জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে কারও দরদ নেই, বললেন শহীদ পরিবারের সদস্য
Published: 25th, February 2025 GMT
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ধীরগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। একজন সদস্য বলেছেন, বিচার নিয়ে কারও দরদ নেই।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথা বলেন।
এতে কয়েকজন শহীদ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন শহীদ সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার বলেন, ‘কেউ নতুন দলের জন্য হাহাকার করছে, কেউ দ্রুত নির্বাচনের জন্য বাড়াবাড়ি করছে, কিন্তু বিচার নিয়ে কারও দরদ নেই। আমাদের নিয়ে আসলে কী কেউ ভাবছে? ওদের (শহীদদের) স্মৃতি নিয়েই প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকতে হয়। মানসিক শান্তি দিতে চাইলে বিচার করেন।’
নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়ে শিল্পী আক্তার বলেন, ‘আরেকটা সন্তান নিয়ে আমাকে তো বাঁচতে হবে। এলাকায় থাকতে পারি না। ইতিমধ্যে দু–তিনবার বাসা পরিবর্তন করেছি। ছোট দোকান ছিল, সেটাও চালু করতে পারছি না। জীবন নিয়ে হুমকির মধ্যে আছি।’
যাঁদের জন্য এই স্বাধীনতা, তাঁরা গত সাত মাসে বিচার পেয়েছে কি না, প্রশ্ন তুলে শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের সামনে বিচারের মুলা ঝোলানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, মানবাধিকারসহ সব নিয়ম ভঙ্গ করে পুলিশ পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। কয়জন অপরাধে যুক্ত পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন, ‘হেলমেট বাহিনীর’ কয়জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তিনি জানতে চান, বিচারের রঙ্গমঞ্চে কি অপরাধীদের মূর্তির ফাঁসি দেওয়া হবে?
শহীদ আলভীর বাবা মো.
সরকারের কাছে পরিপূর্ণ বিচারের অনুরোধ জানিয়ে শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা মো. গোলাম রহমান বলেন, ‘আপনারা বিচার করতে না পারলে বা পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে দিলে আপনাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। তাই কোনো ছাড় দেবেন না।’
শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ রকম আন্দোলন যেন আর না করতে হয়। তিনি আশা করেন, লেখক ও সাহিত্যিকেরা কলম ও সাংবাদিকতার দ্বারা শহীদদের পক্ষে এবং প্রকৃত বিচারের কথা তুলে ধরবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান।
এ বছর কবিতায় কবি মতিন বৈরাগী ও শিশু সাহিত্যে কবি হাসান হাফিজকে ‘ফয়েজ আহমেদ পুরস্কার’ এবং কবি জুলফিকার হোসেন তারাকে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা পুরস্কার’ দেওয়া হয়। তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পুরস্কার পেয়ে কবি মতিন বৈরাগী বলেন, ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ এত বছর পর পুনর্গঠিত হয়ে আমাদের সম্মানিত করেছে, এটা আমাকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করেছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘শহীদ পরিবারের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া আমাদের সৌভাগ্য। আমাদের প্রাথমিক বিজয় হলেও সামনে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলোকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।