিটে ১১৪৫ জন সাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে ২৮৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন, আগামী তারিখে আরও সাক্ষী সাক্ষ্য দিবেন। আমররা নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”

আরেক প্রসিকিউটর আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শেখ হাসিনা এদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে স্বৈরাচারের বীজ নিহিত করে। স্বৈরাচার, স্বৈরশাসন এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরদের হত্যা করেছিলো। দেশের চৌকষ সেনা কর্মকর্তাদের এক জায়গায় করে হত্যা করে। এর ভেতরে স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদের বীজ নিহিত ছিলো।”

তিনি বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য কমিশন গঠন হয়েছে। পুনরায় এ মামলা তদন্তে গেলে হিজিবিজি লেগে যাবে। আমরা চাইবো সম্পূরক চার্জশিট দেওয়ার। সম্পূরক চার্জশিট দিলে যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করা যাবে। গত ১৬ বছর ধরে মামলার বিচার বিলম্বিত হয়েছে। আমরা আশা করছি, বিচার আর বিলম্বিত হবে না। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত চালিয়ে যাবো।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, “এটা একটা মিথ্যা মামলা। ঘটনায় কিছু মানুষ মারা গেছে এটা তো সত্য। তবে প্রকৃত আসামি ধরা পড়েনি। ভিকটিমদের পরিবারও বলেছে ন্যায়বিচার হয়নি। কারণ প্রকৃত আসামিরা বিচারের আওতায় আসেনি। যারা মামলার আসামি তারা ঘটনার সাথে জড়িত না। কাজেই আশা করছি, তারা ন্যায়বিচারে খালাস পাবেন।”

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দাবি-দাওয়ার নামে পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) কিছু উচ্ছৃঙ্খল জওয়ান বিদ্রোহ শুরু করে। এ সময় তাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।

পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিডিআরের নাম, লোগো ও পতাকা পরিবর্তন করা হয়। এ বাহিনীর নাম পাল্টে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। পরিবর্তন করা হয় বাহিনীর আইন।

এদিকে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে প্রথমে চকবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়।

২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় চার্জগঠন করে বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। হত্যা মামলায় চার বছর ৮ মাসে ২৩২টি কার্যদিবস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা হয়।

রায়ে ঢাকার নিম্ন আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময় কারাগারে থাকা দুজন মারা যান। খালাস পান ১২ আসামি।

এজলাস কক্ষে আগুন : ৮ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৯ জানুয়ারি ছিলো মামলার ধার্য তারিখ। তবে নানা নাটকীয়তার পর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিচারকাজ চলবে মর্মে জানানো হয়। এদিকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবিতে ৮ জানুয়ারি রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে ৯ জানুয়ারি ভোরে এজলাস কক্ষ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

আলিয়া মাদ্রাসার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, ভোরে বহিরাগতরা এসে আদালতের এজলাস কক্ষে আগুন দিয়েছে। তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ কারণে ওইদিন মামলার বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ১২ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচারকাজ চলবে মর্মে রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে মামলার বিচারকাজ।

পিলখানার হত্যাকাণ্ডের মৃত্যু, হাসিনাদের বিরুদ্ধে মামলা :  পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় মামলার আসামি বিডিআরের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.

আব্দুর রহিমের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের নামে হত্যা মামলা করা হয়েছে। ২৫ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ মামলার আবেদন করেন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।

মামলায় ঘটনাকালীন বিজিবি মহাপরিচালক ও সাবেক সেনাপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ আহমেদ, সাবেক কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, নুর আলম চৌধুরী লিটন, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, পিলখানা বিদ্রোহ মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল, ২০১০ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জেল সুপার এবং চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করা হয়।

ঢাকা/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন র ম ব ড আর

এছাড়াও পড়ুন:

বাগেরহাটে ৪ আসন বহালের দাবিতে হাইকোর্টে রিট 

বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন করার নির্বাচন কমিশনের গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

মানিকগঞ্জে কৃষিজমির মাটি কাটার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা ছাত্রলীগ নেতার রিট বাতিল 

বাগেরহাট প্রেস ক্লাব ও অন্যান্যদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন রিট পিটিশন দাখিল করেন। এছাড়া চিতলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাগেরহাট ১ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুজিবর রহমান শামীমের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আক্তার রসুল একই বিষয়ে পৃথক রিট পিটিশন করেন।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “আমরা রিট পিটিশন করেছি। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন এবং ১০ দিনের রুল জারি করেছেন। আশা করি, আদালতে ন্যায়বিচার পাব এবং বাগেরহাটের চারটি আসন বহাল থাকবে।”

গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকে বাগেরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহালের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও অংশ নেয় তারা।

তবে ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে।

চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী বাগেরহাট-১ (সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা) ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) নির্ধারণ করা হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) এবং বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

ঢাকা/শহিদুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আইনজীবী সোমার মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
  • যে ১০ কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বেশি ঝগড়া হয়
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • বাগেরহাটে ৪ আসন বহালের দাবিতে হাইকোর্টে রিট 
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট
  • বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড